কলেজ ছাত্রী তান্নি হত্যার ৬ মাসেও রহস্য উদঘাটন হয়নি
- কুলাউড়া(মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা
- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৫
মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার্থী কুলাউড়ার পাবই গ্রামের মেয়ে তাসরিকা হক তান্নি হত্যাকাণ্ডের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কোর্টে মামলা করার পর ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আদালত নির্দেশ দিলেও বিগত ৪ মাসেও মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দিচ্ছেনা পিবিআই। এ নিয়ে নিহতের পরিবার(পিতার বাড়ির লোকজন) পড়েছেন চরম বেকায়দায় । আদালত, পিবিআই, রেলওয়ে পুলিশের কাছে ধর্ণা দিতে দিতে এখন হয়রান তারা।
তাই দ্রুত তান্নির হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত বিলম্বের প্রতিবাদে ও দ্রুত খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে মঙ্গলবার দুপুরে কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নের কটারকোনা বাজারে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহতের পরিবার। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন নিহতের বড় ভাই আজিজুল হক তানিম। এসময় নিহতের অন্যান্য আত্নীয় স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ২০১৫ সালের ১১ জুন কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষা গ্রামের মজবুল আলীর ছেলে আলী ইবতেজা রাসেলের সঙ্গে কুলাউড়া উপজেলার পাবই গ্রামের আব্দুল হকের মেয়ে মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী তাসরিকা হক তান্নিকে বিবাহ দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে তান্নিকে পড়ালেখায় বাধা প্রদান, যৌতুকের জন্য মারধর করাসহ নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিলো শশুর বাড়ির লোকজন। বিয়ের পর থেকে তান্নি কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে তান্নিকে স্বামীর বাড়ী থেকে পিতার বাড়ী এনে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়। এ নিয়ে তান্নি প্রতি স্বামী ও স্বামীর বাড়ীর লোকজনের চরম ক্ষোভ ছিল। এর পরে উভয় পক্ষের মুরব্বিয়ানদের মধ্যস্থতায় তান্নিকে স্বামীর বাড়ীতে নেওয়া হয়। কিন্তু স্বামীর বাড়িতে নেওয়ার পর তান্নির উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এ অবস্থায় তান্নি শত বাধা বিপত্তি ও নির্যাতন সহ্য করে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তাকে। মাঝে মধ্যে তাকে প্রাণে মারার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে এ ধরনের তথ্য তান্নি তার ভাই আজিজুল হককে অবহিত করলে ভাই তান্নিকে কোন রকমে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করার জন্য বলেন। ঘটনার দিন অর্থাৎ চলতি বছরের ২৮ মার্চ তান্নি মৌলভীবাজার কলেজে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসার পর তাকে(তান্নিকে) স্বামী ও স্বামীর বাড়ীর লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তান্নির গলাকাটা বিবস্ত্র লাশ ভানুগাছ রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের ভাই আজিজুল হক আরও বলেন, তান্নির জ্যা তাসলিমা সুলতানা রুমির পিত্রালয় ভানুগাছ এলাকায় বাসায় নিয়ে তান্নিকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা তান্নির মাথা, পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে লাশ রেললাইনে ফেলে রেখে ঘটনাটি আত্নহত্যা হিসাবে প্রচার করে ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া কৌশল করতে থাকে।
পরবর্তীতে লাশ উদ্বার করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশ। একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে পুলিশ লাশের পোস্ট মর্টেমের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও আঘাতজনিত কারণ উল্লেখ করে পোষ্ট মর্টেম রির্পোট ঘটনার ১৫ দিন পর রেলওয়ে পুলিশকে সাবমিট করা হলেও এখন পর্যন্ত রেলওয়ে পুলিশ নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু করছে না। রেলওয়ে থানার পূর্বের ওসি সাত দিন, ১৫ দিনের মধ্যে মামলা মামলা রুজু করব এধরনের আশ্বাস দিতে দিতে তিনি বদলী হয়ে চলে গেছেন। এখন নতুন ওসি এসেছেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলা রুজু করার কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেননা।
অপরদিকে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে নিহতের ভাই আজিজুল হক বাদি হয়ে তান্নির স্বামী আলী ইফতেজা রাসেল(৩৭)সহ শশুরবাড়ির ৬ জনকে আসামী করে মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে ৭ দিনে মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য মৌলভীবাজারের পিবিআইকে নির্দেশ দেন গত ৩১ মে। কিন্তু বিগত ৪ মাস থেকে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম কোর্ট থেকে বারবার সময় চেয়ে কালক্ষেপন করছেন বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের ভাই আজিজুল হক অবিলম্বে তান্নি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন ও দ্রুত খুনিদের গ্রেফতারের দাবী জানান ।
এব্যাপারে পিবিআই মৌলভীবাজারের ইন্সপেক্টর( প্রশাসন) আতিকুর রহমান জানান, কলেজ ছাত্রী তাসরিকা হক তান্নির মামলাটি কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছে পিবিআই। তদন্তকাজ শেষ না হওয়ায় আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা