২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টাংগুয়ার হাওরে শিকার হচ্ছে অতিথি পাখি

টাংগুয়ার হাওরে শিকার হচ্ছে অতিথি পাখি - নয়া দিগন্ত

মাদার ফিসারিজ খ্যাত রামসার সাইট টাংগুয়ার হাওরে প্রতি বছর শীতের শুরু ডিসেম্বরেই ঝাঁকে ঝাকেঁ অতিথির পাখির আগমন হলেও এবার আশানুরূপ অতিথি পাখি না আসায় কলকাকলিতে মুখরিত হয়নি টাংগুয়ার হাওর। এবছর যা পাখি হাওরে এসেছে তা একেবারেই সামান্য।

তারপরও শিকারীরা পাখি শিকার করছে প্রতিদিন। আর এসব কাজে ব্যবহার করছে বিভিন্ন ধরনের কারেন্ট জাল ও ফাঁদ। কিন্তু তারপরও অভিযুক্তরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

প্রতিবছর শীতের শুরুতেই ঝাঁকে ঝাকেঁ অতিথি পাখির আগমন হলেও এবার আশানুরূপ পাখি না আসার কারণ হিসেবে টাংগুয়ার হাওরের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছে হাওর পাড়ের জনগণ ও সচেতন মহল।

এদিকে থাকা, খাওয়া, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরও প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ এবং বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার পর্যটকগন কষ্ট সহ্য করে পাখি দেখতে আসছে মাদার ফিসারীজ খ্যাত তাহিরপুরের টাংগুয়ার হাওরে। কিন্তু পাখির দেখা মিলছে না। ফলে টাংগুয়ার হাওরকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ, টাংগুয়ার হাওরের মাছ, পাখি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ক্ষুব্ধ পর্যটকগণ।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর উপজেলার প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি ভারতের মেঘালয় পাহড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বয়ে গেছে। তুষারপাত ও শৈত্য প্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার তাগিদে প্রতি বছর শীত প্রধান দেশ সূদুর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসব পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে টাংগুয়ার হাওরে।

একটানা ডানা মেলে আকাশের উড়ার ক্লান্তিতে পাখিরা প্রথমে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও প্রচুর খাবার সমৃদ্ধ টাংগুয়ার হাওরে বিচরণ করে তারা যেন সজিবতা ফিরে পায়। পৃথিবীতে প্রায় ১০হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১হাজার ৮শত ৫৫প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টাংগুয়ার হাওরে প্রায় ২১৯প্রজাতির পাখির অবস্থান ছিল। এর মধ্যে ৯৮প্রজাতির পরিযায়ী, ১২১প্রজাতির দেশি ও ২২প্রজাতির হাঁসজাত পাখির বিচরণ করত। আগত পাখির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল- বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, মৌলভীহাঁস, পিয়ারী, কাইম, রামকুড়া, মাথারাঙ্গা, বালিহাঁস, লেঞ্জা, চোখাচোখি, বেগুনি কালেম প্রভৃতি।

এখন এসব পাখি নেই বললেই চলে বলে জানান, পরিবেশবিদ ও টাংগুয়ার হাওর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাগণ।

এর কারন হিসেবে তারা জানান, এক শ্রেণীর অসাধু পাখি শিকারী ও পাখি ব্যবসায়ীদের কারণে দিন দিন এই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এছাড়াও হাওরের নানান প্রজাতির জলাবন, হিজল কড়চ, নলখাগড়া বিলুপ্তি, ইঞ্জিন চালিত মেশিনের শব্দ এবং রাতের আধারে মাছ ধরার জালসহ বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করাও অন্যতম কারণ।

রাষ্ট্রীয়ভাবে অতিথি পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় হলেও এলাকার স্থানীয় কিছু পাখি শিকারী, ব্যবসায়ীরা টাকার বিনিময়ে আনসার বাহিনীদের সহযোগিতা ও টাংগুয়ার হাওরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অতিথি পাখি শিকার করে। যার জন্য পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে স্থানীয় হাওর পাড়ের এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা তাহিরপুর উপজেলার সাদেক আলী, রফিকুল ইসলাম, মেহেদী হাসানসহ আরো অনেকে জানান, বাড়িতে রাতে ঘুমানোর আগে আকাশে পাখিদের উড়ার শো শো শব্দ এখন আর শোনা যায় না। কারণ এবার পাখি কম এসেছে। এই হাওরে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা না হলে বিপন্ন হবে টাংগুয়ার হাওরের স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্য। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকার কারণে পর্যটকদের টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা কমে যাচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, ঐতিহ্যবাহী টাংগুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষা করা ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। না হলে টাংগুয়ার হাওর তার সৌর্ন্দয হারাবে অচিরেই।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। টাংগুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অবাহত আছে এবং কোনো প্রকার অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement