২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মৌলভীবাজার শহরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাওরে অবনতি

-

মৌলভীবাজরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। শহরের বড়হাটের মনু বাধের বাড়ইকোনা ভাঙ্গন দিয়ে শহরে পানি প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। শহর থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমানের সহযোগিতা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় বুধবার বাধ মেরামতের কাজ চলছে । নতুন করে ভাঙ্গনস্পটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সদর উপজেলা ক্যাম্পাসে কিছুটা পানি রয়েছে। শহরে বন্যার ছোবলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত জেলার রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কুশিয়ারা তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের ভাঙ্গন দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি কাওয়াদীঘি হাওরে প্রবেশ করছে। এতে হাওর জনপদে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি। ৫০ ফুট ভাঙ্গন দিয়ে কাওয়াদীঘি হাওর অঞ্চলের উত্তরভাগও মুন্সিবাজার, ফতেপুর ইউনিয়নের ২০/২৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
গত দু’দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে বাধঁ মেরামত করা যাচ্ছে না। বুধবার বিকেল পর্যন্ত এ ভাঙ্গন দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিক বলেন এই ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করায় উত্তর ভাগ ইউনিয়নের রাজাপুর, সুপরা কান্দি, সোনামপুর, সুরিখাল, কান্দিগাও,কেশরপাড়া, ওমরপুর , জোড়াপুর, সাপাত পুর, রুস্তুম পুরসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। হাওরজনপদের মুন্সিবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালেক মিয়া জানান এ ভাঙ্গনে হাওর জনপদের বাসিন্দাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। মুন্সিবাজার ইউনিয়নের কাজিরহাট, সোনাটিকি,চালবন,নিদনপুর,জামুরা, মিয়ারকান্দি,মনতলা, পথেরগাও, গজনাইর কান্দি এ ১০টি গ্রামে বন্যা দেখাদিবে। ফতেপুর ইউনিয়নের সোনালোহা, কাশিম পুর, আব্দুল্লাপুর , জাহিদ পুর, বেত্াহুঞ্জা, বেরকুড়িসহ ৩টি ইউনিয়নে ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দী রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কামারচাক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে ভিটে মাটির টানে বাড়ি ফিরছে। বেশিরভাগ বাড়ি থেকে পানি নামেনি। ধীর গতিতে পানি নামতে শুরু করেছে। বাড়ি ঘর এখনো বসবাসের উপযোগি হয়ে ওঠেনি। কেহ কেহ বাড়ির কাদা সরানোর জন্য কাজ করছেন।
কড়ালগ্রাসি বন্যার বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে পানি নামার সাথে সাথে নানা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কাঁচা ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হচ্ছে। বাড়ি ঘরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির নানা চিত্র।
জানা গেছে, জেলার কুলাউড়া রাজনগর, কমলগঞ্জ ও সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ স্থান থেকেই পানি নেমে যাচ্ছে।
রাজনগর কামারচাক ইউনিয়ন, কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়ন, কমলগঞ্জ পতনউষার ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এখনো পুরোপুরিভাবে পানি না নামলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ১১শ’ ৬৭ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন।
রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা দেখা যায়, পানি নেমে যাওয়াতে রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি চিহ্ন। অনেকের বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যাপক আকারে ধানচাল নষ্ট হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি।
কামারচাক ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর ঠেলাগাড়ি চালক কদর মিয়ার বসত ঘরে কমর সমান পানি ছিল পানি নামার সাথে সাথে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।
পঞ্চানন্দ পুরের আব্দুর রউফ রোপন বলেন ঈদের আগের রাত ১১ টায় যখন আকস্মিক ভাবে বানের পানি বাড়তে শুরু করে তখন ভয়ে আমার মেয়ে ছেলে পরিবারের লোকজন কান্নাকটি শুরু করে। আমি আতংকিত হয়ে একটি কলাগাছ কেটে বুকে নিয়ে সাঁতার কেটে ২ কিওলোমিটার রাস্তা পার হয়ে তারা পাশা বাজারে গিয়ে একই উপজেলার মেদেনী মহল গ্রাম থেকে ভেঙ্গু মিয়ার একটি নৌকা ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করে পিকাপ ভ্যানে করে । তারাপাশায় নিয়ে আসি । সেখান থেকে পানিতে নামিয়ে বাড়িতে এসে আমার পরিবার পরিজনকে রাত ১ টার সময় উদ্ধার করি। মশাজান গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কোন বাড়িতে লোকজন নেই। বাড়ির ওঠানে এখনো পানি রয়েছে পথঘাট ডুবে রয়েছে। এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। শুকনা খাবারের চাহিদা পুরণ হচ্ছে কারন বাজারে চিড়া সংকট দেখা দিয়েছে। কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম বলেন প্রাথমিক হিসেবে তার ইউনিয়নে ৩ হজার ৫০০ শত কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।
আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ রাস্তাঘাটে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ পাকা সড়কের পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। কোথাও আবার রাস্তার পাশ ভেঙে সংকীর্ণ হয়ে গেছে। স্কুল কলেজের আসবাবপত্র ও ভবনের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফলে বন্যা পরবর্তী সময়ে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম

সকল