২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জালিয়াতি মামলায় রাগীব আলী ও ছেলের দন্ড বহাল

-

ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি করে সিলেটের তারাপুর চা বাগান দখলের মামলায় সিলেটের বিতর্কিত ব্যবসায়ী রাগীব আলী ও তার ছেলেকে নিম্ন আদালতের দেয়া ১৪ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন সিলেটের বিশেষ দায়রা জজ আদালত।
নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে আসামীদের করা আপীলের শুনানী শেষে বৃহস্পতিবার সকালে বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।
আলোচিত এই মামলায় ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো পাঁচটি ধারায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদন্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামীরা আপীল করেন। বৃহস্পতিবার নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে রায় প্রদান করেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ।
এই মামলায় বছরখানেক জেল খাটার পর বর্তমানে ছেলেসহ জামিনে আছেন রাগীব আলী ।
জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির অভিযোগে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) এসএম আব্দুল কাদের। এছাড়া সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন তিনি। মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয় রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। এই মামলার বিরুদ্ধে রাগীব আলী উচ্চ আদালতে গেলে ২০১৬ সালের শুরুতে তার নিষ্পত্তি হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশের পর একই বছরের বছরের ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
মামলা হওয়ার ১১ বছর পর ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ওই বছরের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাই ওই দিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। আর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী। ওই দিনই সিলেটের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর শুরু হয় বিচার কার্যক্রম। তদন্ত এবং বিচার শেষে এই মামলায় ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন।
শুনানীকালে রাষ্ট্রপক্ষে একমাত্র আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট নওশাদ আহমদ চৌধুরী। অন্যদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট এটিএম মাসুদ টিপু, অ্যাডভোকেট মঈনুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, জালিয়াতি মামলার পাশাপাশি ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল সিলেটের তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনায় আরো একটি মামলায় বিতর্কিত শিল্পপতি রাগীব আলীর বিভিন্ন ধারায় মোট ১৪ বছর কারাদন্ড হয়। এ ছাড়া ১৬ বছর করে কারাদন্ড হয় তার ছেলে, মেয়ে, জামাতা ও এক নিকটাত্মীয়ের। তবে খালাস পান বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement