১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লাউড় রাজ্যের রাজধানী’র দুর্গ খননের প্রাথমিক কাজ শুরু

খনন কাজে নতুন কিছু প্রত্মতাত্বিক নির্দশন পাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। - ছবি: নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড় রাজ্যের রাজধানী’র দর্গ খননের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর। উপজেলার উত্তর ও দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে গত মঙ্গল ও বুধবার এই দূর্গ খননের আগে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের চারজন গবেষক।

মঙ্গলবার ও বুধবার লাউড়ের গড়ের ঐতিহাসিক এই স্থান পরিদর্শন করেন প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ডঃ আতাউর রহমানের নেতত্বে ৪জন প্রত্মতত্ত্ববিদ।

তারা দুই দিন সরেজমিনে ঘুরে জানান, আমরা নিশ্চিত এখানে প্রত্মতাত্মিক নিদর্শন পাওয়া যাবে। তাহিরপুরের লাউড়ে অনেক প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে যেটি ইতিহাসের প্রাচীন কয়েক যুগকে যুক্ত করবে।

মহাভারত, রামায়ণ, পাল সেন, হযরত শাহজালাল (রাঃ), সুলতানি আমল, মোগল এবং শ্রী চৈতন্যের প্রভাব রয়েছে এই এলাকায়। এই অঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত হয়ে আছেন। ২০০বছর এই ঐতিহ্যের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়নি। খনন কাজ শুরুর আগে যাচাইয়ের অংশ হিসাবে এই জরিপ কার্যক্রম করলেন তাঁরা।

তার মতে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল যেমন বরেন্দ্র অঞ্চল, গৌড় অঞ্চল, দক্ষিণ বঙ্গের ষাট গম্বুজ বা বারো বাজারে যেভাবে গবেষণা হয়েছে সেই তুলনায় সিলেট অঞ্চলে গবেষণা হয়নি। এখন কিছু কাজ শুরু হয়েছে এবং লাউড়েরগড়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য ভান্ডারের খোঁজ পাওয়া গেছে।

জানা যায়,সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল। এখানকার রাজা ভগদত্ত মহাভারতের যুদ্ধে অর্জুনকে সৈন্য পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন বলেও তথ্য রয়েছে।

হযরত শাহজালাল (র.)’এর সঙ্গী শাহ আরেফিন (র.)’এবং মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের সহচর অদ্বৈতাচার্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এই এলাকাটিকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে ইতিহাসের নতুন দিগন্ত আবিস্কার করতে পারেন। না হয় এই এলাকা ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাবে এবং কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়,প্রাচীনকাল হতে শ্রীহট্ট (সিলেট) কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। ত্রৈপুর রাজ বংশের অধ্যুষিত স্থান ত্রিপুরা রাজ্য বলে সাধারণত কথিত হয়। এই রাজবংশের অধিকার এক সময় বরবক্রের সমস্ত বাম তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

শ্রীহট্টের তিন ভাগ তিন জন পৃথক নৃপতি দ্বারা শাসিত হত। গৌড়, লাউড় ও জয়ন্তিয়া এই তিন খন্ডে নৃপতির অধীনস্ত ছিলেন আরও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূমি মালিক। লাউড় রাজ্য ছিল সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার কিয়দংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। লাউড় ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য। তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় লাউড়ের রাজধানী ছিল। এই রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ হলহলিয়া গ্রামে এখনো বিদ্যমান। এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিশ্র। এরা ছিলেন কাত্যান গোত্রীয় মিশ্র। তাদের উপাধি ছিল সিংহ।

খ্রিস্টিয় দশম অথবা একাদশ শতকে তিনি কনৌজ থেকে এখানে আসেন। দ্বাদশ শতকে এখানে বিজয় মাণিক্য নামের নৃপতি রাজত্ব করতেন। বঙ্গ বিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার বিতারিত ও পরাজিত সমভ্রান্তজনেরা প্রাণ ও মান বাঁচানোর জন্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়িয়েছিলেন। এদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন। রাঢ় শব্দ হতেই লাউড় শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আরও দুটি উপ রাজধানী ছিল।

ঐতিহাসিক হান্টারের মতে সম্ভবত ১৫৫৬খিস্টাব্দে লাউড় রাজ্য স্বাধীনতা হারায় এবং মোগলরা এর নিয়ন্ত্রক হন। লেখক সৈয়দ মূর্তজা আলী তাঁর রচিত ‘হযরত শাহ্জালাল ও সিলেটের ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রি.)লাউড়ের রাজা গোবিন্দ সিংহ তাঁর জ্ঞাতি ভ্রাতা জগন্নাথপুরের রাজা বিজয় সিংহের সাথে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিলেন।

এর জের ধরেই বিজয় সিংহগুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হন। বিজয় সিংহের বংশধরগণ এ হত্যার জন্য গোবিন্দ সিংহকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে মোগল সম্রাট আকবরের রাজদরবারে বিচার প্রার্থনা করেন। এ ঘটনার বিচারের জন্য সম্রাট আকবর দিল্লী থেকে সৈন্য পাঠিয়ে গোবিন্দ সিংহকে দিল্লীতে ডেকে নেন। বিচারে গোবিন্দ সিংহের ফাঁসির হুকুম হয়। গোবিন্দ সিংহের অপর নাম ছিল জয় সিংহ। একই সময়ে জয়সিংহ নামের অপর এক ব্যক্তি রাজা গোবিন্দ সিংহের সঙ্গে সম্রাট আকবরের কারাগারে আটক ছিলো। ভুলবশত প্রহরীরা গোবিন্দ সিংহের পরিবর্তে ঐ জয়সিংহকে ফাঁসিতে ঝুলান। গোবিন্দ সিংহের প্রাণ এভাবে রক্ষা পাওয়ায় তিনি কৌশলে সম্রাট আকবরের কাছ থেকে নানা সুযোগ গ্রহণ করেন।

তিনি সম্রাট আকবরের নিকট প্রাণভিক্ষা চান ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গোবিন্দ সিংহের নাম হয় হাবিব খাঁ। সম্রাট আকবর গোবিন্দ সিংহকে তাঁর হৃতরাজ্য পুনরায় দান করেন। অবশ্য শর্ত দেওয়া হয় হাবিব খাঁ সম্রাট আকবরের বশ্যতা স্বীকার করবেন এবং সম্রাটের খাজনার পরিবর্তে ৬৮ খানা কোষা নৌকা নির্মাণ করে সম্রাটতে সরবরাহ করবেন। এই নৌকা গুলো খাসিয়াদের আগ্রাসন হতে আত্মরক্ষার জন্য মোগল ও স্থানীয় বাহিনী কর্তৃক রণতরী হিসাবে ব্যবহার করা হবে। প্রাচীণ নানা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে হাবিব খাঁ’র পৌত্র ছিলেন মজলিস আলম খাঁ। মজলিস আলম খাঁ’র পুত্র ছিলেন আনোয়ার খাঁ। তিনি খাসিয়াদের উৎপাতের কারণে স্বপরিবারে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড় ছেড়ে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে চলে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। এই বংশেরই উমেদ রাজা লাউড়ে একটি দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এই দূর্গের ধ্বংসাব শেষই লাউড়ের হাউলী বা হাবেলী নামে পরিচিত। বর্তমানে এই দুর্গ শেষ অংশ দেখা যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী

সকল