২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা শিশু, ধর্ষক গ্রেফতার

ধর্ষণ
সুনামগঞ্জে বৃদ্ধের ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে ১৩ বছরের এক শিশু - নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ গ্রামে বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধর্ষণকারীর নাম মো: আব্দুনুর মিয়া (৫৮)। তিনি একই ইউনিয়নের গণিগঞ্জ গ্রামের মৃৃত আরব আলীর পুত্র।

সোমবার সকাল ১১টায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: এখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গণিগঞ্জ গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন।

নির্যাতিত পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘরে স্ত্রী, ৫ ছেলে, ছেলের বউ, ১ মেয়ে, নাতি-নাতনী থাকার পরও লম্পট আব্দুনুর ওই নাবালিকা শিশুটিকে কয়েকবার ধর্ষণ করেন। শিশুটি বর্তমানে সাড়ে নয় মাসের অন্তসত্ত্বা। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম্য সালিশের কয়েকজন মাতব্বরের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুষ্টু বিচার পায়নি শিশুটি।

নয় মাস আগে ঘটনার পরপরই নির্যাতিতা শিশুটির দিনমুজুর বাবা গ্রামের মাতব্বরদের দ্বারস্থ হয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি তাদের অবগত করেন। গ্রামের আটজন সালিশদারের উপস্থিতিতে বৈঠক বসে এবং ধর্ষণকারীদের পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে নিকাহনামার মধ্য দিয়ে বিয়ে করিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।

চারমাস আগে শিশুটির পরিবারকে জোরপূর্বক ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়ার পর বাকি টাকা দিয়ে কাবিননামা করে ধর্ষণকারীর ঘরে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গ্রাম্য সালিশের বিচারকগণ কথা দেয়ার পর কালক্ষেপণ করায় ওই শিশুটি এখন সাড়ে নয় মাসের অন্তসত্ত্বা বলে জানান নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের।

গ্রাম্য সালিশকারীগণ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের নীতিমালা অনুসরণ না করেই কী ভাবে একটি নাবালিকা শিশুকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর জন্য সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন এমন প্রশ্ন সমাজের সচেতন মহলের।

ঘটনার নয় মাস পেরিয়ে গেলেও সালিশদারদের (মাতব্বর) দ্বারস্থ হলে এখন তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে ধর্ষিতার বাবা ও মা সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন। তারা জানান, গণিগঞ্জ গ্রামের (একই ওয়ার্ডের) সালিশে গ্রাম্য মাতব্বর পূর্বহাটি গ্রামের মৃত ধনাই মিয়ার ছেলে আব্দুল মজিদ (৬০), পশ্চিমহাটির মরল বাড়ির লাল মিয়ার ছেলে আব্দুল আওয়াল (৫৫), তালেব আলীর ছেলে মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম (৫২), আব্দুল গফুরের ছেলে খইছা মিয়া মেম্বার, বাজার হাটির রবাই মিয়ার ছেলে কাহার মিয়া, নুরফর মিয়ার ছেলে আনজু মিয়া মিলে গত প্রায় পাঁচ মাস আগে ওই সালিশকারীগণ উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন। এতে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরের ধার্য করে বিয়ের কাবিননামার মাধ্যমে শিশুটিকে ধর্ষণকারী আব্দুনুরের কাছে বিবাহের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু ঘটনার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা সালিশদারদের স্মরণাপন্ন হলে গ্রাম্য বিচারকদের অনীহা, উদাসীনতার কারণেই অবুঝ শিশুটি এখন সন্তানের মা হতে চলেছেন বলে শিশুটির বাবা-মা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগের কথা জানান।

এদিকে আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই এই নাবালিকা শিশুটি একটি সন্তানের মা হতে চলেছেন এমন ভাষ্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের। অন্তসত্ত্বা শিশুটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১৬ মার্চ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: এখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী ধর্ষণকারীকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সবকিছু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement