২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিলেটে জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ

সিলেটে জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ - ছবি : সংগৃহীত

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। বিগত তিনটি নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে দুইবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন। সিলেটে মহাজোটে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। নগরীতে জাতীয় পার্টির কোনো সাড়া শব্দ নেই দীর্ঘ দিন থেকে। তাদের এখন করুণ অবস্থা। জাপার সমর্থন দেয়া বা না দেয়া নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। 

এবারো আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে ১৪ দলের শরিক কোনো দলের প্রার্থী নেই। অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের শরিক প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াত এবার আলাদা আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। শুরুতে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও এখন সেটা নেই। বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম সরে যাওয়ায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থকেরা এখন খুশি মনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

গতবার হেফাজত ও জামায়াতের সহযোগিতা পাওয়ায় আরিফ সহজেই জয়লাভ করেন। কিন্তু এবার তারা সাথে নেই। তাই আরিফ নানাভাবে ভোটারদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই দক্ষিণ সুরমা থেকে দুই কর্মীকে ধরে নেয়ার অভিযোগ করে মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ের সামনে শনিবার প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করেন তিনি। কিন্তু গ্রেফতার করা দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়নি পুলিশ। কারণ ওসমানীনগর থানার একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে রাসেল ও সুমন নামে ওই দু’জনকে আটক করে পুলিশ। 
এবার জামায়াত সাথে না থাকায় সিলেট বিএনপির বেশির ভাগ নেতাই খুশি। তারা মনে করেন, জামায়াত ছাড়াই আরিফ এবার বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, অতীতে নির্বাচনে জামায়াত নির্ভরতা থাকায় কর্মীরা খুব একটা মাঠে নামতেন না। এবার তাদের মাঠে নামানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। পরনির্ভরশীলতা ভালো নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের এই অভিজ্ঞতা জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

জামায়াতের নগর কমিটির আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবারই প্রথম মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন। গতবার তিনি দলের সিদ্ধান্তে আরিফকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। বিনয়ী ও সাদা মনের মানুষ হিসেবে সর্বত্র পরিচিত জুবায়ের এবার প্রার্থী হওয়ায় সর্বত্র চলছে ব্যাপক আলোচনা। নাগরিক ফোরামের ব্যানারে লড়ছেন অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তার সমর্থকরা শুরু থেকেই মাঠে কাজ করছেন, ভোটারদের কাছে টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট চাইছেন। ভোটারদের সাড়া পাওয়ায় তারা আশাবাদী, এবার জয়ের মালা পরবেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সিলেট নগরীতে জামায়াতের কত ভোট রয়েছে- এ নিয়ে এখনো বিশ্লেষণ চলছে। নগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড. নূরুল ইসলাম বাবুল বলেন, জয়লাভের জন্য দলীয় যে ভোটের প্রয়োজন, আমাদের সে ভোট রয়েছে। নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ হয়, তাহলে ইনশা আল্লাহ জুবায়ের ভাই বিজয়ী হবেন। তিনি বলেন, গোটা নগরীতে টেবিল ঘড়ির পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অনেকের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। 

সিলেট নগরীতে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া বিভিন্ন ইসলামী দলের বেশ কিছু ভোট রয়েছে। এই ভোট পাওয়ার জন্য আরিফ ও জুবায়েরের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। শেষ পর্যন্ত এই ভোট বিভক্ত হয়ে উভয়ের বাক্সে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবার সহজেই জয়লাভ করবেন বলে তার সমর্থকেরা মনে করলেও তা মানতে রাজি নন অনেকে। তাদের ভাষ্য, গত পাঁচ বছর সিলেটের উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাজনৈতিক দমনপীড়ন, ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাস ও সিলেটে নিজ দলের অনেক কর্মীকে খুন এবং এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়াসহ নানা অপকর্মের কারণে বেশির ভাগ ভোটার নৌকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে কামরানের জনপ্রিয়তা থাকায় তিনি এবারো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে গাজীপুর ও খুলনা মার্কা নির্বাচন হলে কামরান বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন- এমন তীর্যক মন্তব্য করছেন অনেকে।

 

সিলেট নগরীর কাক্সিক্ষত উন্নয়নে চাই মহাপরিকল্পনা : জুবায়ের

আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনে নাগরিক ফোরাম মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী, নগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, একই সময়ে যাত্রা শুরু করেও দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন আমাদের থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অমিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট সিটি বিভিন্ন দিক থেকে আজো পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট নগরীর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিলেটকে একটি শান্তির মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

তিনি গত শুক্রবার রাতে নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাবাজার ও ১৮ ওয়ার্ডের কুমারপাড়া পয়েন্টে টেবিল ঘড়ি মার্কার সমর্থনে অনুষ্ঠিত পৃথক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। এ ছাড়াও অ্যাডভোকেট জুবায়ের গতকাল দিনভর নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে পৃথক গণসংযোগ করেন ও উঠান বৈঠকে যোগ দেন।

মিরাবাজার এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বী আলহাজ মঈনুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ছাত্রনেতা ফরিদ আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- সিলেট নাগরিক ফোরামের সদস্যসচিব মো: ফখরুল ইসলাম, লেবারপার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, এলডিপির সিলেট জেলা সভাপতি সায়েদুর রহমান চৌধুরী রুপা, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা জহুরুল হক, এনডিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, বানিয়াচং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার খান প্রমুখ।
এ দিকে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় সমাজসেবী ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াহিদ জাবেদের সভাপতিত্বে ও ছাত্রনেতা ফাহাদ আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

সিলেটে কোনো অন্যায় সহ্য করা হবে না : আরিফ

নগরীর দক্ষিণ সুরমার খোজারখলা এবং বরইকান্দি এলাকায় আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে গতকাল গণসংযোগে অংশ নেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সহসভাপতি, সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের সহধর্মিণী নাজমুন নাহার বেবী। এ ছাড়া আরিফুল হক চৌধুরী দুপুরে নগরীর জেলরোড, নয়া সড়ক এবং উপশহরে গণসংযোগে অংশ নেন। গণসংযোগকালে নাজমুন নাহার বেবী বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর সত্যিকার উন্নয়ন করেছেন বলেই আপনারা আজ তাকে এত ভালোবাসেন। আশা করি, আবারো তাকে নির্বাচিত করে নগরীর বৃহত্তর উন্নয়নের সুযোগ তাকে দেবেন। 
গণসংযোগকালে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দু’টি বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগণ তথা নগরের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেছি। নগরীর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছি, যা আপনাদের কাছে আজ দৃশ্যমান। একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না। 

গণসংযোগে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গৌছ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আবদুল হান্নান তাপাদার প্রমুখ।

অপপ্রচারকারীদের সমুচিত জবাব দেবেন নগরবাসী : কামরান

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, সিলেট শান্তির জনপদ। এখানে বসবাসকারী লোকজন শান্তিপ্রিয়। নির্বাচন উপলক্ষে নগরীতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে না, বিরাজ করছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। কিন্তু বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে কেউ কেউ পরিবেশ ঘোলাটে করতে চাইছেন। বিশেষ করে একজন মেয়রপ্রার্থী ও তার পক্ষের কিছু লোক প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছেন। তবে, তাদের এসব ধোকাবাজিতে এ পুণ্যভূমির মানুষ বিভ্রান্ত হবেন না। তারা ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে অপপ্রচারকারীদের সমুচিত জবাব দেবেন।

গতকাল শনিবার সকালে সিলেট নগরীর করেরপাড়া ও পাঠানটুলা এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে কামরান বলেন, আওয়ামী লীগ তথা নৌকা প্রতীকের বিজয় মানে সর্বত্র উন্নয়নের জোয়ার। তাই আসন্ন নির্বাচনে সবাই মিলে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়নে অংশীদার হোন। সম্পৃক্ত হোন উন্নত ও আধুনিক সিলেট নগরী গড়ার অভিযাত্রায়।
গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেনÑ মহানগর যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার কবির সেলিম, মকবুল হোসেন খান, সুদিপ দে, শান্ত দেব, সৈয়দ গুলজার, লিটন পাল, জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজী মিয়া, ছিদ্দেক আলী, এহিয়া সুমন, দুলু তালুকদার প্রমুখ।

পরে বদর উদ্দিন আহমদ নগরীর পাঠানটুলা ও লন্ডনি রোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত লোকজনের সাথে কুশল বিনিময় করে তিনি আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে সবার দোয়া চান। 
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট মইন উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক আবু তাহের, শেখ আব্দুল হাসনাত বুলবুল, মাসুদ খান সাজন, আব্দুল ওয়াদুদ, রাশেদ আহমেদ, শফায়েত খান, আব্দুল গফুর প্রমুখ।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement