২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অর্ধেক ভাতাই গেল চাঁদা হিসেবে

জোর করে ভাতাভোগী তাহমিনা বেগমের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন ইউপি সদস্য সুভাসিনী রানী নাথ : নয়া দিগন্ত -

জৈন্তাপুরে মাতৃত্বকালীন ভাতা মহিলা ইউপি সদস্যরা জোর পূর্বক উপজেলা মহিলা কর্মকর্তার ও ইউনিয়ন পরিষদের নামে চাঁদা আদায় করে নিচ্ছেন। আর এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে অন্যসকল ভাতা বন্ধের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।

মঙ্গলবার দুপর ১২টায় জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং ফতেহপুর ও ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের ৯৮জন মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগী মহিলা তাদের ভাতার টাকা উত্তোলন জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শাখায় আসেন। ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের ৪-৫-৬নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সুভাসিনী রানী নাথ ও ৭-৮-৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সাদিকা বেগম ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী মহিলাদের নিকট হতে জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা অফিসারের খরচের নামে ১হাজার ২শত ৫০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করছে।

চাঁদাবাজির ঘটনা জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৭-৮-৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সাদিকা বেগম কেটে পড়ে। কিন্তু কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ৪-৫-৬নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সুভাসিনী রানী নাথ চাঁদা আদায়ের সময় ক্যামেরা বন্ধী হন।

মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কহাইগড় ২য় খন্ডের আমির উদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া বেগম, একই এলাকার বাদশা মিয়ার স্ত্রী তাহমিনা বেগম, ময়নুউদ্দিনের স্ত্রী রহিমা বেগম,  হেলাল আহমদের স্ত্রী সালমা বেগম তাদের কোলের শিশুদের নিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা উত্তোলন করতে আসেন। তারা এই প্রতিবেদককে জানান- মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য প্রথমে আবেদন বাবত আমাদের নিকট হতে ইউপি সদস্যরা পাঁচশ টাকা করে অগ্রিম নিয়েছে যা উপজেলায় দিতে হবে বলে জানান। এরপর ভাতা উত্তোলন করে ব্যাংক থেকে বের হলে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি চৌকিদার আব্দুর রহিমের মাধ্যমে আমাদের গতিপথ রোধ করেন। মহিলা সদস্যরা জনপ্রতি ৫শত টাকা এবং চৌকিদার ২৫০টাকা করে জোর করে আদায় করেন। ভাতার জন্য আমরা তাদেরকে মোট ১হাজার ২শত ৫০টাকা করে চাঁদা দিয়েছি। আমরা চাঁদা না দিলে পরবর্তীতে আর কোন ভাতাদীর সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না এবং পরিবারের অন্য যারা সুবিধা পাচ্ছেন তাদের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে চৌকীদারের মাধ্যমে হুমকি দেন ইউপি সদস্যরা। আমরা বাধ্য হয়ে তাদের দাবি অনুযায়ী চাঁদা দিয়েছি।

চাঁদা আদায়কালে ইউপি সদস্য সুভাসিনী রানী নাথের ছবি তোলা হয়। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর তিনি বলেন, টাকা গুলো ভাতা ভোগীরা উপহার হিসাবে আমাদেরকে দিয়েছেন। আমরা কোন চাঁদা নেই নাই। ভাতাভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন ।

বিষয়টি জানতে জৈন্তাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাহমিনা বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন- আমরা বিনা খরছে তাদের যাবতীয় কাজ করে দিয়েছি। শুধুমাত্র ১০টাকা মূল্যে তাদেরকে কৃষি ব্যাংকে একাউন্টের করে দেওয়া হয়েছে। কারো নামে চাঁদা আদায়ের বিষয় আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

চিকনাগুল ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ সিলেটে থাকায় মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে জানান- আমার পরিষদ হতে এসকল কাজে কোনরুপ অর্থ লেনদেন করা হয় না। কেউ এই বিষয় কিছু করে থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। ঘটনার সত্যতা থাকলে সংবাদ প্রকাশে আমার কোন আপত্তি নেই।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম এই প্রতিবেদককে বলেন- কিভাবে একজন ইউপি সদস্যা মহিলা হয়েও একজন মায়ের কাছ হতে চাঁদা আদায় করছে ভাবতেও অবাক লাগে। মাতৃত্বকালীন মহিলাদের কাছ হতে চাঁদা নেওয়া হয় এর চেয়ে লজ্বার বিষয় কিছুই নেই। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল