২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাইফুরপুত্র ও মোহসীন পত্নী’র মধ্যে ভোটযুদ্ধ!

-

মৌলভীবাজার-৩ কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী আর কে আসছেন ধানের শীষ নিয়ে- সর্বত্র এই আলোচনা। দু’একদিনের মধ্যেই সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে কাঙ্ক্ষিত এ নির্বাচনে মৌলভীবাজারে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নিশ্চিত টিকিটের আশায় রাজধানীতে দৌড়ঝাপ করছেন।

ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে প্রধান দুই দল আ’লীগ ও বিএনপিতে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ইতিপূর্বে আ’লীগ সংগঠনকে চাঙ্গা রাখতে জেলা সম্মেলনসহ নতুন জেলা কমিটির মাধ্যমে তৃণমুল পর্যায়ে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছে। নিয়মিত বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিও জেলা কমিটি পুনঃগঠনসহ হারানো এ আসনটি ফিরে পেতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দীর্ঘদিনের নির্জিবভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। যদিও মৌলভীবাজারে জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর মধ্যে এখনো প্রকাশ্যে চলছে গ্রুপিং। এছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের ডজন খানেক নেতা দলীয় মনোনয়নের জন্য শেষ মুহূর্তের লবিং নিয়ে মহাব্যস্থ। দু’একদিনের মধ্যে এর জল্পনা-কল্পনার সমাপ্তি ঘটবে।

জেলার ৪টি আসনের মধ্যে মৌলভীবাজার-৩ আসনটি সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ। বিএনপি জোট সরকারের আমলে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক হুইপ আ’লীগ নেতা আজিজুর রহমান ও মহাজোট সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলীর মধ্যে পৃথক সংসদ নির্বাচনে লড়াই হয়েছে এই আসনে।

২০০১ সালে এই আসন থেকে জিতেছিলেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী এম সাইফুর রহমান। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তাকে হারিয়ে বিজয়ী হন আ’লীগ প্রার্থী সৈয়দ মহসীন আলী। ২০১৪ সালের আ’লীগ নের্তৃত্বাধীন দশম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনে আবারো এই আসনটি পায় আ’লীগ। এমপির পর মন্ত্রীও হন মহসীন আলী।

এখন প্রধান দুই দলের সাবেক দুই মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও সৈয়দ মহসীন আলী জীবিত নেই। মহসীন আলী মারা গেলে উপ-নির্বাচনে ওই আসনে এমপি হন তার স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসীন। এবারো মনোনয়ন চাচ্ছেন তিনি। সৈয়দা সায়রা মহসীন বলেন, আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলীয় মনোনয়নের আশাবাদী। দলীয় প্রধান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেন তবে নির্বাচন করবো।

এছাড়াও দলীয় মনোনয়নের জন্য জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আ’লীগ সভাপতি নেছার আহমদ। প্রায় এক যুগ ধরে এই আসনের আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। একদিকে ছিলো সৈয়দ মহসীন আলী ও অন্যদিকে আজিজুর রহমান-নেছার আহমদ গ্রুপ। সম্প্রতি জেলা কমিটিতে দুই ধারার নেতারা আসায় একসাথে সভা-সেমিনারে তাদের দেখা গেলেও অর্ন্তদ্বন্ধ রয়েই গেছে। আ’লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পত্র যারা গ্রহণ করেছেন তারা হলেন- বর্তমান সাংসদ সৈয়দা সায়রা মহসীন, সাবেক ব্রিটিশ কাউন্সিলর শিল্পপতি এম.এ.রহিম (সি.আই.পি), জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন , জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মালেক তরফদার শোয়েব, আ’লীগ নেতা সাইফুর রহমান বাবুল, প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ছোট ভাই সৈয়দ লিয়াকত আলী ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ।

অপরদিকে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত রয়েছে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানপুত্র ও জেলা বিএনপি সভাপতি এম নাসের রহমানের। প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের উন্নয়নের নজির জেলা জুড়ে এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। এ জেলাসহ সিলেট বিভাগজুড়ে রাস্থা-ঘাট,ব্রীজ,কালবার্ট,বিদ্যু,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সরকারি ভবন তার হাতে তৈরি হয়েছে। পিতার এই গুনে তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমনটাই দেখছেন তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেগম খালেদা রব্বানী।

জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান শুক্রবার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমন আশা ব্যক্ত করেছেন।

এছাড়াও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ শাহাব উদ্দিন আহমদ। সম্প্রতি মৌলভীবাজারে দলটির জেলা কাউন্সিলে কেন্দ্রিয় নেতারা এসে জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতির আহবান জানান।

এছাড়াও আছে ১৪ দলের আরেক শরীক দল জাসদ (ইনু গ্রুপ) এর জেলা সভাপতি মোঃ আব্দুল হক, জাসদ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি আব্দুল মোসাব্বির, খেলাফত মজলিশ থেকে রয়েছেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আহমদ বিলাল, যুব জমিয়ত থেকে রয়েছেন জেলা যুব জমিয়তের সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওঃ শরীফ খালেদ সাইফুল্লাহ।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার-৩ আসন (সদর-রাজনগর উপজেলা) ১টি পৌরসভা, ও দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। সদরে ১২টি ইউনিয়ন ও রাজনগর উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫১১ জন।


আরো সংবাদ



premium cement