২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আঁধার ঘরে আলোর ঝিলিক

মায়ের সাথে ফাতেমা আক্তার ইমা - ছবি : নয়া দিগন্ত

মায়ের মুখে হাসি ফুটালো বাবার উপেক্ষিতা এক কন্যা। লোভের হাতছানিতে ১১ মাসের শিশু ও তার মাকে ফেলে দিয়ে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র। মায়ের সামনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। মেয়েকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সব প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে যান তিনি। এবার তার ফল এসেছে। হাসি ফুটেছে সেই সংগ্রামী মায়ের মুখে। 
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার রাজনগর আইডিয়েল হাইস্কুলের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার ইমা এ বারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। ছোট বেলা থেকে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত ইমা অযতেœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে মায়ের কোলে। 

উপজেলার গবিন্দবাটি গ্রামে ইমাদের বাড়ি। ইমার মা সেলিনা বেগম জীবন-জীবিকা ও এক মাত্র কন্যা ইমাকে মানুষ করে গড়ে তোলার একটি সেলাই মেশিন নিয়ে নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। ভাইদের সাহায্য আর এলাকার মানুষের টুকটাক কাপড় সেলাই করে সংসার চালান তিনি। ইমাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। ভুলে যান নিজের জীবনের সাধ-আহ্লাদের কথা। শিক্ষিত মানুষ করে গড়ে তোলার প্রথম পর্যায়ে ইমাকে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। ইমা পিএসসিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। এরপর ইমা ভর্তি হয় রাজনগর আইডিয়েল হাইস্কুলে। তার দরিদ্রতার কথা চিন্তা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন ও টিউশন ফি মাফ করে দেন। তার মা ও স্কুলের শিক্ষক এবং প্রাইভেট শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ইমা পড়ালেখায় মনযোগী হয়ে ওঠে। 

সরেজমিন ইমার বাড়িতে গেলে তার মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘গবিন্দবাটি গ্রামে তার নানী নিঃসন্তান সায়রা বেগম তাকে চার বছর বয়সে লালন-পালনের জন্য বাবার বাড়ি একই উপজেলার মোকামবাজার থেকে এখানে নিয়ে আসেন। নানী মৃত্যুর আগে তার অংশের জমিজমা আমার নামে রেজিস্ট্রি করে মালিকানা হস্তান্তর করেন। আমার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নানার বংশধর ওই বাড়ির মোবারক মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়ার সাথে আমার বিয়ে দেন। জমিজমার লোভে সে আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পরে আমার কোল জোরে আসে ইমা। কিন্তু জয়নাল তার বোনদের চক্রান্তে ১১ মাসের ইমাকে ফেলে রেখে বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। আমার সামনে অন্ধকার নেমে আসে। তবে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন যৌবন সব ভুলে যাই। তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি। আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে একটি সেলাই মেশিন নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়ি। ইমার চাহিদামতো আমি কিছুই দিতে পারিনি। এখন সে কলেজে পড়বে। আমি তার খরচ জোগাতে অক্ষম। যদি কোনো সুহৃদ এগিয়ে আসেন, তবে ইমার পড়ালেখা চলমান থাকবে।’ 

সেলিনা আপসোস করে বলেন, ইমা যেন ‘আমার আঁধার ঘরে আলোর ঝিলিক’। ইমা জানায়, আমার জন্মদাতা এমন একজন মানুষ, পরীক্ষায় যাওয়ার পথে তার কাছে দোয়া চাইতে গেলে তিনি আমাকে অবজ্ঞা করে এড়িয়ে যান। আমি প্রতিদিন মাত্র ১০ টাকা নিয়ে স্কুলে যেতাম। এর মধ্যে টিফিন যাতায়াত সবই সীমাবদ্ধ ছিল। ইমা আরো জানায়, আমি এমন এক পিতার সন্তান যে পিতা আমার এমন খুশির খবর পেয়ে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি বরং বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমার এ সফলতার পেছনে প্রথমে আমার মায়ের চেষ্টা, স্কুলের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষক কুতুব স্যারের অনেক অবদান রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement