২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোরগ দিয়ে জীবন বাঁচালেন তমিজা বেগম

মোরগ দিয়ে জীবন বাঁচালেন তমিজা বেগম। -

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে বন্যা কবলিত হওয়ার পরের দিন ১৫ জুন সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে পরের দিন ছিল ঈদুল ফিতর মানুষের ছিল অন্যরকম প্রস্তুতি কিন্তু না ঈদের আনন্দ মুহুর্তে ম্লান হয়ে গেলো।  সময় যাচ্ছে পানি বাড়ছে । আগের অভিজ্ঞতা থেকে স্থানীয় মানুষেরা ধারনা করেছেলেন পানি হয়তো আর বাড়বে না। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে শংকা বাড়ছে মানুষের। বাঁচার আকুতি অনেকের পানির ঢেউয়ের সাথে কান্নার রোল ভেসে আসছে। মানুষ প্রথমে ঘরের ভিতরে কাঠের উপর কাঠ দিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করে যখন ব্যার্থ হয়। তখন শেষ ভরসা অনেকেই ঘরের চালের উপর উঠে নিজেকে রক্ষা করে। সে দিন ছিল কামারচাকবাসীর আতংকের রাত। রাত যত গভীর হচ্ছে গ্রামীন জনপদে মানুষের ভয় আতঙ্ক তত বাড়ছে।

কামারচাক ইউনিয়নের খাসপ্রেমনগর গ্রামে মৃত এলেমান মিয়ার স্ত্রী তমিজা বেগম । স্বামী হারা তমিজা বেগম (৪৮) আলোচিত হাওর কড়াইয়া অন্দোলনের নেতা বীর কুটু মিয়ার ভাইয়ের মেয়ে। তার এক ছেলে এক মেয়ে, ছেলে বিয়ে করে আলাদা ভাবে বসবাস করে। ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে একটি কাঁচা ঘরে বসবাস করেন তিনি। ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজের সময় তমিজা দেখেন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন হয়তো পানি আর বাড়বে না। কিন্তু রাত ৯ টার দিকে তার ঘরে ভিতর বুকসমান পানি। জীবন রক্ষার কোন উপায় না দেখে তিনি ঘরের ধান চাল সব ফেলে দিয়ে নিজের পোষা দুটি বড় মোরগ হাতে নিয়ে মা মেয়ে ঘরের পাশের কাঁঠালগাছে ওঠে পড়েন। বাচাঁর জন্য চিৎকার করেন।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম প্রশাসনের সাহায্য প্রার্থনা করেন। রাতেই কামারচাকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ট্রিম উদ্ধার কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু ওই সময় এক ধরনের অর্থলোভী মানুষ টাকা আয়ের জন্য অবৈধ পথ বেছে নেয়। সুযোগ বুঝে হাজার টাকার বিনিময়ে লোকজনদের উদ্ধার কাজে ব্যস্ত হয়। সাধারণ মানুষের আর্তনাদ তাদের কানে বাজেনি। টাকা তাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে একের পর এক নৌকা আসে যায় তাদের পাশ দিয়ে। কিন্তু কেউ শুনেনি তমিজার চিৎকার। অবশেষে একজন নৌকার মাঝি  কাছে এসে বলেন টাকা ছাড়া পাড় করা যাবে না। তিনি জানালেন তার কাছে কোন টাকা নেই । তমিজা মাঝিকে তার পোষা মোরগ দুটি তাকে দিবেন এমন প্রস্থাব দেন। এমন প্রস্তাবে মাঝি রাজি হয়ে যায় এবং তাদেরকে গাছ থেকে নামিয়ে এনে নৌকায় তুলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারাপাশা বাজারের আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়।

এভাবেই পানি বন্দি অবস্থা থেকে রক্ষা পান তমিজা বেগম ও তার মেয়ে। বুধবার দুপুরে তার সাথে কথা হয় কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের সামনে। তিনি সে রাতের ভয়াল অভিজ্ঞতার গল্প বলেন। মাঝির নাম জানেনা তমিজা বেগম।


আরো সংবাদ



premium cement