২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্লেড দিয়ে সিজার করা সেই ডাক্তার গ্রেফতার

-

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ব্লেড দিয়ে সিজার করা সেই দুই পল্লী চিকিৎসকের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছে তাহিরপুর থানা পুলিশ। তার নাম লাল মোহন বর্মণ (৪৫)। তিনি উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের বড়খলা গ্রামের মদন মোহন বর্মনের ছেলে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে পল্লী চিকিৎসক লাল মোহন বর্মন ও নরুল আমিন বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাহিরপুর থানা পুলিশ মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তের বীরেন্দ্রনগড় এলাকার জিরো লাইন থেকে অভিযান চালিয়ে লাল মোহনকে গ্রেফতার করে। এসময় বালিজুরী ইউনিয়নের বড়খলা গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে পল্লী চিকিৎসক অপর আসামী নরুল আমিন বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যায়।

এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দন কান্তি ধর জানান, দুঃখজনক ঘটনার পর থেকেই একজন এসআই পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম। ঐ দুই চিকিৎসককে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত ছিল মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালিয়ে লাল মোহনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি।

মৃত নবজাতক ও আহত প্রসূতির স্বামী সুজিত বর্মন জানান, আমার সুস্থ বাচ্চাটিকে মেরে ফেলল আর আমার স্ত্রী এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আমি ঐ ডাক্তারদের বিচার চাই।

উল্লেখ্য, উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের বুধবার (৮আগষ্ট) রাতে বড়খলা গ্রামের সুজিত বর্মনের স্ত্রী শৌমরী বর্মনের প্রচন্ড প্রসব ব্যাথা উঠে। এই সময় সুজিতের পরিবারের লোকজন গ্রামের পল্লী চিকিৎসক লাল মোহন বর্মন ও নরুল আমিন নামের দু জনকে বিষয়টি অবগত করে। তারা ঘটনা শুনে পরেই দুইজন মিলেই সুজিতের বাড়িতে যায়। দুই ডাক্তার ঐ গভবর্তীর শরীরিক অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজনকে জানায় পেটের বাচ্চা মারা গেছে আর মায়ের অবস্থা বেশী ভাল না।

দুই ডাক্তার আরো জানায়, দ্রুত সিজার করাতে হবে। আর তারা নিজেরাই সিজার করতে পারবে। পেটের বাচ্চা মারা গেছে শুনে সুজিতের পরিবারের লোকজন কি করবে দিশেহারা হয়ে পরে। কোন পথ না বুঝেই ঐ দুই ডাক্তারের কথায় রাজি হয়ে যায়। এই দুই ডাক্তার এর পরেই সুজিতের বসত-বাড়িতেই সিজার করতে গিয়ে অনবিজ্ঞ থাকায় গর্ভবতীর যোনী পথ ব্লেড দিয়ে অতিরিক্ত কেটে বাচ্চা বের করে আনতে গিয়ে নবজাতক শিশুর মাথাসহ শরীলের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলে। এতে বাচ্চাটি মারাত্নকভাবে আহত হয়। কিন্তু বাচ্চা মারা যায়নি। কেটে যাওয়া অংশে কয়েকটি সেলাইও করে তারা। এই অবস্থায় বাচ্চাটিকে বাঁচাতে দ্রুত পাশ্বভর্তি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে গুরুত্বর আহত অবস্থায় শৌমলী বর্মন (বাচ্চার মা) কে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। 

এই ঘটনা বৃহস্পতিবার বিকালে জানাজানি হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে ঐ দুই পল্লী চিকিৎসক। এর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছিল গত বুধবার থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর ৪দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার (১১আগষ্ট) দুপুরের সিলেট নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন কর্তবরত ডাক্তারগণ।


আরো সংবাদ



premium cement