২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গোপনে বিয়ে করে সর্বস্ব হারালেন ব্যবসায়ী

কয়েছ মিয়া ও হেপী বেগম - ফাইল ছবি(সংগৃহীত)

প্রেমিকাকে গোপনে বিয়ে করে সর্বস্ব হারিয়েছেন এক ব্যবসায়ী। সিলেটের বিশ্বনাথের এই তরুণ ব্যবসায়ীর নাম কয়েছ মিয়া। আবার জাল তালাকনামা তৈরী করে স্ত্রীকে লন্ডনী বরের সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে কয়েছ মিয়ার দায়ের করা মামলায় হাজতবাস করেছেন কাজী। এঘটনায় উপজেলা জুড়ে চলছে তোলপাড়। অন্যদিকে, স্বামীর কাছে থেকে তালাক এবং মোহরানা ও ভরণ পোষণের টাকা পাওয়ার দাবিতে সুনামগঞ্জ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেছেন কয়েছ মিয়ার স্ত্রী হেপী বেগম।

জানা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাউসি গ্রামের জিলু মিয়ার পুত্র ও বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের আল-হেরা মার্কেটস্থ ‘বিডি আনলকার’ এর সত্ত্বাধিকারী কয়েছ মিয়া (২৫)’র সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের আটঘর গ্রামের ব্রিটেন প্রবাসী আকিক মিয়ার মেয়ে হেপী বেগম (২৩) এর। একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর বিশ্বনাথের কালিগঞ্জ বাজারস্থ দেওকলস ইউনিয়ন মুসলিস নিকাহ্ ও তালাক রেজিষ্ট্রার মো. আছাদ উদ্দিন এর কার্যালয়ে নিকাহনামা রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কয়ে ও হেপী।

পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে হওয়য় বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাসায় ওঠে এই দম্পতি। কিন্ত চলতি বছরের ১মার্চ হেপী তার পিত্রালয়ে চলে গিয়ে স্বামী কয়েছের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে কয়েছ জানতে পারেন হেপীর ফুফাতো ভাই ব্রিটেন প্রবাসী সুয়েব মিয়া দেশে এসে বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হেপীকে বিয়ে করার পায়তারা শুরু করেন। এরপর জাল তালাকনামা তৈরি করে ২৮ মার্চ জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে হেপীর সাথে সুয়েব মিয়ার বিয়ের আয়োজন করা হয়।

এমতাবস্থায় কয়েছ তার স্ত্রী হেপী বেগমকে উদ্ধারের জন্য সুনামগঞ্জ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সার্চ ওয়ারেন্টের নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। এরপর আদালতে উপস্থিত হয়ে হেপী বেগম জানান তাকে কেউ জোর করে আটকে রাখেন নাই। তাই তিনি নিজ জিম্মায় যেতে চান। তাই আদালত তাকে নিজ জিম্মায় যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন এবং ওই মামলা থেকে অভিযুক্তদেরকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

অন্যদিকে, বিয়ে বন্ধের জন্য গত ২১ মার্চ সিলেট সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেন কয়েছ। তার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত সুয়েব মিয়ার সাথে হেপীর বিয়ের আয়োজন না করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর কয়েছ মিয়া বাদি হয়ে তার স্ত্রী হেপীকে জাল তালাকনামা তৈরীর মাধ্যমে অন্যত্র বিয়ের পায়তারার অভিযোগে ৮জনকে অভিযুক্ত করে গত ২৪ এপ্রিল সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩য় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়-হেপী বেগম, তার ভাই রুমেল মিয়া ও জুয়েল মিয়া, ব্রিটেন প্রবাসী সুয়েব মিয়া, বিশ্বনাথ ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিষ্টার কাজী দেলওয়ার হোসাইন, বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মৃত ছয়ফুল আলমের পুত্র লিটন মিয়া, মৌজপুর গ্রামের মখলিছুর রহমানের পুত্র মুকিতুর রহমান এবং কারিকোনা গ্রামের জহুর আলীর পুত্র আব্দুল খালিক।

দায়েরকৃত মামলায় বাদি কয়েছ উল্লেখ করেন, তার সাথে হেপী বেগমের যে বিয়ের কাবিননামা হয়েছিল তাতে হেপীকে তালাক প্রদানের কোন ক্ষমতা প্রদান করেন নাই কয়েছ; কিন্ত আসামীদের যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে গত ১ মার্চ একটি কথিত তালাক সম্পাদন করেন কাজী দেলওয়ার হোসাইন। এরপর ডাকযোগে ওই তালাকনামাটি বাদির (কয়েছ) হাতে পৌছে এবং তিনি লোকমুখে জানতে পারেন অভিযুক্ত লিটন মিয়ার বাড়িতে গত ১৯ এপ্রিল সুয়েব মিয়ার সাথে হেপী বেগমের বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদটি পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে বাঁধা দেন কয়েছ। এতে উত্তেজিত হয়ে কয়েছ মিয়াকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন অভিযুক্ত রুমেল মিয়া, জুয়েল মিয়া ও লিটন মিয়া।

কয়েছ মিয়ার দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য সিলেটের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১৪ জুলাই আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রেরণ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)’র এ.এস.আই জিতেন্দ্র মীতৈ। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই তালাকনামাটি জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা জিতেন্দ্র মীতৈ। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন ও বাদিকে মারধর করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি আদালত গ্রহণ করেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। এরপর গত ২০ অক্টোবর অভিযুক্ত কাজী দেলওয়ার হোসাইনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, কয়েছ মিয়ার কাছে থেকে তালাক এবং মোহরানা ও ভরণ পোষণের টাকা পাওয়ার দাবিতে সুনামগঞ্জ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে গত ১৬ অক্টোবর মামলা দায়ের করেছেন হেপী। মামলার এজাহারে হেপী উল্লেখ করেন, তিনি বিশ্বনাথ কলেজে এইচ.এস.সি অধ্যয়নরত অবস্থায় মোবাইল ফোন মেরামত করার সূত্র ধরে কয়েছ মিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে তাকে ভূল বুঝিয়ে সাদা কাগজে দস্তগত নিয়ে এথমে একটি এফিডেভিট ও পরবর্তীতে একটি নিকাহনামা করেন কয়েছ। তিনি কোন উপায় না পেয়ে এই বিয়েটি মেনে নেন এবং বিয়ের পর তাকে নানা ভবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন কয়েছ। তাই অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে নিজ পিত্রালয়ে চলে যান হেপী। এমতাবস্থায় কয়েছ মিয়ার কাছ থেকে তালাক পাওয়ার দাবি এবং মোহরানার ৩ লাখ টাকা ও ইদ্দতকালীন সময়ে মাসিক ১০হাজার টাকা হারে ভরণ পোষণের পাওয়ার দাবি জানান হেপী।

কয়েছ জানান, ২০১৩ সালে হেপী বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন অবস্থায় ব্রিটেন প্রবাসী আপন খালাতো বোনের সঙ্গে কয়েছ মিয়ার বিয়ে ঠিক করেন তার পরিবার। বিষয়টি জানতে পেরে বিয়েতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান হেপী। তাই তাকে ছাড়া যদি অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করেন তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে কয়েছকে হুমকি দেন হেপী। এমন কী হারপিক খাওয়া ও ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যার করার অভিনয় করে বিভিন্ন সেলফি তুলে তা হোয়াটসঅ্যাপ-ইমো’র মাধ্যমে প্রেরণ করেন কয়েছের কাছে।

এক পর্যায়ে খালাতো বোনকে বিয়ে না করে প্রেমিকা হেপীকে গোপনে বিয়ে করতে বাধ্য হন বলে জানান কয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে হেপীকে নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের একটি বাসায় বসবাস করেন। কিন্ত কয়েক মাস পর হেপী নিজ পিত্রালয়ে গেলে তাকে পরিবারের সদস্যরা মারধর করে ঘরে আটকে রাখেন এবং একটি ভূয়া তালাকনামা তৈরী করে ফুফাতো ভাই সুয়েব মিয়ার কাছে তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

কয়েছ বলেন হেপীকে বিয়ে করে আমার জীবন নষ্ট হয়েছে, আমার ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু হারিয়ে গেছে। আমাকে পদে পদে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার দু’টি দোকান প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। আমি প্রায় ৬৫লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছি।’ তিনি বলেন ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে, আমি শুধু আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই’।

এব্যাপারে হেপী বেগমের ভাই রুমেল মিয়া বলেন, কয়েছ মিয়া একজন নারীলোভী প্রকৃতির লোক। আমাদের অজান্তে কয়েছ আমার বোনের সাথে প্রতারণা করে বিয়ের কাবির করেছে। ফুফাতো ভাইয়ের সাথে আমার বোনের বিয়ে ঠিক করার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি। আমার বোন কয়েছের সাথে আর সংসার করতে চায় না। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে সে (কয়েছ) আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। ইতিমধ্যে আদালত একটি মিথ্যা অভিযোগ থেকে আমাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়া সে আমার বোনের নামে ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিভিন্ন খারাপ ছবি পাঠাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন : প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল

সকল