এক যুগ ধরে ভয়ঙ্কর রোগে গৃহবন্দী ভাই-বোন
- মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার)
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:৩৪
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিরল রোগে আক্রান্ত ৫ বছরের শিশু বাবলী আক্তারের পর বিরল রোগে আক্রান্ত আরো দুই ভাই-বোনের সন্ধান মিলেছে। তাদের বাড়ি সদর ইউনিয়নের উত্তর তিলকপুর গ্রামে। বাবা দরিদ্র কৃষক মোঃ ফকরুল ইসলাম আফরোজ। ভয়ংকর বিরল রোগে আক্রান্ত সিরাসুস ছালেকিন (১৮) ও আবেদা আক্তার রিমা (১৫) আপন ভাই-বোন। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে সিরাসুস সালেকীন দ্বিতীয় ও আবেদা আক্তার তৃতীয় সন্তান।
জন্মের তিন বছর বয়সে এ রোগে দেখা দেয়। কৃষক বাবা প্রথমেই গ্রাম্য কবিরাজকে দেখান। কিন্তু দিন দিন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে রোগটি। বিশেষ করে ছেলে সালেকিনের মুখমণ্ডল ও শরীরে ভয়ঙ্করভাবে দেখা দেয়। আর মেয়ে আবেদা আক্তার রিমার রোগটিও বেড়ে গিয়ে মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। লোকলজ্জার ভয়ে ঘরে বন্দী জীবনযাপন করছে। তাদের এই অবস্থাতে ঘরের বাইরে বের হওয়াও খুবই কষ্টসাধ্য। তাদের মধ্যে কেউই সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। ভাই-বোন দীর্ঘ ১২-১৩ বছর যাবত তাঁরা এই ভয়ংকর রোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও অজ্ঞতার কারণে কৃষক ফকরুল ইসলাম সন্তানদের কোন সুচিকিৎসা করাতে পাচ্ছেন না। একদিকে রোগের যন্ত্রনা অন্যদিকে সংসারের অনটনে চিকিৎসার অভাবে যেন তাঁরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (৫০)। কৃষিকাজ করে ৮ জনের সংসার চালানো তার পক্ষে খুবই কষ্টকর। প্রথমে সিরাসুসের মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন ও সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। পরে তা মারাত্নক রূপ ধারণ করে এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সে তরল জাতীয় খাদ্য ছাড়া কিছুই খেতে পারে না। রিমার শরীরে ও মুখে প্রথমে কিছু সাদা সাদা দাগ ছিল। পরে তা পুরো মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মারত্মক কালো রূপ ধারণ করে। এখন সে ঠিকমতো আলোতে চলতে পারে না। তখন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা রোগটি সনাক্ত করতে পারেনি। স্থানীয়দের পরার্মশে পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তাররা সঠিক রোগটি সনাক্ত করতে না পারায় এবং সুনিদিষ্ট কিছু না বলায় রোগাক্রান্ত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন বাবা ফকরুল ইসলাম। এখন মা শিরী বেগম(৪২) ও বড় ভাই শামসুল আরেফিন(২৩) তাদের দেখাশুনা করেন।
এ বিষয়ে বিরল রোগেক্রান্ত ছেলে-মেয়ের বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অসহায়ের মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলে মেয়েদের চিকিৎসার প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক বাধা। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমতাবস্থায় নিজের চোঁখের সামনে ছেলে মেয়ের আর্তনাদ দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই তার।
কমলগঞ্জ ৫০ শয্যা হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ডা.সৈয়দ শওকত আলী জানান, এটি জিনগত সমস্যা হতে পারে। রোগীর চামড়ার কোষে মেলানিন না থাকায় সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মিতে কোষের DNA নষ্ট হয়ে যায়। ক্রমাগত অতিবেগুনী রশ্মির সম্মুখীন হলে DNA নষ্ট হয়ে ক্যান্সার হতে পারে। প্রাথমিকভাবে তিনি ধারণা করছেন রোগটি Xeroderma Pigmentosam হতে পারে। এটি একটি বিরল ধরনের রোগ। ছেলে ও মেয়েটিকে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ অথবা পিজি হাসপাতালে পাঠানো যেতে পারে। কৃষক ফকরুল ইসলাম সন্তানদের বাঁচাতে সরকারের কাছে সু চিকিৎসার আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা