২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গোলাপগঞ্জেই হেরে গেলেন আ’লীগ প্রার্থী

নির্বাচন কমিশন। - ফাইল ছবি

সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উপ নির্বাচন বুধবার ছোটখাট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উপ নির্বাচনে বিএনপির ২ প্রার্থী স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ ৪ প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন।

বুধবার দিনব্যাপী শান্তিপূর্ণ ভাবে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উপ নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহবায়ক আমিনুল ইসলাম রাবেল (জগ)। তিনি ৪ হাজার ১৪৯ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু (নৌকা) ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৫৭টি। পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন (মোবাইল) স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনি ৩ হাজার ৫৫৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী জেলা বিএনপির নেতা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউছসুন্নাহ চৌধুরী নার্জিস (নারিকেল গাছ) স্বতন্ত্র তিনি ৩ হাজার ৩৫৪ ভোট পেয়েছেন। এবারে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উপ নির্বাচনে বিএনপির ২ হেভী ওয়েট প্রার্থী ধানের শীষ না নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট যুদ্ধে মাঠে থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও দু’প্রার্থীই পরাজিত হন। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছেন নানা আলোচনা।

বুধবার সন্ধায় ভোট গননা শেষে রিটার্নিং অফিসার খোরশেদ আলম উপজেলা সম্মেলন কক্ষে আমিনুল ইসলাম রাবেলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুমন্ত ব্যানার্জিসহ র‌্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ফলাফল ঘোষণার পর পরই নবনির্বাচিত মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেলকে নিয়ে উপজেলা সদরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উল্লাস করেছেন তার সমর্থকরা। পাশাপাশি নবনির্বাচত মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল তাকে মেয়র পদে বিজয়ী করায় পৌরবাসীকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি পৌরবাসীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

 

আরো পড়ুন: সিলেটে কে পরবেন জয়ের মালা?

এনামুল হক জুবের সিলেট ব্যুরো


কাল ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের চতুর্থ নির্বাচনে মেয়র পদে কে পরবেন জয়ের মালা- এ নিয়ে এখন সর্বত্র চলছে আলোচনা। এবার সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭১২ জন। গতবারের চেয়ে এ সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। গত নির্বাচনে জোট-মহাজোটের লড়াইয়ে জোটপ্রার্থী জয়ী হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। সারা দেশের মধ্যে একমাত্র সিলেট সিটিতে বিএনপির সমর্থন চেয়েছিল জামায়াত। কিন্তু বিএনপি ছাড় না দেয়ায় এখানে দুই দলের আলাদা আলাদা প্রার্থী রয়েছেন। অপর দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১৪ দলের কেউ নেই। শনিবার জাতীয় পার্টি সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে। বিএনপি ও জামায়াত অভিযোগ করেছে, তাদের কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছে পুলিশ। গতকাল প্রচারণার শেষ দিনে গোটা নগরীতে ছিল উৎসবের আমেজ। প্রহসনের নির্বাচন না হলে কী হতে পারে এবারের ফলাফল, বিষয়টি শুধু সিলেট নয় দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের দলীয় ভোটের সাথে মহাজোটের শরিক দলগুলোর অল্প কিছু ভোট যোগ হলেও এই ভোট জয়লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর দলীয় ভোট কামরানের চেয়ে বেশি নয়। অতীতে এককভাবে নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দমন-পীড়নে বিপর্যস্ত জামায়াতের ভোট কত তা কারো কাছে স্পষ্ট নয়।

তবে সিলেট নগরীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে একমাত্র জামায়াতের। ব্যক্তি ইমেজের কারণে দলের বাইরে কামরানের যেমনি রয়েছে কিছু ভোট, তেমনি উন্নয়নে পারদর্শী হওয়ায় আরিফেরও ভোট কম নয়। ক্লিন ইমেজের অধিকারী ও সাদা মনের মানুষ হিসেবে জামায়াত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরও অনেক ভোটারের পছন্দ। তবে, এবার দলীয় আবহে স্থানীয় এই নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন তা বলতে নারাজ বেশির ভাগ ভোটার। এই নীরব ভোটার ও নতুন ভোটারদের ওপরই নির্ভর করছে জয়-পরাজয়। কামরানের পক্ষে প্রকাশ্যে দলের সবাই কাজ করছেন।

আরিফের বিপক্ষেও দলের এখন আর কেউ নেই। কিন্তু উভয় দলের অনেকেই রয়েছেন, তারা চান না কামরান ও আরিফের জয়। অপর দিকে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে নীরব ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও জুবায়ের তাদের কেমন ভোট পাবেন- এর ওপরই নির্ভর করছে তার জয়-পরাজয় ও অবস্থান।

সিলেট সিটির এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন প্রার্থী থাকলেও কামরান, আরিফ ও জুবায়ের রয়েছেন মূল লড়াইয়ে। তাদের মধ্য থেকেই একজন পরবেন জয়ের মালা। আর কে পরবেন সেই মালা এ জন্য আমাদের সোমবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আরো পড়ুন: যদিতে ঘুরপাক খাচ্ছে সিলেট সিটির নির্বাচন
মঈন উদ্দিন খান সিলেট থেকে

ঢাকা থেকে লন্ডন এক্সপ্রেসে দুপুর আড়াইটায় মিনি লন্ডন খ্যাত দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেটে পা রাখার সাথে সাথেই টের পাওয়া গেল নির্বাচনী উত্তাপ। নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্বর পুরোটাই ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের সাদাকালো পোস্টারে। এরই মধ্যে ভেসে এলো ‘আরিফুল হকের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’। সিএনজিতে হজরত শাহজালালের মাজারসংলগ্ন হোটেল নূরজাহানে এগোতেই চালক সালামের কাছে জানতে চাইলাম, ভোট কেমন হবে। উত্তর এলো বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। এরপরই সে ‘যদি’ জুড়ে দিয়ে বলল ‘মারধর না হলে’। এই যদিতেই ঘুরপাক খাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের আগামীকাল সোমবারের নির্বাচন।

হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে প্রথম দুই ঘণ্টা এই ‘যদির’ খোঁজ নিলাম। তাতে যে দুইটি বিষয় বেরিয়ে এলো, তা হলো পুলিশের ভয়। আর সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আস্থাহীনতা। 

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সিলেটে চারটি মামলা হয়েছে। যার আসামিরা সবই ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থক। এই সমর্থকদের আবার বড় একটি অংশ মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হকের নির্বাচনী এজেন্টের তালিকায় রয়েছেন। তাই মামলা আর গ্রেফতারের ভয় এখন ধানের শীষ শিবিরে। 

যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে বলে দাবি করেছেন। 

গত ১৩ জুন সিলেট সিটি (সিসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, এর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা চার মামলায় আসামি ৩৯৮ জন। গত ২৫ জুলাই রাতে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে পরদিন ২৬ জুলাই ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৭৮ জনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলাটি হয়। মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির সমর্থক আক্তার রশীদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, তানভীর আহমদ আবির, আজাদ, মির্জা জনি, পারভেজ, বাবলু, শাহিন, আজহার আলী অনিক, হাবিব, খায়রুল, নাজমুল ইসলাম চৌধুরী, আতিফ চৌধুরী, মামুন আহমদ, রুহেল আহমদ, ছাত্রদল নেতা আলী আকবর রাজন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহাত চৌধুরী মুন্না, মদন মোহন কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী মেরাজ, এস এম সেফুল, কামরুজ্জামান দীপু, ১০নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নিয়ামত এলাহী, রিয়াজ উদ্দিন বাদশা, কয়েছ, জাবের, নাজিম উদ্দিন লস্কর, আব্দুস ছামাদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা শাকিল মোর্শেদ, আজিজুল হোসেন আজিজ, মুন্না, ফয়েজ, ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি খোকন, রজব আলী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইসতিয়াক সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি ভিপি মাহবুব, আফছর খান, রাসেল খান, রাজিব খান, শাহজাহান, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাবিল রাজা চৌধুরী, আব্দুস সামাদ তুহেল, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রকিব চৌধুরী, বাচ্চু মিয়া, মহানগর বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন, ডিসকো, রাসেদ ও ফয়েজ আহমদ

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আলী আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেন, পুলিশ বেছে বেছে নির্বাচনী কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা বিএনপির এজেন্টের তালিকায় আছে। পুলিশ নেতাকর্মীদের ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে। এ কারণে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। তিনি আরো বলেন, পুলিশ ভোটকে প্রভাবিত করতে পরিকল্পিতভাবে মামলাগুলো করেছে।

বিএনপির অভিযোগ একই উদ্দেশ্যে গত ২২ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ একযোগে একই দিনে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করে। ওই দুই মামলায় ২৪ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি গ্রেফতার এড়াতে সংশ্লিষ্ট মামলার আসামিরা পকেটে পকেটে জামিন সংক্রান্ত আইনজীবীর সত্যায়িত সনদ নিয়ে রাখছেন। উচ্চ আদালত থেকেও গ্রেফতারের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আছে। এ কারণে পরিকল্পিতভাবে ককটেল হামলার নাটক সাজিয়ে নতুন করে মামলা করা হয়েছে। আসামির তালিকা দেখলেই তা বুঝা যায়।

২৬ জুলাই দক্ষিণ সুরমা থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি ৭৮ জন। দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল জানান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেনকে প্রধান আসামি করে এজাহারে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ২০ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের সবাই বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানান তিনি।

এজাহারে দেখা গেছে, সিলেট এমএম কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী মেরাজ আহমদ ১৮ নম্বর আসামি। অথচ তিনি পাঁচ মাস ধরে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ আছেন। এজাহারে আরো আসামি আছেন, মীর বকস টোলার আলী আকবর রাজন, মেজটিলার রাহাত চৌধুরী মুন্না, মদিনা মার্কেটের এস এম সেফুল, বাগবাড়ির কামরুজ্জামান দীপু, কানিশাইলের নিয়ামত এলাহীসহ বেশ কয়েকজন অন্য এলাকার বাসিন্দা। বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, যে এলাকায় ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে এসব নেতা কখনোই যাওয়ার কথা নয়। অথচ মামলায় মনগড়া আসামি করা হয়েছে, যাতে তারা ভোটের কাজ করতে না পারেন। উল্লিখিতদের মধ্যে নিয়ামত এলাহীকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বিএনপি নেতারা জানান, সিসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ১৩ দিনের মাথায় ২৬ জুন ছাত্রদলের দেড়শতাধিক নেতাকর্মীর নামে একটি মামলা করা হয়। 

পরে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নামে আরো দু’টি মামলা করা হয়। এর একটির বাদি খোদ পুলিশ। অপরটির বাদি একজন আওয়ামী লীগ নেতা। জানা গেছেÑ সুমন ও রাসেল নামে দুই কর্মীকে ওসমানীনগর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের পুরনো একটি পেন্ডিং মামলায় গত ২১ জুলাই প্রথম প্রহরে (শুক্রবার শেষ রাতে) ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই ঘটনা জানার পর ২১ জুলাই বিকেলে উপপুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান নেন ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থী। ওই ঘটনায় পরদিন ২২ জুলাই রোববার বিকেলে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়। মামলায় আরিফের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের আসামি করা হয়। মামলায় ৩৯ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে নির্বাচনী এলাকার বাইরে টুলটিকর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ে আগুনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ২২ জুলাই রাত পৌনে ১২টায় নগরীর শাহপরান থানায় ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ২২ জুলাই রাতে পুলিশ সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমদ, বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রুমান রাজ্জাক এবং এনামুল নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে গ্রেফতার করে। গত ২৩ জুলাই নগরীর শাহী ঈদগাহে নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আরিফুল হক চৌধুরী। এতে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ করেন তিনি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং আমাদের প্রার্থীও ব্যক্তিগতভাবে হিংসা ও হানাহানির রাজনীতি পছন্দ করেন না। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের মতো করে ব্যবস্থা নেয়। তা পুলিশের ব্যাপার। এতে আওয়ামী লীগকে জড়ানো উচিত নয়।

এ দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মেয়রপ্রার্থী এহসানুল হক জুবায়েরের পক্ষ থেকেও পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে। তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হাফেজ আব্দুল হাই হারুন নয়া দিগন্তকে বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নেতাকর্মীদের কয়েক দিন ধরে হয়রানি করা হচ্ছে। মেয়রপ্রার্থীর গ্রামের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমার বাড়িতে গেছে। সমাবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। ভোট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। 

সার্বিক বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আলীমুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের ঘটনায় পুলিশ তাদের মতো করে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে মামলা হলে তারা যেকোনো প্রার্থীকে আসামি করতে পারে। সেখানে রিটার্নিং কর্মকর্তার কোনো হাত থাকে না। তার সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্কও নেই।

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের পরেও প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়রপ্রার্থীরা ভোটের ফল পক্ষে আনতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। গতকাল শনিবার মধ্য রাতে শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। ভোটকেন্দ্র পর্যায়ে সর্বশেষ প্রস্তুতি তারা আবার ঝালিয়ে নিচ্ছেন। 
সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে চান : সাধারণ ভোটাররা ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট দেয়ার সুযোগ চান। তবে তারা ভরসা পাচ্ছেন না। 

শহরের জিন্দাবাজারের ফল বিক্রেতা সোবহান বলেন, ভোট দিতে চাই। কিন্তু কোনো ভোট তো কাজে লাগে না। আস্থা নেই। যদি ডান বাম হয় তাহলে ভোট দিয়ে কি লাভ বলেন। 

জেল রোডে কথা হয় ইসমাঈল নামে এক স্কুলশিক্ষকের সাথে। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ কোনো ঝামেলা পছন্দ করে না। তারা সুষ্ঠু ভোট চান। কিন্তু পুলিশের গত কয়েক দিনের ভূমিকায় আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। আশা করি কোনো অঘটন ঘটবে না। জনরায় দিয়েই সিলেট পাবে তাদের পছন্দের মেয়র। 
নতুন মামলা, আসামি ৮০ : এরই মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করে শুক্রবার রাতে নতুন আরো একটি মামলা হয়েছে। 

জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই রাতে নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে ককটেল ফাটানো হয়েছে এমন অভিযোগে মামলাটি হয়েছে। মামলার বাদি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হায়দার হোসেন ফারুক। মামলায় আসামি ৮০ জন। এর মধ্যে ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে ওই ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেনকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement