২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আরিফকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ালেন সেলিম

আরিফকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ালেন সেলিম - ছবি : সংগৃহীত

আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে সিসিক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ঘোষণা দেন সেলিম।

এসময় সেলিম বলেন, কালকে যখন আমাকে বাসায় এসে নেতৃবৃন্দ অনুরোধ করেছেন সেটি আমি ফেলতে পারিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত নিদের্শনা ছিল আমার মায়ের। বিএনপি আমার রক্তে, আমার মগজে, আমার মননে। দল থেকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত কবুল করে নিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমার বাসায় সারিবদ্ধভাবে আমার নেত্রী, আমার নেতার ছবি যেভাবে ছিল, সেভাবেই আছে। আমি যখন বাস মার্কায় নির্বাচনী প্রচারণা করে বাসায় ফিরতাম, তখন এগুলো দেখে চোখে পানি আসত।
বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, সব কিছুর ফায়সালার মালিক আল্লাহ। ভুল বোঝাবুঝির কারণেই আমাকে এত দিন পর্যন্ত মাঠে থাকা লাগল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান জানিয়েছেন, বদরুজ্জামান সেলিমকে আবারো মহানগর বিএনপির স্বপদে পুনর্বহাল করা হলো।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কলিম উদ্দিন মিলন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, ডা. শাহরিয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক প্রমুখ।

এছাড়া বদরুজ্জামান সেলিমের মা এবং স্ত্রীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার রাতে সেলিমের বাসায় গিয়েছিলেন বিএনপির একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। সেখানে আলোচনার এক পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে কথা উঠলে সেলিমকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় আরিফুল হক চৌধুরীও সেখানে উপস্থিত হন। কেন্দ্রীয় নেতারা সেসময় সেলিমকে বলেন, ‘তুমি দলের লোক, তোমাকে দলে ফিরিয়ে আনতেই আমরা এসেছি।’
এরপর আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে এখন থেকে আরিফুল হকের পক্ষে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন বদরুজ্জামান সেলিম।

আরো পড়ুন :

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক সিলেটে

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না। চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক। আচরণবিধি উপো করে দলীয় প্রতীক আলোক সজ্জিত করা হয়েছে। নির্বাচনী অফিস স্থাপনে মানা হচ্ছে না বিধিমালা। এ ব্যাপারে নালিশ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে কোনো কোনো মহল থেকে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সিটি করপোরেশন এলাকায় জেলা প্রশাসনের ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবারই ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই দিন বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা মিতা এই জরিমানা আদায় করেন।

সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় প্রকাশ্যে আলোকসজ্জিত কাঠের তৈরি নৌকা রাখায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আলী আহমদ বলেন, নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার আল্লাহু পয়েন্টের কাছে একটি মবিল-পেট্রল দোকানের সামনে আলোকসজ্জিত কাঠের নৌকা কয়েক দিন থেকে রাখা হয়েছে, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হোসেনকে ফোন দিয়ে এ বিষয়টি জানানো হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আলী আহমদ বলেন, জনসম্মুখে নৌকার পক্ষে এসব অপরাধের একাধিক অভিযোগ করা হলেও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখনো নেননি। ফলে তারা প্রতিদিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করার সাহস পাচ্ছেন। 

আলী আহমদ আরো অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে বিশাল স্টেজ, ব্যানার, শত শত চেয়ার ও বেশ কয়েকটি মাইক বাজিয়ে নৌকার পক্ষে সমাবেশ করা হয়, যা আচরণবিধির লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ওসমানী হাসপাতাল একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। এখানে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে মাইক বাজিয়ে জনসমাবেশ করা বেআইনি। অন্য দিকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রকাশ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে বলে আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে। 
এ দিকে কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করতে বিধিমালায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক প্রার্থী তা মানছেন না। নগরীর শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, শাহী ঈদগাহ, সুবিদবাজার, চৌকিদেখি, শেখঘাট, দণি সুরমায় রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস।

কামরানের সভায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের হামলা : বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সিওমেক শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সুজন ও সাব্বিরের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।

নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্যের সুযোগ না দেয়ায় সভা শেষে অতিথিরা মঞ্চ ত্যাগ করার পর এ হামলা চালানো হয়। এর আগে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেকের পরিচালনায় এবং হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক শিউলি আক্তারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক নারী সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা হক। হামলা ও মারধরের সময় হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরা এগিয়ে এলে হামলাকারী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা পালিয়ে যান। অন্য দিকে হামলার খবর পেয়ে আবার মেডিক্যালে ফিরে আসেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি আহত সাদেককে দেখে যান। এ সময় তার সাথে অন্য নেতাকর্মীরাও ছিলেন।

এ দিকে ইসরাইল আলী সাদেকের ওপর হামলার ঘটনায় সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিনুর রশিদ সুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ এ তথ্য জানান।


আরো সংবাদ



premium cement