২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বসন্ত নয়, মাঘেই ফাগুন লেগেছে শিমুল বনে

বসন্ত নয়, মাঘেই ফাগুন লেগেছে শিমুল বনে
বসন্ত নয়, মাঘেই ফাগুন লেগেছে শিমুল বনে - ছবি : নয়া দিগন্ত

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতৃ বৈচিত্রে এখন শীতকাল। বসন্তের ছোঁয়া এখনো লাগেনি প্রকৃতিতে। কিন্তু সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা তীরে সারিবদ্ধভাবে লাগানো শিমুল গাছগুলোয় ফুটে থাকা শিমুলের লাল পাপড়ি দেখে এই শীতেও গাইবে বসন্তের গান ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে।’

শিমুল ফুলের রক্তিম আভা বাতাসে দোল খাচ্ছে যাদুকাটা নদীর তীরে শিমুল বাগানটিতে। হাওর, পাহাড়, নদীর পাশেই এখন নতুন আকর্ষণীয় এই স্থানে লালে লাল শিমুল বাগান। বসন্তে নয় মাঘেই ফাগুন লেগেছে শিমুলের বনে। হাজারো ডালে ফুটে থাকা ফুল মনকে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে শীতেই। যাদুকাটা তীরের শিমুল ফুল এবার বসন্তে বাউল মন রাঙ্গাবে না। হয়তো বসন্তের আগের ঝড়ে পড়বে মুকুল। এমনটাই দেখা গেলো যাদুকাটা তীরে শিমুল বাগানে হাজারো শিমুলের ডালে ডালে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই গাছে গাছে ফুল ফুটতে শুরু করলেও এবার ফুল ফুটেছে মধ্য জানুয়ারী থেকেই। এমনটাই দেখা গেল বাগান ঘুরে।

জানা যায়, ২০০২ সালে শুধু মাত্র বাণিজ্যিক ভাবনা থেকেই তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন তার ইউনিয়নের পাশে উত্তর বড়দল ইউনিয়নে মানিগাঁও প্রামে যাদুকাটা নদীর পশ্চিম পারে ৯৭ বিঘা অনাবাদি ধু ধু বালিয়াড়িতে শিমুল বাগান তৈরী করেন। বাগানটিতে সারিবদ্ধ ভাবে ৩ হাজার শিমুলের চারা রোপন করা হয়। ১৫ বছরের ব্যবধানে বাগানের শিমুল গাছগুলো আজ অনেক বড় হয়েছে। পত্র পল্লবে পেখম মেলছে, গাছে গাছে প্রস্ফুটিত ফুলে লালে লাল হয়ে যায় যাদুকাটা নদীর তীর। আর এ নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন যাদুকাটার নদীর তীরে বাড়ছে পর্যটকদের ভীড় ।

সত্যি অবাক করার মত নয়নও লোভন সৌন্দর্য যা চোখে না দেখলে ঠিক বোঝা যায় না। পাতা ঝড়া দিনের শুরুতে ডালে ডালে ফুটে থাকা লাল ফুল যেমন রাঙ্গিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের মন তেমনি বর্ষায় সারিবদ্ধ শিমুল বাগানের সবুজ পাতার সুনিবিড় ছায়া পর্যটকদের দিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। তাইতো এ বাগান দেখেতে বর্ষায় যেমন লোকজন ভীড় করে তেমনি ফুল ফোটে থাকার দিনগুলোতেও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন যাদুকাটার তীরে ছুটে আসেন শত শত পর্যটক। সেই সাথে আশপাশের গ্রামের দর্শনার্থীরাও ভীড় জমান প্রতিদিন বিকেল বেলা।

বাগানের আশপাশের লোকজন ও বাগানের মালিক প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের ছেলে বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আপ্তাব উদ্দিন জানান, এবারই শীতকালে ফুলের মেলা বসেছে বাগানে। শিমুল বাগান তার প্রয়াত বাবা আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীনকে সারা দেশের মানুষের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

যাদুকাটা নদীর তীরে মানিগাঁও গ্রামে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান। দেশে এত বড় পরিসরে আর কোনো শিমুল বাগান আছে কি-না জানা নেই। তাইতো হাজারো ফুলের মেলা দেখতে বাগানে ছুটে আসেন দুর দুড়ান্ত থেকে সাধারণ দর্শনার্থী ও পর্যটক। তাদের মতে এক সাথে এত গাছ, এত ফুলের দেখা কোথাও মেলেনি। তাই শুধুমাত্র একসাথে এত ফুল দেখতেই পর্যটকরা ভীড় করেন বাগানে।

ট্রাভেল গ্রুপ ‘ভ্রমণ পোকা’ পরিচালক লাভলু ইসলাম জানান, গত বছর মধ্য ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাগান দেখতে আসেন। এবার ফুল আগে ফোটায় ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহেই আাসছেন তারা। তার মতে বাগানে ফুল ফোটার মুহুর্তটা অন্য রকম।

এই বাগানে বেড়াতে আসা স্থানীয় সোহেল আহমেদ সাজু, মাসুদসহ পর্যটক, দর্শনার্থীরা ও স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, এই বাগানটি দেখতে অসাধারন। এত বড় শিমুল বাগান দেশের কোথাও আর দেখেনি। এই বাগানে প্রচুর দর্শানার্থী আসে খুবেই ভাল লাগার মত এলাকা। নদী, পাহাড় আর শিমুল বাগান প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলন মেলা। যার ফলে বাগানের ভিতরটায় গেলে দর্শনার্থী ও পর্যটকগণ এক অন্যরকম ভাল লাগার জন্ম নেয়। হারিয়ে যায় অন্য এক অজানা ভুবনে। এই বাগানটিকে আরো আধুনিক করে সাজালে এটি হবে এই জেলার আলোচিত পর্যটন স্পট।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পাহাড় ঘেরা সৌন্দর্য্য মণ্ডিত পর্যটনের পাশে আরেক নতুন আকর্ষণ তাহিরপুর উপজেলার এই শিমুল বাগানটি দিন দিন সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যার ফলে অনেক দর্শনার্থী ও পর্যটকগণ পূর্বে না আসলেও এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেই আসছে এক পলক দেখার জন্য এ বাগানটি।

যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ দ্বার আব্দুজ জহুর সেতুতে নেমে সিএনজি, বাইক(মোটর সাইকেল) কিংবা যে কোনো গাড়িতে করে তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড় বাজার সেখান থেকে নৌকায় যাদুকাটা নদী পার হলেই শিমুল বাগন। তাছাড়া তাহিরপুর উপজেলা সদর হয়ে মোটর সাইকেলে করেও শিমুল বাগান যাওয়া যায়। অথবা সুনামগঞ্জ আব্দুর জহুর সেতু থেকে বাদাঘাট ইউনিয়ন হয়ে মানিগাঁও শিমুল বাগান।


আরো সংবাদ



premium cement