২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্লেড দিয়ে সিজারে প্রাণ গেল নবজাতকের, মুমূর্ষু মা

-

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় দুই পল্লী চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় এক গর্ভবতীকে ব্লেড দিয়ে সিজার করতে গিয়ে এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর জীবন মৃত্যুর সন্দিক্ষণে রয়েছে গর্ভবতী সেই মা। এই ঘটনা প্রকাশের পর এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই গা ডাকা দিয়েছে ঐ দুই পল্লী চিকিৎসক। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের বড়খলা গ্রামে সুজিত বর্ষনের বাড়িতে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের বুধবার রাতে বড়খলা গ্রামের সুজিত বর্মনের স্ত্রী শৌমরী বর্মনের প্রচন্ড প্রসব ব্যাথা উঠে। এই সময় সুজিতের পরিবারের লোকজন গ্রামের পল্লী চিকিৎসক লাল মোহন বর্মন ও নরুল আমিন নামের দু’জনকে বিষয়টি অবগত করেন। তারা ঘটনা শুনার পরেই দুইজন মিলে সুজিতের বাড়িতে যায়। দুই ডাক্তার ঐ গভবর্তীর শরীরিক অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজনকে জানায় পেটের বাচ্চা মারা গেছে আর মায়ের অবস্থা বেশী ভাল না। এই অবস্থায় সুজিতের পরিবারের লোকজকে দুই ডাক্তার আরো জানায়, দ্রুত সিজার করাতে হবে। আর তারা নিজেরাই সিজার করতে পারবে বলে জানায়। পেটের বাচ্চা মারা গেছে শুনে সুজিতের পরিবারের লোকজন কি করবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। কোন পথ না বুঝেই ঐ দুই ডাক্তারের কথায় রাজি হয়ে যায়। অনবিজ্ঞ দুই হাতুড়ে ডাক্তার এর পরেই সুজিতের বসত-বাড়িতেই সিজার করতে গিয়ে গর্ভবতীর যোনী পথ ব্লেড দিয়ে অতিরিক্ত কেটে বাচ্চা বের করে আনতে গিয়ে নবজাতক শিশুর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলে। এতে বাচ্চাটি মারাত্নকভাবে আহত হয়।  বাচ্চাটি তখনো জীবিত ছিল। কেটে যাওয়া অংশে কয়েকটি সেলাইও করে তারা। এই অবস্থায় বাচ্চাটিকে বাঁচাতে দ্রুত পাশ্বভর্তি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে গুরুতর আহত শৌমলী বর্মনকে (বাচ্চার মা) বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

এরপর দিন বিকালে এই ঘটনা শুনে ঘটনাস্থল বড়খলা গ্রামে যান তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব ও তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল হোসেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা ক্ষোভের সাথে জানান, এই আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এই রকম ঘটনা খুবই দুঃখজনক। অনবিজ্ঞ পল্লী চিকিৎসক সিজার করাতে গিয়ে কেন ব্লেড ব্যবহার করবে? আর ঐ দুই ডাক্তার কেমন ডাক্তার যে এইভাবে সিজার করতে গেল? এখন বাচ্চাটা মারা গেল আর মা জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এই দুই হাতুড়ে ডাক্তারের কঠিন শাস্থির দাবী করেন এলাকাবাসী।

তারা আরো বলেন, সবাইকে সচেতেন হতে হবে। এই আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিটি ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীগন রয়েছে। এছাড়াও এলাকায় অভিজ্ঞ ধার্ত্রী রয়েছে তাদের পরামর্শ ও সহযোগীতা নিয়ে এমনটা হত না। ঐ হাতুড়ে ডাক্তারগন বাচ্চা মৃত বলে দাবী করেছিল। তারা বাচ্চা বের করতে গিয়ে বাচ্চাটির মাথা কেটে ফেলায় মাথায় সেলাই করে। পড়ে বাচ্চাটি মারা যায়।

এ বিষয়ে ঐ মৃত নবজাতক ও আহত গর্ভবর্তীর স্বামী সুজিত বর্মন জানান, আমার সুস্থ বাচ্চাটিকে মেরে ফেলল আর আমার স্ত্রী এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তারা পারবে না বললেই ত পারত। কেন এমন করল। আমি এর বিচার চাই।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব জানান, শুনেছি প্রসবের পর বাচ্চাটি নড়াচড়া করেছে। বাচ্চার মাথা কেটে যাওয়ায় মাথার সেলাই দিয়েছে ঐ ডাক্তাররা। পরে বাচ্চা মারা গেছে।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দন কান্তি ধর জানান, ঘটনা শুনেছি খুবেই দুঃখজনক। এখনও কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে আসে নি। থানা থেকে একজন এসআই পাঠিয়েছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

 


আরো সংবাদ



premium cement