২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন রক্ষা পাবে কি !

রাজ বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসক - ছবি: নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়ির প্রাচীন নিদর্শন রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজ বাড়ি নির্দশন দেখতে এসে জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম এ আশ্বাস দেন।

জেলা প্রশাসক রাজ বাড়ির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং এর সীমানা চিহ্নিত করে লাল পতাকা টানিয়ে দেন। এসময় জেলা প্রশাসকের সাথে তার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায় যে, উপজেলার উত্তর বড়দল ও দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী একতা নামক স্থানে অবস্থিত এক কালের প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। বর্তমানে এটি হলহলিয়া নামে পরিচিত।

প্রায় ১২০০ বছর পূর্বে স্থাপিত রাজা বিজয় সিংহের নিদর্শন এটি। প্রায় ৩০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত রাজ বাড়িটিতে এক সময় বন্দীশালা, সিংহদ্বার, নাচঘর ও বিশাল দরবার ছিল। কিন্তু সংস্কারের অভাবে রাজ বাড়িটি তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও অসৎ ভূমি অফিসারদের সহযোগীতায় নাম মাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে ভবন গুলো ভেঙ্গে বিক্রি করে দেয়া হয়।

বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা যায়, লাউড় রাজ্যের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্বে জৈন্তায়া, উত্তরে কামরূপ সীমান্ত ও দক্ষিনে বর্তমানে ব্রাহ্মনবাড়িয়া পর্যন্ত ছিল লাউড় রাজ্যের সীমানা। এ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিত্র নামে এক ব্রাহ্মন।

সম্রাট আকবরের শাসনামলে লাউড় রাজ্যে আক্রমনের শিকার হলে কিছু দিনের জন্য এর রাজধানী বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে স্থানান্তারিত হয়েছিল। পরে লাউড় রাজ্যের গোবিন্দ সিংহ সেটা পুনুরুদ্বার করেন। ঐতিহাসিক হান্টারের মতে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল অধিকারের পর লাউড় প্রথম বারের মতো তার স্বাধীনতা হারায় এবং মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়।

লাউড় রাজ্য নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে গত বছরের ২০ ও ২১ নভেম্বর ২০১৭ সালে মাঠ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন অধ্যাপক ডঃ অসিত বরণ পালের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অসিত বরণ পাল বলেছিলেন, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কথা বলে সামনের দিকে অগ্রসর হবো।

প্রাচীন এই নিদর্শনটিকে সংরক্ষণ করা হলে নতুন প্রজন্ম লাউড় রাজ্যের ইতিহাস জানতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন এই অধ্যাপক।

সমাজ সেবক স্থানীয় মাসুক মিয়া জানান, অযত্ন আর অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের শেষ নির্দশন রাজ বাড়িটি বিলুপ্তির পথে। তাই এই রাজ বাড়িটি রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন।

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, ইসকনের লোকজন বলেছিল তারা রাজ বাড়িটির সংস্কার করবে। আমার সহযোগিতা চেয়েছিল। কিন্তু এরপর তারা যোগাযোগ করেনি।

তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক এসছেন তাই এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আশা করি। 

এছাড়া লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়া, টাংগুয়ার হাওর, বারেকটিলা, যাদুকাটাসহ অন্যান্য দৃষ্টি নন্দন স্থানের মত একটি আকর্ষনীয় পযটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি পাবে বলেও আশা করেন তিনি।

শনিবার জেলা প্রশাসক এই এলাকা ও রাজবাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এই ঐতিহাসিক নির্দশনটি রক্ষার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব জানান, লাউড় রাজ্যের হলহলিয়ায় স্থাপিত রাজ বাড়ির শেষ নির্দশন টুকু রক্ষণাবেক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement