২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সিলেটে একের পর এক গায়েবি মামলা

গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িছাড়া বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা

গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িছাড়া বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা - সংগৃহীত

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষে এলাকায় কাজ করছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু না হলেও ঘরোয়া মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।

সব মিলিয়ে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে সিলেটে।

তবে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদেরকে দেখা গেছে ঠিক এর উল্টো চিত্রে। একের পর এক গায়েবি মামলা, গ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির ফলে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের শত শত নেতাকর্মী এখন বাড়িঘর ছাড়া। জেলার কোথাও না কোথাও প্রতিদিন চলছে ধরপাকড়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সিলেটজুড়ে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দূরে সরিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য এমনটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপি ও জামায়াতের।

ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়রানি বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

জানা গেছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও পূর্বের মতো পুলিশের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকায় বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি চলছে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি।

এ থেকে বাদ যাচ্ছে না ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষও। রাজনীতির সাথে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নয় এমন লোকদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বিএনপি নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, মামলা ছাড়া শুধু সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দেয়া তালিকার ভিত্তিতে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের অহরহ গ্রেফতার করছে। শুধু তাই নয়, সরকার দলীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা পুলিশকে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সিলেট জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়। তারা বলেন, পুলিশের দেয়া বিভিন্ন মামলায় নেতাকর্মীরা জামিন লাভের পরও ফের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়া নিরীহ লোকজনদের ধরেও সাজানো মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

তবে গায়েবি মামলা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা কাজ করছেন।

সর্বশেষ সিলেট নগরীর মিরাবাজার এলাকার বাসা থেকে সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদ, সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ জামাল নূরুল হুদা, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ নাসির উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, গত বুধবার গভীর রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর গ্রামে অসুস্থ এক প্রবীণ সাংবাদিক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়িতে হানা দেয় বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ। রাত প্রায় ২টার সময় পুলিশ অসুস্থ ওই প্রবীণ সাংবাদিকের ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করে এবং তার প্রবাস ফেরত ব্যবসায়ী ছেলে আবুল আহসান মোঃ জাবুরকে কোন মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করে।

পরে থানায় এসআই কামরুল আলম অঅটককৃত জাবুরের পরিবারের সদস্যদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। তা না হলে তাকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

জাবুরের পরিবার দাবিকৃত টাকা দিতে অপারগতা জানালে তাকে পুরনো একটি গায়েবি মামলার আসামী দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।

এদিকে বিয়ানীবাজার থানার এসআই কামরুল আলমের বিরুদ্ধে থানায় যোগদানের পর থেকেই বেপরোয়া ও রাজনৈতিক মনোভাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে এলাকার মানুষ ও ভুক্তভোগীরা।

এসআই কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অতিউৎসাহী হয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মী দমনে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশরি নামে শিশু, বৃদ্ধা, পুরুষ ও মহিলাদের হয়রানিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন লোকদের গ্রেফতার করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন তিনি। চাঁদা না দিলে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।

এমনই অভিযোগ করেছেন বিয়ানীবাজার পৌরসভার শ্রীধরা গ্রামের এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, সম্প্রতি তার বাড়ি থেকে ছেলেকে আটক করে পুলিশ। আটকের কারণ জানতে চাইলে বৃদ্ধার ছেলেকে শিবির নেতা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে বলে জানানো হয়।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই কামরুর আলম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও ওয়ারেন্ট রয়েছে কেবল তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

সম্প্রতি সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান তার নির্বাচনী সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার এবং গায়বী মামলা বন্ধের জন্য জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তার নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার তার নির্বাচনী কর্মী, সমর্থকদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করছে। বাসা বাড়িতে তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে।

মাওলানা হাবিবুর রহমান আরো অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যে তার নির্বাচনী সমর্থক গোলাপগঞ্জের নিজাম উদ্দিন, মনসুর আহমদ, আলতাব হোসাইন, মাওলানা জমির উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার গোলাম মোস্তফা মুসা, মাওলানা হেলাল আহমদ খান, এমদাদুল ইসলাম, সৈয়দ নাসির উদ্দিন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ফয়সল আহমদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা না থাকার পরও পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় আসামী করে।

এছাড়াও তার বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচন পরিচালক মাওলানা মুফাচ্ছির আহমদ ফয়েজী ও মাওলানা জমির হোসাইনকে মামলা না থাকার উপরও আটক করা হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিনা অপরাধে তার সমর্থকদের হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধের জন্য নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

সার্বিক প্রসঙ্গে বিয়ানীবাজার থানার ওসি অবনী শংকর বলেছেন, নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। ওয়ারেন্টের আসামীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, আমার থানার কোন দারোগা যদি এরকম কোন কাজ করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement