২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রিজ মেরামত না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলবে কুলাউড়া পর্যন্ত : রেল সচিব

-

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের কুলাউড়ার বরমচাল রেলস্টেশনের অদূরে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে খাদে পড়ে এবং আরো চারটি বগি লাইনচ্যুতের ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

রোববার রাত পৌনে ১২টায় ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হলে এলাকায় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যে যেভাবে পারেন করেন উদ্ধার কাজ। এলাকাবাসীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পুলিশ, বিজিবি, রেলওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান। ভোররাত পর্যন্ত তিন নারী ও এক পুরুষসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৮ জন যাত্রীর চিকিৎসা দেয়া হয় এবং সিলেট ওসমানী মেডিকেল ও মৌলভীবাজার সদর হাসাপাতালে আরো ৩৫ জনকে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জন ডা: শাহজাহান কবীর জানিয়েছেন।

এদিকে, আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলওয়ে সচিব মোফাজ্জল হোসেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাবিকদেরকে ব্রিফ করেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, কি কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে তার কারণ উদঘাটনের জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের চীফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল, চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান, সিএসটি মাইনুল ইসলাম, সিওপিএস সুজিত কুমার। তদন্ত কমিটি ঘটনার তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, যেহেতেু রেল ব্রিজটি ভেঙ্গে গেছে ও লাইন ব্যাপক নষ্ট হয়েছে, সেহেতু বগি উদ্ধারের পর লাইন ও সেতু মেরামতে কমপক্ষে পাঁচ/ছয় দিন সময় লাগতে পারে। আর সারাদেশের সাথে বর্তমানে যে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে তা বিকেল পর্যন্ত চালু হতে পারে। তবে সেটা কুলাউড়া পর্যন্ত। চট্টগ্রাম ও ঢাকার ট্রেনগুলো কুলাউড়া পর্যন্ত আপাতত চলাচল করবে। ব্রিজ ও লাইন মেরামত শেষে আশা করা হচ্ছে পাঁচ/ছয় দিনের মধ্যে সিলেটের সাথে সারা দেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহতের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে কথা হয় এলাকার রফিকুল ইসলাম, সুন্দ মিয়া ও আলাউদ্দিন আহমদসহ বেশ কয়েকজনের সাথে। তারা জানান, ট্রেনটি সাধারণ গতির চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে চলছিল। দ্রুতগতিতে ট্রেন চলার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে তাদের অভিমত। তাছাড়া ১৭টি বগি নিয়ে ট্রেনটি চলছিল।

বরমচাল স্টেশনের সহকারী মাস্টার জানান, ট্রেনটি বরমচাল স্টেশন অতিবাহিত হওয়ার দুই-তিন মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রথমে ট্রেনের একেবারের পিছনের বগি লাইনচ্যুত হয় এবং এর পরপরই পিছনের তিনটি বগি উল্টে একটি পড়ে ব্রিজ ভেঙ্গে নদীতে এবং দুটি উল্টে পড়ে লাইনের পাশে। অপর তিনিটি বগি লাইনচ্যুত হলেও লাইনের উপরেই ছিল।

এলাকাবাসীর মতে, নদীতে পানি কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে। তবে আহতদের অনেকের অবস্থা খুবই খারাপ বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

এদিকে আজ সোমবার ভোরে কুলাউড়া থেকে রিলিফ ট্রেন গিয়ে চারটি বগি উদ্ধার করে কুলাউড়া জংশনে নিয়ে এসেছে। বাকি তিনটি উল্টে যাওয়া বগি আখাউড়া থেকে হাইড্রোলিক উদ্ধারকারী ট্রেন এসে উদ্ধার করবে বলে নিশ্চিত করেছেন কুলাউড়া জংশনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান।

অপরদিকে দুর্ঘটনাকবলিত উপবন ট্রেনটি কুলাউড়া স্টেশন থেকে সাতটি বগি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল ছয়টার দিকে।

আজ সোমবার সকালে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসাপাতালে দুজন নারী ও একজন পুরুষের লাশ রাখা হয়েছে এবং অপর এক নারী কুলাউড়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালিকের ছোট ভাই আব্দুল বারিকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের লাশ হাতপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সকাল ১১টা পর্যন্ত কুলাউড়া হাসপাতালে থাকা তিনজনের পরিচয় সনাক্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

ট্রেনের যাত্রী জৈন্তাপুর ইমরান আহমদ ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহেদ আহমদ জানান, কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশন সংলগ্ন একটি ব্রিজে হঠাৎ ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুৎ হয় এবং তিনটি বগি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এবং লাইনচ্যুত বগির যাত্রী ছাড়াও মারাত্মক ঝাঁকুনিতে অন্তত শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে কুলাউড়ার ইতিহাসে ভরাবহ এই ট্রেন দূর্ঘটনার ফলে সারা দেশের সাথে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মারাতœক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে লোকজনকে। গত এক সপ্তাহ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্রিজ ভেঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর এখন সিলেটের সাথে ট্রেন চলাচল বিঘিœত হওয়ায় বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল আহমদ, পুলিশ সুপার মো: শাহজালাল, জেলা সিভিল সার্জন ডা: শাহজাহান কবীর চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফি আহমদ সলমান, ইউএনও মোহাম্মদ আবুল লাইছসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার কাজ তদারকি এবং হাসাপাতালে পাঠানো এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। একপর্যায়ে রাতেই জেলা প্রশাসক তোফায়েল আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফি আহমদ সলমান, পৌর মেয়র আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুছ, কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ নুরুল হক জরুরী বিভাগে উপস্থিত হয়ে আহত যাত্রীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করেন এবং মারাত্মক আহতদের মৌলভীবাজার এবং সিলেটের হাসাপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement