২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতির হাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লাঞ্চিত

-

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা স্বেছাসেবক লীগ সভাপতির হাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯ টায় দিরাই থানা রোডের জনতা হোটেলে এই ঘটনাটি ঘটে। লাঞ্চিত হওয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম কুমোদ চন্দ্র দাস (৭০)। তিনি দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চিতলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার।

লাঞ্চিতকারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সভাপতি শাহজাহান সরদার সাকিতপুর গ্রামের মৃত তুফলি মিয়া সরদারের ছেলে। এ ঘটনার খবর পেয়ে দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাগণ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা কর্মীরা বিক্ষোব্ধ হয়ে উঠে। বিক্ষাব্ধ জনতা হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকলে এক পর্যায়ে হোটেলের পাশে একটি দোকানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সভাপতি শাহজাহান সরদার।

এসময় শাহজাহান সরদারের মামাতো ভাই দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া ঘটনাস্থলে এসে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হামলার স্বীকার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, প্রায় মাস খানেক পূর্বে দিরাই বাজার সংলগ্ন শয়তান খালী জলমহাল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সভাপতি শাহজাহান সরদার বিরোধ দেখা দেয়। চানপুর মৎসজীবিদের পক্ষে একটি মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেন শাহজাহান সরদার।

এর প্রতিবাদে দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাগণ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা কর্মীরা বিক্ষোব্ধ হয়ে পাল্টা মানববন্ধন করে শাহজাহান সরদারের বিচার দাবী করে বক্তব্য রাখেন।

লাঞ্চনার শিকার মুক্তিযোদ্ধা কুমোদ চন্দ্র দাস বলেন, পূর্বের একটি মানববন্ধনে শাহজাহান সরদারের বিচার দাবী করে আমি বক্তব্য দিয়ে ছিলাম। এর জের ধরে সে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে সকালে জনতা হোটেলে দিরাই থানার এসআই ইসমাঈল আলীসহ নাস্তা করা অবস্থায় আমাকে দেখা মাত্রই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বলে, কিভাবে তুই মুক্তিযোদ্ধা হলে নির্বাচনের পর আমি দেখবো। আমি এর প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে একপর্যায়ে সে আমাকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় দিরাই থানার এস আই ইসমাঈল আলীসহ কয়েকজন তাকে বারণ করার চেষ্টা করেন।

এব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড নেতা সিরাজুল ইসলাম ও কানাই লাল রায় বলেন, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি, শেষ বয়সে এসে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার মতো ঘটনায় আমরা মর্মাহত । কিছুদিন আগে এই শাহজাহান সরদার আমাদের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে কুচক্রি বলে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা কর্মীরা বিচার দাবী করে ছিলাম।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, ইতোপূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সভাপতি শাহজাহান সরদার জাতির শ্রেষ্ট সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। প্রতিবাদে আমরা বিচার দাবীতে মানববন্ধন করেছি, সে সময় যদি সঠিক বিচার হতো তাহলে আজ আমাদের পিতার বয়সের বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শাহজাহান সরদারের হাতে মার খেতে হতনা।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সাধারন সম্পাদক রাহাত মিয়া রাহাত বলেন, পূর্বের ঘটনায় তার শাস্তি দাবিতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিচার প্রার্থী হয়ে বিচার পাইনি। ফলে আজকে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হয়ে শাহজাহান সরদারের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা মুরাদ মিয়া, শফিক মিয়া, শহিদ সরদার মাহবুব আহমেদ, তাপস দাশসহ উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতৃবৃন্ধ এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা শুনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement