কাশ্মিরিরা নিজেদের ভারতীয় বলে মনে করে না : ফারুক আবদুল্লাহ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০৫
জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, এই মুহূর্তে কাশ্মিরিরা নিজেদের ভারতীয় বলে মনে করে না। তারা ভারতীয় হতে চায় না। তারা বরং এখন চীনা শাসনে থাকতে চাইবে। তিনি আরো বলেন, কাশ্মিরিদের সাথে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকদের মতো আচরণ করা হচ্ছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টির প্রধান ও চার দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মিরে সবচেয়ে পরিচিত ‘ভারতপন্থী’ মুখ আবদুল্লাহ দি ওয়্যারকে দেয়া জোরালো ও আবেগময় এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
৪৪ মিনিটের সাক্ষাৎকারে আবদুল্লাহ বলেন, কেবল কোনো প্রতিবাদ নেই বলেই কাশ্মিরের জনগণ ২০১৯ সালের আগস্টের পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নিয়েছে বলে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দাবি পুরোপুরি ফালতু একটি বিষয়।
তিনি বলেন, প্রতিটি রাস্তা থেকে সৈন্য ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলে লোকজন লাখে লাখে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে আসবে। আবদুল্লাহ বলেন, নতুন ডোমিসাইল আইন করা হয়েছে উপত্যকায় হিন্দুদের বন্যা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা সৃষ্টির জন্য। তিনি বলেন, এটি কাশ্মিরি জনগণের মনকে আরো বিষিয়ে তুলেছে।
কাশ্মিরিরা কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কিভাবে দেখে, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ বলেন, তারা গভীরভাবে মোহমুক্ত। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। যে আস্থা একসময় কাশ্মিরকে অবশিষ্ট দেশের সাথে বেঁধেছিল, তা পুরোপুরি ছিঁড়ে গেছে। তিনি ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মিরের সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রায় ৭২ ঘণ্টা আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, তিনি অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়ার জন্য বৈঠকে বসেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, উপত্যকায় এত সৈন্য কেন এবং কোনো সামরিক হুমকি পাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে কি না।
আবদুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পিতভাবে তার মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা চালান যে, নিরাপত্তাগত কারণেই সৈন্য বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, মোদি অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক নিয়ে একটি কথাও বলেননি। আবদুল্লাহ বৈঠক থেকে এই বিশ্বাস নিয়ে বের হন যে, অনুচ্ছেদ দু’টি পরিবর্তন করা হচ্ছে না। জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি একমত হন যে, প্রধানমন্ত্রী তাকে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করেছেন।
আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট হঠাৎ করে যখন সাংবিধানিক পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করা হলো, ন্যাশনাল কংগ্রেস ও অন্য সব মূলধারার রাজনৈতিক দল কাশ্মিরিদের চোখে খারাপভাবে মূল্যায়িত হলো। নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি দুই কূলই হারিয়েছেন। কেন্দ্র তাকে মনে করে বিশ্বাসঘাতক এবং তাকে গ্রেফতার করে। আর কাশ্মিরিরা তাকে ভারতের দাস মনে করে এবং এটাকে আবদুল্লাহর যথার্থ প্রাপ্তি বলছে। তারা তাকে গালাগাল করে, তাকে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে বিদ্রুপ করে। এটি তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়, কষ্ট দেয়।
তিনি বলেন, অবশ্য, ৭-৮ মাস আটক থাকায় তার ও অন্যান্য মূলধারার দল কাশ্মিরির চোখে কিছুটা মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। লোকজন এখন বুঝতে পেরেছে যে, তারা ভারতের দাস নয়।
আবদুল্লাহ বলেন, ন্যাশনাল কংগ্রেস ও অন্য দলগুলো ২০১৯ সালের আগস্টের গোপকার ডিকলারেশন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
চলতি বছরের আগস্টে তা আবারো বলা হয়েছে। এতে কাশ্মিরিদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এর মানে হলো, অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাজ্য মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন, তিনি তার মৃত্যু পর্যন্ত এর জন্য লড়াই করে যাবেন, অবশ্য তা হবে শান্তিপূর্ণ।
আবদুল্লাহ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ওপর তার আস্থা আছে। তিনি আশা করছেন, তার দল যে স্থগিতাদেশ আবেদন করেছে, তার পক্ষেই রায় দেয়া হবে। আবদুল্লাহ দ্য ওয়্যারকে বলেন, কাশ্মিরের বৃহত্তর স্বার্থে মুফতি ও আবদুল্লাহ পরিবার তাদের অতীত মতভেদ চাপা দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, মেহবুবা মুফতি তার ছেলে ওমর ও তার সাথে রাজনৈতিকভাবে অনেক ঘনিষ্ঠ।
তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহেই তার সাথে তার যোগাযোগ হয়। তিনি সাক্ষাৎকারে আরো ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, কেন মেহবুবা মুফতিকে মুক্তি দেয়া হয়নি। তিনি কি অপরাধী? টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা