সেই নাঈম পাচ্ছে ৫ হাজার ডলার
- বিয়ানীবাজার (সিলেট) সংবাদদাতা
- ৩০ মার্চ ২০১৯, ০৬:১৪, আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯, ১২:৩৮
মানবিক কাজের জন্য পুরস্কার পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সেই আলোচিত শিশু নাঈম। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীতে বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারের সময়ে পানির পাইপের লিকেজে পলিথিন পেঁচিয়ে ধরেছিল শিশু নাঈম। এই দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ফেসবুকের নিউজফিডে ঘুরেফিরে এই ছবি আসে। পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া নাঈমের এই কাজের জন্য দেশ-বিদেশে সে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তার মানবিক কাজের জন্য খুশি হয়ে তাকে উপহারস্বরূপ পাঁচ হাজার ডলার প্রদানের ঘোষণা দিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের যুবক ওমর ফারুক সামি। পাশাপাশি নাঈমের পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়ার কথা জানালেন। ওমর ফারুক সামি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
প্রবাসী ওমর ফারুক সামি জানান, আমি নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছি। নাঈম খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। সে আমাকে জানিয়েছে পুলিশ অফিসার হতে চায়। তার ইচ্ছা পূরণ করতে আজ থেকে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে তার উপহারের পাঁচ হাজার ডলারও প্রদান করব। এই বিষয়ে নাঈমের পরিবারের সাথে ইতোমধ্যে আলাপ হয়েছে বলেও জানান এই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
শিশু নাঈম ইসলাম রাজধানী ঢাকার কড়াইল বস্তি এলাকার বৌ বাজারের রুহুল আমীনের ছেলে। সে আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
আমি আর বাঁচব না আমার জন্য দোয়া করিও বাবা
নীলফামারী সংবাদদাতা
‘বাবা আমি আর বাঁচব না, আমার জন্য দোয়া করিও, তোমার নিজের ও ভাইদের প্রতি খেয়াল রাখিও।’ তার পরই বন্ধ হয়ে যায় রুমকীর ফোনটি।
বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় বাবা আশরাফ আলীকে ফোন করে এ কথা বলছিলেন নীলফামারীর রুমকী আক্তার।
ওই দিন দুপুরে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় মারা যান রুমকী আক্তার ও তার স্বামী মাকসুদুর রহমান জেমী।
রুমকী নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের চেংমারী বিন্যাকুড়ি গ্রামের আশরাফ আলীর মেয়ে। তার স্বামী মাকসুদুর রহমান জেমী রাজধানী ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকার মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে।
ছয় বছর থেকে হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করছিলেন রুমকী ও মাকসুদ। চাকরির সুবাদেই তিন বছর আগে উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন রুমকী ও মাকসুদুর রহমান জেমী। রুমকী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বড় চাচা জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী। হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রুমকী আক্তার ওই প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে এবং মাকসুদুর ট্যুর প্যাকেজ বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের চেংমারী বিন্যাকুড়ি গ্রামে রুমকীর বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনের উঠোনে শোকাহত শত শত মানুষ বসে রয়েছেন। আর বাড়ির ভেতরে চলছে স্বজনদের আহাজারি। দুপুর সোয়া ১২টায় একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে রুমকীর লাশ তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছলে শুরু হয় স্বজনদের আহাজারি। পরিবারের সদস্যদের সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকার হাজারো মানুষ।
এ সময় কথা হয় রুমকীর বাবা আশরাফ আলী সাথে। তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে আমার মোবাইলে কল দেয় মেয়ে রুমকী। রুমকী জানায়, ‘তার অফিসে আগুন লেগেছে। গোটা অফিসে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বাবা জানি না বাঁচব কি না, দোয়া করিও, তোমার জামাতাকে পাচ্ছি না, জানি না তোমাদের সাথে আমাদের দেখা হবে কি না? বাবা তুমি নিজের প্রতি এবং ভাইয়াদের প্রতি খেয়াল রাখিও।’ এমনভাবে ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত আমার সাথে কথা হয় মেয়ের। এর পর থেকেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মেয়ে ও তার স্বামীর কোনো খোঁজখবর না পাওয়ায় বিকেলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে রুমকীর এক দেবর (খালা শাশুড়ির ছেলে) ইমতিয়াজ আহমেদ ফোন করে জানায়, ‘রুমকী ও তার স্বামী মাকসুদুর মারা গেছে।’ রুমকীর লাশ ঢাকা মেডিক্যালে আর মাকসুদুরের লাশ ইউনাইটেড হাসপাতালে রয়েছে। খবর পেয়ে প্রথমে মেয়ের লাশ ও পরে জামাতার লাশ শনাক্ত করি।’
রুমকীর বড় ভাই রফিকুল ইসলাম রিকো জানান, ‘আমার দুই ভাই ও এক বোন। রুমকী আমাদের ছোট। বিন্যাকুড়ি এসসি সরকার উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি, জলঢাকা রাবেয়া মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি, কারমাইকেল কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে অনার্স ও ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে। পড়ালেখা শেষে দীর্ঘ ছয় বছর ঢাকায় হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস ট্রাভেল এজেন্সিতে হিসাব বিভাগে কাজ করছে। তিন বছর আগে তার বিয়ে হয় মাকসুদুর রহমান জেমীর সাথে। জেমীও ওই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করে। ঢাকাতেই তারা থাকত।’
রুমকীর মেজো ভাই রওশন আলী রনি জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের সময় আমার বাবার ফোনে কল দেয় রুমকী। ছোট বোন রুমকীর ফোন পেয়ে বিকেলেই বিমানে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন বাবা। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রুমকীর এক দেবর আমাকে ফোন করে জানায়, ছোট বোন রুমকী ও তার স্বামী জেমী আর বেঁচে নেই।’
তিনি আরো জানান, ‘ছোট বোন রুমকী গত ১৫ মার্চ ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। তিন দিন বাড়িতে থেকে ১৮ মার্চ ঢাকায় চলে যায়। ঢাকা যাওয়ার সময় সে বলেছিল; ভাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসব, একসাথে সব ভাইবোন ঈদ করব, দোয়া করিস আমি যেন ভালোভাবে ঢাকায় পৌঁছি। বোনের সেই সাধ আর পূর্ণ হলো না। বোন বাড়িতে এলো ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে।’
রুমকীর চাচাতো ভাই এম শরীফুল ইসলাম জানান, ‘শুক্রবার বাদ জুমা বাড়িসংলগ্ন মাঠে রুমকীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই রুমকীকে দাফন করা হয়। অন্য দিকে একই সময় ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয় রুমকীর স্বামী মাকসুদুর রহমান জেমীকে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা