ভারতে ‘বেইমান’দের গুলি করে মারার স্লোগান দিলেন বিজেপি মন্ত্রী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৩৭
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য অনুরাগ ঠাকুর প্রকাশ্য জনসভায় বেইমানদের ‘গুলি করে মারার স্লোগান’ উসকে দিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছেন।
দিল্লিতে তার এক নির্বাচনী জনসভায় স্লোগান উঠেছে ‘দেশের গদ্দারদের গুলি করে মারা উচিত’, যাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি নিজে।
বিরোধী রাজনীতিবিদরা প্রায় একবাক্যে বলছেন এই মন্তব্যের জন্য অনুরাগ ঠাকুরের জেল হওয়া উচিত, নির্বাচন কমিশনও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে - তবে ঠাকুরের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি।
অনুরাগ ঠাকুর নিজে এবং বিজেপি নেতারা অবশ্য এই মন্তব্যে কোনও অন্যায় দেখছেন না।
অনুরাগ ঠাকুর দেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতাই শুধু নন, দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি।
দিল্লির আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে রিঠালা-তে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে গিয়ে এই তারকা ক্যাম্পেনার যে স্লোগানে নেতৃত্ব দেন, সেটাই তাকে তীব্র বিতর্কে জড়িয়েছে।
ওই জনসভায় মঞ্চ থেকে অনুরাগ ঠাকুর বারবার আওয়াজ তোলেন ‘দেশের বেইমানদের সাথে কী করা উচিত?’ - যার জবাবে জনতা সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে, ‘**-দের গুলি করে মারা উচিত’।
দিল্লির শাহীনবাগ-সহ দেশের নানা প্রান্তে যারা নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, গদ্দার বলতে তিনি যে তাদের এবং কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির মতো বিরোধীদেরই বোঝাচ্ছেন সে ব্যাপারে কোনও রাখঢাকও করেননি মি ঠাকুর।
আর তার ওই জনসভায় ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই নির্বাচন কমিশনও সেটি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে দেশের সাবেক আইনমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বাল বলছেন, ‘এই ধরনের প্ররোচনামূলক বক্তব্যের জন্য পুলিশ সরাসরি কেন তাকে গ্রেপ্তার করছে না, নির্বাচন কমিশন শাস্তি দিচ্ছে না বা প্রধানমন্ত্রীও কিছু বলছেন না এটা আমার মাথায় ঢুকছে না।’
‘আইনের দৃষ্টিতেও তার বক্তব্য ফৌজদারি দন্ডবিধির অনেকগুলো ধারার লঙ্ঘন।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত ভূষণও টুইট করেছেন, ‘দেশের ক্যাবিনেটে নয় - অনুরাগ ঠাকুরের ঠাঁই হওয়া উচিত জেলে’।
শিবসেনা মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী লিখেছেন, গদ্দারদের গুলি মারা থেকে অবকাশ পেলে অর্থমন্ত্রীর উচিত হবে দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির দিকে নজর দেওয়া।
আর হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন হিটলারের অর্থমন্ত্রী ওয়াল্টহার ফাঙ্কের, যুদ্ধাপরাধের জন্য পরে যার শাস্তি হয়েছিল।
হিমাচল প্রদেশের বিজেপি নেত্রী অঞ্জনা ঠাকুর অবশ্য বিরোধীদের উদ্দেশ্যে পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘দেশের ভালর জন্য কেউ স্লোগান দিলে এরা ঝাঁপিয়ে পড়তে এতটুকু সময় নেন না!’
‘অথচ জেএনইউ-তে যখন বলা হয় 'ইনশাল্লাহ, ভারত একদিন টুকরো টুকরো হবে' তখন আপনারা কোথায় থাকেন?’
দিল্লির বিজেপি এমপি পরভেশ সিং ভার্মাও অনুরাগ ঠাকুরের বক্তব্যকেই সমর্থন করে বিবৃতি দেন।
তিনি বলেন, ‘যে আগুন একদিন কাশ্মির লাগানো হয়েছিল ও কাশ্মিরী পন্ডিতদের মেয়ে-বোনরা ধর্ষিতা হয়েছিলেন, দেশের আরও নানা জায়গার মতো তা এখনও দিল্লিতেও লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে।’
‘সেই আগুন দিল্লিবাসীর ঘরেও ঢুকবে কি না তা আমাদেরই ভেবেচিন্তে স্থির করতে হবে’, বলেন মি ভার্মা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই বলছেন, ভারতে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদকে বিজেপি প্রথম থেকেই দেশদ্রোহের লেবেল দিতে চাইছে - আর অনুরাগ ঠাকুরের স্লোগান সেটারই প্রতিফলন।
আর গোটা বিতর্ক নিয়ে মি ঠাকুর নিজে একটাই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন, ‘দিল্লির জনতার মুড-টাও তো আমাদের বুঝতে হবে!’ সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা