২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অদম্য মেধাবী আমিনার স্বপ্ন পূরণ হবে?

নিজের কুঁড়েঘরের সামনে মায়ের সাথে আমিনা আক্তার। ছবি - নয়া দিগন্ত।

২০০৪ সালে পিতা ঠেলাচালক আব্বাস আলী বন্যার পানির তোড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর একবছর পর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল অদম্য মেধাবী আমিনা আক্তার। সে সময় বড় ভাই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বশির মিয়া লেখাপড়া বাদ দিয়ে মায়ের সাথে পরিবারের হাল ধরে। মা অন্যের ঘরে ঝিয়ের কাজ করে। মা-ছেলে মিলে জীবনযুদ্ধে এভাবে খেয়ে না খেয়ে অদম্য মনোবল নিয়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কমলগঞ্জ গণ সহাবিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার শ্রীনাথপুর গ্রামের আমিনা আক্তার। আমিনা গভীর রাত পর্যন্ত ভাঙ্গা ঘরে কুপির আলোয় লেখাপড়া করতো। শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট ও কোচিং না করেই তার এ ফলাফল হরিষে বিষাদ বটে। ভবিষ্যতে চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন আমিনার। কিন্তু দারিদ্রতাকে জয় করে আমিনার স্বপ্ন কি পূরণ হবে?

২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে আমিনা সবার ছোট। পিতার মৃত্যুর পর শুধুমাত্র অর্থের অভাবে বড় ভাই ও বোনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মা ও বড় ভাই পরিবারের হাল ধরেন। মা হাসনা বিবি অন্যের ঘরে ঝিয়ের কাজ ও বড় ভাই বশির মিয়া কুটির শিল্পের একটি দোকানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। শুধুমাত্র বাড়িতে সামান্য ভাঙ্গা বসতভিটে ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই। শ্রীনাথপুর গ্রামের হতভাগা এ কিশোরীকে এইচএসসি ভর্তির সময় নিজ গ্রামের বাসিন্দা লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আহমদ সিরাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমিনা আক্তার স্থানীয় অরফান ইন এ্যাকশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে ২ বছরের জন্য তাকে শিক্ষাবৃৃত্তির অন্তর্ভুক্তি করেন। এ সহায়তায় আমিনা কোন রকম এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। আমিনা ভবিষ্যতে একজন চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু চরম দারিদ্রতার সাথে বেড়ে উঠা আমিনার কি সেই স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে? তার চিন্তা আদৌ কি সে কোন কলেজে ভর্তি হতে পারবে? কলেজে যাতায়াত, বইপত্রসহ ন্যূনতম আনুষাঙ্গিক ব্যয় নির্বাহই বা করবে কি করে। চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট পড়তে গেলে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন।

আমিনা বলেন, ঠেলাচালক পিতার করুণ মৃত্যুর পর মা ও একমাত্র বড় ভাইয়ের প্রচেষ্টায় আমি এতদূর এগিয়ে এসেছি। তবে এসবের পরও দমে যাইনি। গভীর রাতে কুপি জ্বালিয়ে লেখাপড়া করেছি। ভালো ফল করাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল। অনেক বাধার পরও ভালো ফল করতে পেরে আমি খুবই খুশি। ভবিষ্যতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সবার আর্থিক সহযোগিতা। শুধুই কি অর্থের অভাবে দরিদ্র আমিনার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হবে না? অদম্য মেধাবী আমিনার স্বপ্ন কি ভেসে যাবে চোখের লোনা জলে ?

 


আরো সংবাদ



premium cement