২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত

 বাসা-বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে
বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত - ফাইল ছবি

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সিলেটে জামায়াত, শিবির ও বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশী তৎপরতায় জেলার বিভিন্ন স্থানের নেতা-কর্মীরা এখন বাড়িছাড়া। গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া এই অভিযানের কারণে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে।

নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দূরে সরিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য এমনটি করা হচ্ছে বলে বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে সিলেট নগরীর মিরাবাজার এলাকার বাসা থেকে সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওইদিন সন্ধ্যায় নগরীর আম্বরখানা থেকে সিলেট জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ জামাল নূরুল হুদাকেও গ্রেফতার করা হয় ।

সিলেট বিভাগ, মহানগর, জেলা উত্তর ও জেলা দক্ষিণ জামায়াত নেতৃবৃন্দ মাওলানা সোহেল আহমদকে গ্রেফতারে নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনের ময়দান থেকে জামায়াতকে দূরে রাখতেই এই গ্রেফতার ও পুলিশী হয়রানী চালানো হচ্ছে।

গণগ্রেফতার চালানোর অভিযোগ বিএনপি’র
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট জুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার চালানোর অভিযোগ করেছে সিলেট জেলা বিএনপি। এ ব্যাপারে গতকাল রোববার সিলেট জেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল্লাহর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশন অহেতুক গ্রেফতার ও নির্যাতন না করার ঘোষণা দেয়া সত্বেও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং বাসায় বাসায় গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। যা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণার পরিপন্থি। গত শনিবার সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজামাল নূরুল হুদাকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন প্রকার মামলা ছাড়াই আটক করা হয়েছে। তাকে গায়েবী মামলায় জড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে।

গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জামায়াত নেতার
দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার এবং হয়রানী করায় সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান।

অভিযোগত্রে মাওলানা হাবিবুর রহমান উল্লেখ করেন, দুই থানায় দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা আদালতের কোন ওয়ারেন্ট না থাকার পরও তাদের গ্রেফতার ও হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন- এর তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমার নির্বাচনী এলাকার কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ভয়ভীতি, হুমকি-ধামকীসহ বাসা-বাড়িতে তল্লাশীর নামে পরিবারের সদস্যদের হয়রানী ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। যা তফসীল ঘোষণার পর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় অন্তরায়।

তিনি অভিযোগ করেন ইতোমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া ইউনিয়নের নির্বাচনী সমর্থক নিজাম উদ্দিন ও মনসুর আহমদ, ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বরায়া উত্তরভাগ গ্রামের আলতাব হোসাইন ও হেতিমগঞ্জ এলাকার মাওলানা জমির উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার গোলাম মোস্তফা মুসা, লক্ষীপাশা ইউনিয়নের মাওলানা হেলাল আহমদ খান, মীরগঞ্জ ফতেহপুর এলাকার এমদাদুল ইসলাম, বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা বারইগ্রামের ফয়সল আহমদ-এর নামে কোন মামলা-ওয়ারেন্ট না থাকলেও পুলিশ তাদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়েছে।

এছাড়াও বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচন পরিচালক মাওলানা মুফাচ্ছির আহমদ ফয়েজী ও বিয়ানীবাজার পৌরসভার নিদনপুর নিবাসী মাওলানা জমির হোসাইনকে মামলা না থাকা সত্বেও আটক করা হয়েছে। গত ২১ নভেম্বর আমার গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কমিটির পরিচালক গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ঘোগারকুল গ্রামের সৈয়দ নাসির উদ্দিনকেও কোন ধরনের মামলা ব্যতীত তার বাসা থেকে গভীর রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এমতাবস্থায় আমার সংসদীয় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ আতংকিত ও উৎকন্ঠিত এবং একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং গ্রেফতার ও হয়রানী বন্ধের দাবি জানান।

কানাইঘাটে গ্রেফতার আতঙ্ক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী পুনরায় প্রার্থী হচ্ছেন। তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কানাইঘাট থানা পুলিশ নেতা-কর্মী ও সমথর্কদের গ্রেপ্তার করতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাসা-বাড়ীতে অভিযান শুরু করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পুলিশী নির্যাতনের ভয়ে অনেকে বাসা-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। গত ১৭ নভেম্বর পুলিশ শিবির নেতা শাকির আহমদ (২৬), জুলাই দাখিল মাদ্রাসার সুপার, জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত মোহাম্মদ আলী (৪৮) ও ব্যবসায়ী জামায়াত কর্মী আজমল শেখ (৪৮) এবং পরদিন মাদ্রাসা শিক্ষক জামায়াত কর্মী শিব্বির আহমদ (৩৫), ফাযিল পরীক্ষার্থী শিবির কর্মী শাহাজাহান সাহেদ (২৫ ও) জামায়াত কর্মী ছিদ্দিক আহমদ (৬৫) কে গ্রেপ্তার করে।

উপজেলা জামায়াত নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের মামলা নেই। নির্বাচনের তফশীল ঘোষনার পরও পুলিশ প্রতিদিন জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসা বাড়ীতে গিয়ে হয়রানী এমনকি শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করছে।

তাদের অভিযোগ, নির্বাচনী মাঠে আওয়ামীলীগকে একতরফা সুযোগ করে দিতে পুলিশ উদ্দেশ্যেমূলকভাবে ইসির নির্দেশকে উপেক্ষা করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানী ও নির্যাতন করে যাচ্ছে। এব্যাপারে তারা নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement