২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমদানি করা পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে ভারত

পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়লেও এখনো রফতানি বন্ধ রেখেছে ভারত - ছবি : বিবিসি

বিদেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ রাজ্যগুলোর কাছে বেচতে না-পেরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ মাত্র দশ রুপিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

সরকারের আশঙ্কা, দ্রুত এই পেঁয়াজগুলোর গতি করতে না পারলে মুম্বাইয়ের জহরলাল নেহরু পোর্টের গুদামেই এই পেঁয়াজের চালানগুলো পঁচে পঁচে নষ্ট হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা দ্য মেটালস অ্যান্ড মিনারেলস ট্রেডিং করপোরেশন (এমএমটিসি) বিদেশ থেকে এই পেঁয়াজ আমদানির দায়িত্ব পেয়েছিল।

তারা এখন এই পেঁয়াজের ই-অকশন বা ইলেকট্রনিক নিলামের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর জন্য টেন্ডারও তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।

দিল্লিতে সরকারি সূত্রগুলো বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, মাত্র দুসপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজের জন্য রাজ্যগুলোর কাছে ৪৮-৫৪ রুপি প্রতি কেজি দাম চাওয়া হয়েছিল।

কিন্তু এখন পেঁয়াজের মানভেদে মাত্র ১০ থেকে ২৫ রুপি দাম পেলেই এমএমটিসি এই পেঁয়াজ বেচে দিতে প্রস্তুত।

অথচ ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নিল এমন একটা সময়ে যখন ভারত থেকে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, নেপাল বা শ্রীলঙ্কাতে পেঁয়াজ রফতানিতে এখনো নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ভারত আচমকাই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় সেখানে পেঁয়াজের দাম আকাশ ছুঁয়েছিল।

প্রায় পাঁচ মাস পরে আজো বাংলাদেশ সেই অভাবনীয় পেঁয়াজ সঙ্কট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

এমনকি, দিল্লিতে এসে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুযোগের পরও ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি শুরু করেনি।

সে সময় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার যুক্তি হিসেবে ভারত খারাপ ফলন এবং দেশের বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথাই বলেছিল।

তখনই অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার এমএমটিসি’র মারফত তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার ইত্যাদি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।

সরকারি ওই সংস্থাটি এ পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানিতে প্রায় ২২৬ কোটি রুপি খরচ করেছে, কিন্তু ভারতেরই বিভিন্ন রাজ্যের কাছে তারা মাত্র ১৮ কোটি রুপির পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরেছে।

এমএমটিসি সূত্রগুলো বলছে, এপর্যন্ত মোট আমদানির মাত্র ৮ শতাংশ বিভিন্ন রাজ্য সরকার কিনেছে, বাকি পেঁয়াজ অবিক্রিতই থেকে গেছে!

তাদের সমস্যা আরো বাড়িয়ে হরিয়ানা সরকার ১১০০ মেট্রিক টনের একটি চালান খাওয়ার যোগ্য নয়, এ কথা বলে গত মাসে ফেরত পাঠায়।

এই পরিস্থিতিতে বিপুল ক্ষতির ধাক্কা কিছুটা কমানোর চেষ্টায় এমএমটিসি’র সামনে পেঁয়াজের অভাবি বিক্রি (ডিসট্রেস সেল) করা ছাড়া কার্যত কোনো উপায় নেই।

সে কারণেই তারা এই চালান সস্তায় নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভারতের খুচরো বাজারেও কিন্তু ইতিমধ্যে পেঁয়াজের দাম অনেকটা কমে এসেছে।

ভারতে খোলা বাজারে যে পেঁয়াজ অক্টোবর-নভেম্বর ১৫০ রুপি কেজিতেও বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন ৫০ রুপি বা তারও নিচে নেমে এসেছে।

ই-কমার্স গ্রসারি সাইটগুলোতেও রাজধানী দিল্লিতে মাত্র ৫৬ রুপি কেজিতে পেঁয়াজ ঘরের দরজায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

ফলে সরকার এখনো কেন পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না, তা ভেবেই পাচ্ছেন না এ দেশের বহু পেঁয়াজ রফতানিকারক।

তামিলনাড়ুর এস এস এক্সপোর্টসের প্রধান ষান্মুগাভেল যেমন বিবিসিকে বলছিলেন, ‘বাজার এখন অনেকটাই পড়ে গেছে। তাছাড়া সরকারের কাছে বিরাট মজুদও পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।’

‘ওদিকে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশে আমাদের ক্রেতারা এখনো অপেক্ষায় আছেন। ফলে এখনো নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার যুক্তিটা কী, সেটাই বোধগম্য নয়।’

‘আমাদের কোম্পানি যেমন কোয়েম্বাটোরের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে। কিন্তু রফতানি চালু করার ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো সবুজ সংকেতই আমরা পাচ্ছি না’, বলছিলেন তিনি।

রফতানি নিষেধাজ্ঞা এখনো জারি রাখলেও মুম্বাইয়ের বন্দরে পড়ে থাকা পেঁয়াজের অভাবি বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট, পেঁয়াজের ঝাঁঝ ভারতকেও মহা অস্বস্তিতে ফেলেছে।

সূত্র : বিবিসি

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement