তাহিরপুরে শিক্ষকের উপর হামলাকারী সেই তোফাজ্জল কারাগারে
- সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
- ০৪ জুলাই ২০১৯, ১৯:৩৭
নকলে বাঁধা দেয়ায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষককে পেটানো মামলার প্রধান আসামী তোফাজ্জল হোসেনকে অবশেষে কারগারে যেতে হলো। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তোপের মুখে এলাকা ছেড়ে চারদিন পালিয়ে থাকারপর মামলায় আদালতে জামিন নিতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
সুনামগঞ্জ আমলগ্রহকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষেট্রট আদালত (তাহিরপুর জোন)’র বিজ্ঞ বিচারক শুভদ্বীপ পাল তার জামিন মঞ্জুর না করে জেলা কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালানাকারী সিনিয়র আইনজীবী মতিউর রহমান পীর তাকে কারাগারে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তোফজ্জল উপজেলার বাদাঘাট (উওর) ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তাহিরপুর থানায় গত সোমবার আহত শিক্ষকের দায়েরকৃত মামলায় বাপ বেটা তাহের-তোফাজ্জল আট জনকে আসামী করা হয়। একই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে বাপ-বেটার সহযোগী ১০ থেকে ১৫ জনকে।
তাহিরপুরের বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সুত্রে জানা যায়, গত রোববার সকালে বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে নকলে বাঁধা দেন বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষক। তারপর ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীকে হলে উত্যক্ত করছিল। এসময় বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন ওই শিক্ষক।
এদিকে ওই শিক্ষার্থী পরিবারের কাছে তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা জানানোর পর শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় পরিচালানা কমিটির সদস্য আবু তাহের অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের সামনে ওই শিক্ষককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন ও চাকুরিচুত্য করার হুমকি দেন।
এদিকে ঘটনাটি তাহেরের ছেলে তোফাজ্জলের কানে এলে তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে ফের বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষক মাজেদুল ইসলামকে মারধর করে পরীক্ষায় অংশ নেয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা টেনে ছিড়ে ফেলেন। ঘটনাটি দেখে প্রধান শিক্ষক দৌড়ে এসে তোফাজ্জলকে বাঁধা দিলে তোফাজ্জল প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানুকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং এক পর্যায়ে গুলি করে হত্যার হুমকিও প্রদান করেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তোফাজ্জল তার সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার পরপরই আহত সহকারি শিক্ষককে রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পরদিন থানায় তাহের- তোফাজ্জলসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আহত শিক্ষক থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনার জের ধরে রোববার ,সোমবার, মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও একদিনের পরীক্ষা স্থগিতের পর ফের টানা চতুর্থদিনের মত বুধবার দুপুরে বিদ্যালয় চত্বরে মানববন্ধন সমাবেশ থেকে বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক সম্মিলিতভাবে তাহের সহ পলাতক থাকা বাপ-বেটা তাহের তোফাজ্জলের অন্য সহযোগীদের দ্রতগ্রেফতার এবং তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আফজালুল হক শিপলু অভিযোগ করেন, অতীতে আরও একাধিক শিক্ষক তোফাজ্জল গংদের হাতে বিদ্যালয়েই লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তিনি নিজেও একজন ভুক্তোভোগী বলে জানান। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তোফাজ্জল গংদের ইভটিজিংয়ের মুখে বিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রীকে তার পরিবার অন্যত্র বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হন। গত ৫ থেকে ৬ বছরে বিদ্যালয়ের শতশত ছাত্র শারীরিক নির্যাতন, হুমকি এবং অসখ্য ছাত্রী হেনস্তা, মোবাইল ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানু ও সহকারি শিক্ষক মুক্তার হোসেন বলেন, তোফাজ্জল বিগত দিনে বাজার থেকে রহমত আলী ওরফে রমু নামের ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে বাড়িতে গাছে বেঁধে মারধর করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা.আবদুস ছালামকে সে বাদাঘাট বাজারের হাসপাতাল রোডে চেম্বারে ডুকে তার লোকজন নিয়ে মারধর করে।
জানা যায় সিলেটের আদালতে এক কিশোরী অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা, সুনামগঞ্জ আদালতে ব্যবসায়ী অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় বিচারাধীন দুটি মামলার আসামি এই তোফাজ্জল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা