২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মৌলভীবাজারে চা বাগানে রেড স্পাইডার ও হেলো ফেথিস রোগের প্রার্দুভাব

রোগাক্রান্ত চা গাছ। ছবি - নয়া দিগন্ত।

মৌলভীবাজারে লংলা ভ্যালীর ২২ টি চা বাগানে রেড স্পাইডার ও হেলো ফেথিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার চা গাছের পাতা লাল হয়ে গেছে। চা পাতা লাল হওয়ার কারণে কুঁড়ি গজাচ্ছে না। দুই মাস ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় বাগানগুলোর উৎপাদনে মারাত্মক ধ্বস নেমেছে। রোগ সাড়াতে দফায় দফায় বিভিন্ন কীটনাশক স্পে করা হচ্ছে। চেষ্টাকরেও তা দমন করা যাচ্ছে না। রোগ বালাইর কারনে পাতা উত্তোলন ব্যাহত হওয়ায় চা-শ্রমিকরা মসজিদ , মন্দিরে প্রার্থনাকরছে।

বাগান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চা বাগানে এমন রোগ দেখা দেওয়ায় শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মালিকপক্ষ হতাশ হয়ে পড়েছেন। এখন চা-পাতা উত্তোলনের ভরা মৌসুম। প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি চা পাতা উত্তোলন করার কথা থাকলেও বিগত দু’মাস ধরে পাতা উত্তোলন হ্রাস পাচ্ছে। রোগবালাইর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চা-উৎপাদনে। বাগানগুলোতে ২০ ভাগ পাতা উৎপাদন কমে আসছে। বৃষ্টিপাতের তারতম্য হওয়ায় চা বাগানের ইতিহাসে এমন উৎপাদন বিপর্যয় হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন। রোগটি সাড়াতে চা বাগান কর্তৃপক্ষ বিষেশজ্ঞ পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও কোনো কাজ হয়নি।

রাজনগর মাথিউড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক জাফর আহমদ জানান, রেড স্পাইডার ও হেলো ফেথিস নামের দু’টি রোগের কারনে এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ রোগটি পোকামাকড় দ্বারা পুরো বাগানে ছড়িয়ে পড়েছে। চা গাছের পাতা কালো ও কুঁড়ি লাল হয়ে যাওয়ার কারণে পাতা সূর্যের আলো থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। তবে গতকয়েক দিনের অনুকুল আবহাওয়ায় এ রোগ অনেকটা সেরে যাচ্ছে।

কুলাউড়া উপজেলার লংলা ভ্যালীর সভাপতি শহীদুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে মৌলভীবাজার জেলার চা বাগান গুলোতে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৭ সালেও আশানুরূপ উৎপাদন হওয়ায় চা শিল্পের প্রতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। চা বিক্রি করে বাগানগুলো লাভবান হওয়ায় অনাবাদী জমিতে নতুন প্লানটেশন করা হয়। ২০১৮ সালের শুরুতেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় আশা করা হচ্ছিল, এবারও চা বাগানে বাম্পার ফলন হবে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসতেই চা বাগানে এ বিপর্যয় দেখা দেয়। প্রথমে বালাইনাশক প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো বাগানে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। লংলা ভ্যালীর লংলা, হিঙ্গাজিয়া, বড়মচাল, কালুটি, গাজীপুর, মেরিনা, ইটা, মাথিউড়া, রাজনগর, লোহাইউনি, করিমপুর, হাজীপুর কালুটি, মুড়াইছড়াসহ মোট ২২টি বাগানে কমবেশী এ রোগের প্রার্দুভাব রয়েছে।

ইটা-চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নাসিম আহমেদ, জানান বাগান ব্যবস্থাপনা পক্ষের অবহেলা রয়েছে। তারা সময় মত বাগানের পরির্চচা করেন না। বাগানে আগাছা ও অবাদে গরু ছড়ানোর কারনে কালো মশা, লাল মাকড়শার বিস্তার ঘটে। যে কারনে এ রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। হতাশায় পড়ে ইটা চা-বাগানের শ্রমিকরা মসজিদ, মন্দিরে প্রার্থনা করছে।

ইটা বাগানের ব্যবস্থাপক ফারুক আহমদ বলেন ক্রমান্নয়ে পরির্চচার কাজ চালানো হচ্ছে। অবাদে গরু ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইটা চা-বাগানের শ্রমিক আইয়ুব সর্দার জানান গত মৌসুমের তুলনায় ২০ ভাগ কম পাতা উত্তোলন হয়েছে। রাজনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক রেজওয়ানুল আলম জানান, উৎপাদনের ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে বাগানে এ জাতীয় রোগ ছড়িয়ে পড়ায় পাতা সংগ্রহ করা হ্রাস পাচ্ছে। এতে করে বাগানগুলো লোকসানের মধ্যে পড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement