২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দিল্লি রণক্ষেত্র, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯

- সংগৃহীত

মঙ্গলবার সকাল থেকেই নতুন করে উত্তপ্ত উঠল ভারতের রাজধানী দিল্লি। দিল্লিতে সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ এখন রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই সংঘর্ষ দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সংঘর্ষে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯। পাশাপাশি গুরুতর আহত অবস্থায় দিল্লির জিটিবি হাসপাতালে আরো ৩০ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে যান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তার ডেপুটি উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে গত তিন দিন ধরেই ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। মঙ্গলবার সকালে দিল্লির মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীতে আবারো সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরস্পরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় পাথরবৃষ্টি। আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও। দুপুরে গুলিও চলে সেখানে। সংঘর্ষের মাঝেই মৌজপুরে একটি ই-রিকশায় ভাঙচুরও চালানো হয়। রিকশার যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্রও লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‌্যাফ)।

তবে মঙ্গলবার বেলা যত বাড়তে থাকে, নতুন করে ততই বাড়তে থাকে অশান্তি। দুপুর ২টা নাগাদ ভজনপুরার কাছে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। লাঠি হাতে একে অপরের উপর চড়াও হন দু’পক্ষের লোকজন। চাঁদবাগের কাছেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সোমবারের মতোই ফের পরস্পরকে লক্ষ্য করে তারা পাথর ছোড়ে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত তিন দিন ধরে সংঘর্ষ চললেও, এ দিনও এলাকায় তেমন পুলিশ চোখে পড়েনি। এজন্য সংঘর্ষ আরো চরম আকার ধারণ করে।

মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীর মতো একই পরিস্থিতি কারওয়াল নগরে। ভোররাতে সেখানে একটি টায়ার কারখানায় বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গিয়েছে। আগুন ধরানো হয় বেশ কিছু গাড়িতেও। তবে পুলিশি নিরাপত্তা না পাওয়ায় এখনও পর্যন্ত সেখানে গিয়ে পৌঁছয়নি দমকলবাহিনী। উত্তর-পূর্ব দিল্লির দমকল বিভাগের ডিরেক্টরের তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার থেকে এ দিন ভোর ৩টা পর্যন্ত দিল্লির নানা প্রান্ত থেকে তাদের কাছে ৪৫ বার ফোন এসেছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে তাদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। একটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

এদিকে গোটা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশও। তাদের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে,‘পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সংঘর্ষ অব্যাহত বলে ফোনে লাগাতার অভিযোগ পাচ্ছি আমরা।’

সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করায় সোমবারই দিল্লির একাধিক মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়। ওই সমস্ত স্টেশনে বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচলও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলও বন্ধ রাখা হয়েছে। একাধিক জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।

সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায় এফআইআর দায়ের করতে চেয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্য তথ্য কমিশনার ওয়াজাহত হাবিবুল্লা। বুধবার তার সেই আবেদনের শুনানি করবে শীর্ষ আদালত। অন্য দিকে, গোটা ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা (সিট) আনা নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আরও কয়েকটি আবেদনের শুনানি রয়েছে বুধবার। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) তুলে নেয়া সংক্রান্ত শাহিনবাগের তরফে যে দু’টি আবেদন জমা পড়েছে, বুধবার তারও শুনানি করবে শীর্ষ আদালত।

রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। তা নিয়ে সোমবারই লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলের সঙ্গে একদফা কথা হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। বাহিনী পাঠানো হবে বলে বৈজল তাকে আশ্বস্ত করেছেন বলে সেই সময় জানান কেজরিওয়াল। কিন্তু এ দিন নতুন করে সংঘর্ষ ছড়ানোয় ফের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

টুইটারে কেজরিওয়াল লিখেছেন,‘দিল্লির কিছু জায়গায় যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে চিন্তিত আমি। শহরের সর্বত্র যাতে শান্তি বজায় থাকে, একজোট হয়ে আমাদেরই তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সকলকে আমার অনুরোধ, সংঘর্ষ ত্যাগ করুন। যেখানে যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানকার বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসছি আমি। পদাধিকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা হবে।’

দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার রাতেই দিল্লি পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মুহূর্তে ভারতের রাজধানীতে রয়েছেন। তাই যত শিগগির সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ দিন দুপুরেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অনিল বৈজল এবং অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ।

উল্লেখ্য, সিএএ-র বিরুদ্ধে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল দিল্লির জাফরাবাদ, সীলামপুর-সহ একাধিক জায়গায়। কিন্তু রোববার সেখানে সিএএ-র সমর্থনে পাল্টা মিছিল করেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তিন দিনের মধ্যে বিক্ষোভ না সরালে তারা কাউকে মানবেন না, রাস্তায় নেমে আসবেন বলে হুমকি দেন তিনি। তারপরই জাফরাবাদ-সহ আশাপাশের এলাকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। সিএএ বিরোধীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সিএএ সমর্থকরা। সোমবার মৌজপুর, গোকুলপুরী-সহ একাধিক এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাতে এক পুলিশসহ ৭ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হেড কনস্টেবল রতনলাল, শাহিদ, মহম্মদ ফুরকান, রাহুল সোলাঙ্কি এবং নাজিম। বাকি দু’জনকে শনাক্ত করা যায়নি। এ ছাড়াও ইটের আঘাতে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্র : আনন্দবাজার।


আরো সংবাদ



premium cement
আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ

সকল