১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কমলগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ৫ জনের প্রাণহানী

-

ধলাই ও মনু নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙে গত পাঁচ দিনে ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে শিশুসহ ৫ জন মারা গেছেন। সহস্রাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পাঁচশতাধিক টিবওয়েল অকেজো হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়া প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ চরম মানবেতরভাবে জীবন ধারণ করছেন।
বন্যায় আটকা পড়া লোকদের উদ্ধারে সর্বশেষ কয়েকটি স্থানে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী। ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১২৫০ টি পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় নেয়া প্রায় ছয় হাজার মানুষকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা রান্নাবান্না করে ও শুকনো খাবার বিতরণ করছে। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রমে রোববার থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা শুরু করেছেন। বন্যাক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।
গত ১৪জুন কমলগঞ্জের ধলাই নদীর ১০টি স্থান দিয়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় উপজেলার ইসলামপুর, আদমপুর, আলীনগর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ সদর, পৌরসভা, শমশেরনগর, রহিমপুর, মুন্সীবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়নের ১৪৫টি গ্রামের বাড়িঘরে চার থেকে পাঁচ ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়। এসব এলাকার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
চারদিনের বন্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার কাঠালকান্দি গ্রামের আব্দুল ছত্তার (৫০) ও তার ছেলে আব্দুল করিম (২৫), আলীনগর বস্তির পরিবহন শ্রমিক সেলিম মিয়া (৩৮), শমশেরনগর ভাদাইরদেউলের প্রতিবন্ধি রমজান আলী (৪০) ও রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী গ্রামে মিছির মিয়ার দেড় বছর বয়সি শিশু সন্তান ছাদির মিয়া পানিতে ডুবে মারা যান।
পানির স্রোতে ভারতের কৈলাশহরে যাতায়াতে শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কে কালভার্ট ব্রিজ ধ্বসে পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। শমশেরনগর-মৌলভীবাজার, শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়ক যোগাযোগ তিনদিন বন্ধ ছিল। আদমপুর, পৌরসভা, মুন্সীবাজার, পতনঊষার সহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা, আধাকাঁচা প্রায় সহ¯্রাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়ন সহ উপজেলায় ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয় এবং এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আসা লোকদের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যার শুরু থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে নৌকা ও স্পিডবোট না থাকায় বেশ কিছু পরিবার বাড়িঘরে পানিতে আটকা পড়ায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বৃদ্ধি পায়। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্যায় আটকা পড়া লোকদের উদ্ধারে সর্বশেষ কয়েকটি স্থানে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী টিম।
গত শনিবার বিকাল থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার, মুন্সীবাজার, রহিমপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ পৌরসভা, শমশেরনগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ বন্যা দূর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় নৌকাযোগে পতনঊষার ইউনিয়নের আহমদনগর দাখিল মাদ্রাসায় আশ্রয় নেওয়া বন্যাক্রান্ত তিনশত লোকের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মুন্সীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুনেল আহমদ তরফদার, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, সমাজসেবক হামিদুল হক চৌধুরী বাবর, স্থানীয় ইউপি সদস্য এখলাছুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি’র উদ্যোগে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান কমলগঞ্জে বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকায় শুকনো খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখছেন। এছাড়া কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: জুয়েল আহমদ ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা দুর্গতদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। ঢাকার ব্যবসায়ী মুহিবুর রহমান, মুন্সীবাজারের ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দীন, মুন্সীবাজার-রহিমপুর দরিদ্র কল্যাণ ট্রাষ্ট, কমলগঞ্জ সমাজ কল্যাণ পরিষদ, মীর্জাপুর নবীন সেবা সংঘসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই পানিবন্দি গ্রামে গিয়ে ও আশ্রয় কেন্দ্রে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এদিকে উপজেলার নব্বই শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারনে টিবওয়ল এর পানি ব্যবহার করতে পারচ্ছেন না বানবাসী মানুষজন। এতে করে বন্যাক্রান্ত এলকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ১৫ শত বিশুদ্ধ ট্যাবলেট, ৫০ কেজি বিসিং পাউডার বিতরণ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক পানিতে ডুবে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ পর্যন্ত উপজেলায় সহ¯্রাধিক কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর মেরামতে সরকারিভাবে বরাদ্ধ প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, নিহত পরিবারদের ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া সবকটি আশ্রয় কেন্দ্র ও বন্যাপ্লাবিত লোকদের মধ্যে অব্যাহতভাবে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো জানান, বন্যাক্রান্ত কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের রোববার থেকে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement