৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫
`

সিলেট-২ আসনে পাল্টে গেছে ভোটের হিসাব

- ছবি : নয়া দিগন্ত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন পেয়ে এখন আলোচনায় গণফোরামের ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীকের প্রার্থী মো. মেকাব্বির খান। ফলে পাল্টে গেছে ভোটের হিসান নিকাশ।

এই আসনে ২০দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। কিন্ত আদালত কর্তৃক লুনার প্রার্থীতা স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। ফলে ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীকের প্রার্থী গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমর্থন দেন জোটের বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরের নেতাকর্মীরা। সমর্থন পাওয়ার পর থেকে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে তাৎক্ষণিক প্রচার মিছিল করে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা।

সিলেট-২ আসন তথা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলায় গণফোরাফের গণভিত্ত্বি না থাকলেও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী তৎপরতা গ্রামের গঞ্জে বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়ে। পাড়া মহল্লায় ‘সূর্য’ প্রতীকের সমর্থনে প্রচার মিছিল ও সভার মাধ্যমে জোটের উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা শেষ মুহুর্তে চালিয়ে যাচ্ছেন বিরামহীন প্রচার প্রচারণা।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা এবং নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর প্রতি এই আসনের মানুষের ভালোবাসা ও আবেগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের ‘উদীমান সূর্য’ প্রতীককে বিজয়ী করার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চায় বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে মনোনয়ন জামা দেন নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও তার পুত্র ইলিয়াস আবরার অর্নব। মনোনয়নপত্র বাচাই শেষে ইলিয়াস পুত্র অর্নব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে ধানের শীষের চুড়ান্ত প্রার্থী হন তাহসিনা রুশদীর লুনা। কিন্ত লুনার বিরুদ্ধে আরপিও অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পর সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার বিধান থাকলেও তাহসিনা রুশদীর লুনা ৬ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘন করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ এনে আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন একই আসনের মহাজোটের প্রার্থী (জাপা) বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। এই অভিযোগের ভিত্তিতে লুনার প্রার্থীতা স্থগিতের নিদের্শ দেন হাইকোর্ট। ফলে প্রচার প্রচারণার একপর্যায়ে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন লুনা। এতে হতাশ হয়ে নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়েন বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্ধের দিন তাহসিনা রুশদীর লুনাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান গনফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। এরপর তিনি চলে যান যুক্তরাজ্যে এবং লুনার মনোনয়নপত্র স্থগিত হওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে আবারও যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে আসেন মোকাব্বির খান এবং ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন পেয়ে গত বুধবার থেকে জোটের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা।

অসুস্থ তাহসিনা রুশদীর লুনার নির্দেশে নিখোঁজ এম ইলিয়াছ আলীর ছোট ভাই এম আছকির আলী ও ইলিয়াস পুত্র অর্নব প্রচারণায় নামেন। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে আবেগময়ী বক্তব্য দেওয়ায় ভোটার সাধারণের মাঝে বিপুল সাড়া সাজে ফলে। বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত। ফলে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের স্থলে ‘উদীয়মান সুর্য’ প্রতীক এখন মূল আলোচনায় চলে এসেছে। বিএনপি নেতাকার্মীরা মনে করছেন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়ন স্থগিত করায় প্রতিশোধ হিসেবে ‘উদীয়মান সূর্য’কে বিজয়ী করতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে তারা মাঠে কাজ করছেন।

মহাজোটের ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল) ও গণফোরামের মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য) ছাড়াও এই আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ মুহিবুর রহমান (ডাব), আওয়ামীলীগ ঘরানার হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার (সিংহ), খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী (দেয়াল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রব মল্লিক (বাস), ইসলামী আন্দোলনের মোঃ আমির উদ্দিন (হাত পাখা), এনপিপির মনোয়ার হোসাইন (আম) ও বিএনএফ এর মোশাহিদ খান (টেলিভিশন)।

তাদের মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন মহাজোটের ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, গণফোরামের মোকাব্বির খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন যাবৎ নির্বাচনী মাঠে থাকায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুনতাছির আলী ডান ঘরনার ভোট পেয়ে তিনিও চলে আসতে পারেন সুবিধাজনক অবস্থানে।

নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন- বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টি নেতা ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়াকে (লাঙ্গল) মহাজোটের প্রার্থী করায় তার উপর ক্ষুব্ধ রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এই আসনে ‘নৌকা’ প্রতীকের কোন প্রার্থী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৫ম বারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মুহিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ ঘরানার হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার।

আর স্বতন্ত্র এই দুই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন মহাজোটের মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়াহইয়া চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্ত মহাজোট প্রার্থী পক্ষে শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মাঠে না নামায় বিপাকে রয়েছেন মহাজোট প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। ফলে মহাজোটর প্রধান দল আওয়ামীলীগের ভোট তিন ভাগে (লাঙ্গল, ডাব ও সিংহ) বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সমর্থিত প্রার্থী গণফোরামের মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য্য)। এমতাবস্থায় বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোট এক বাক্সে পড়লে শেষ পর্যন্ত উদীয়মান সূর্য বিজয়ের হাসি হাসলে বিচিত্র হওয়ার কিছু থাকবে না।

এদিকে, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সমর্থিত প্রার্থীর প্রচারনায় বাঁধা দিচ্ছে পুলিশ। প্রধান নির্বাচনী অফিস ঘেরাও করে রাখে ডিবি পুলিশ। রামপাশাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পথসভায় লাটিচার্জ করে আমাদের নেতাকর্মীকে আহত ও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমরা প্রচার-প্রচারণা করতে পারছি না, গ্রেফতার আতংকে রয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement