১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চাচাতো ভাইয়ের সাথে স্ত্রীর পরকিয়ায় বাধা : স্বামীকে গলাকেটে হত্যা

-

পরকিয়া প্রেমের জেরে নিজের স্বামীকে গলাকেটে নির্মমভাবে হত্যা করেছে স্ত্রী ও তার পরকিয়া প্রেমিক। পুলিশ স্ত্রীকে আটকের পর তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পরে এই হত্যার রহস্য বের হয়ে আসে। পরে বুধবার ভোরে সেফটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে স্বামী ফারুক আহমদ (৩০) এর লাশ উদ্ধার করা হয়। গত রোববার দিবাগত রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত ফারুক আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে প্রবাসী হিসেবে ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, ৪ সন্তানের জননী হোসনা বেগম (২৮) এর সাথে তার স্বামীর চাচাতো ভাই প্রতিবেশি মোস্তফা (২৭) এর পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রীর পরকিয়ায় বাধা দেন স্বামী ফারুক আহমদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী হোসনা ও তার পরকিয়া প্রেমিক মিলে ফারুককে খুন করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার গভীর রাতে ফারুক আহমদ তার নিজ বসতঘরে ঘুমিয়ে পড়লে স্ত্রী হোসনা বেগম, প্রেমিক মোস্তফা ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় গলাকেটে হত্যা করে ফারুককে। হত্যা করার পর তার রক্তাক্ত লাশ পার্শ্ববর্তী গোরকপুর গ্রামের প্রবাসী মাসুক আহমদের সেফটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেয়।

এই ঘটনার পর স্বামী ফারুক আহমদের কোনো সন্ধান না পেয়ে তার স্বজনরা স্ত্রী হোসনা বেগমকে ফারুক কোথায় রয়েছে জানতে চাইলে, সে বলে- গত রোববার ভোরে উঠে তিনি কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি।

এদিকে ফারুককে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ফারুক আহমদের চাচা সমছুল হক কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করতে যান। এ সময় থানার ওসি মোঃ আব্দুল আহাদ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিক ফারুক আহমদের বাড়িতে পুলিশ পাঠান।

পরে কানাইঘাট থানার থানার এসআই সুরঞ্জিত ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারুক আহমদের ঘরে ঢুকে তার বিছানা ও খাঁটের ওপর রক্তের দাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখেন। ঘরের মেঝেতেও রক্তের দাগ ও পায়ের চিহ্ন পেয়ে তিনি ফারুকের স্ত্রী হোসনা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

এরপর হোসনার জবানবন্দীর প্রেক্ষিতে থানার ওসি আব্দুল আহাদসহ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স বুধবার ভোরে সেফটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে নিহত ফারুক আহমদের লাশ উদ্ধার করেন।

এ বিষয়ে ওসি আব্দুল আহাদ জানান, ফারুক আহমদকে তার স্ত্রী হোসনা বেগম ও তার পরকিয়া প্রেমিক মোস্তফা মিলে গলাকেটে হত্যা করে। স্ত্রী হোসনা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত পরকিয়া প্রেমিক মোস্তফাসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান চলছে। স্ত্রীর পরকিয়ায় বাধা দেয়ায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই গ্রামের নছির আলী আক্কার ছেলে মোস্তফা আহমদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল ফারুক আহমদের স্ত্রী হোসনা বেগমের। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার সালিশ হলেও তাদের পরকিয়ার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন না হওয়ায় গত দুই মাস আগে ফারুক আহমদ সৌদি আরব থেকে বাড়ি চলে আসেন। পরে মোস্তফা আহমদের সঙ্গে পরকিয়ার সম্পর্ক নিয়ে হোসনা বেগম ও ফারুক আহমদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বেড়েই চলছিল। এরই মধ্যে রোববার থেকে রহস্যজনকভাবে ফারুক আহমদ নিখোঁজ হন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পরকিয়ার কারণে স্ত্রী হোসনা বেগমের সহযোগিতায় রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়ে ফারুককে অজ্ঞান করা হয়। পরে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামী ফারুককে গলাকেটে হত্যার পর লাশ গুমের জন্য গোরকপুর গ্রামের আরেক সৌদি প্রবাসী মাসুক আহমদের বাড়ির ট্যাংকের ভেতরে ফেলে রাখা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement