১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

আসামকে বিচ্ছিন্ন করতে বলে বিপাকে ভারতের মুসলিম ছাত্রনেতা

-

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে বাকি দেশকে সংযুক্ত করে রেখেছে মাত্র ২২ কিলোমিটার লম্বা একফালি সরু ভূখন্ড, যাকে ডাকা হয় ভারতের 'চিকেনস নেক' (মুরগির ঘাড়) বা 'শিলিগুড়ি করিডর' নামে। ভারতের মানচিত্রে জায়গাটিকে সরু, বাঁকানো গলার মতো দেখায় বলেই অমন অদ্ভুত নাম।

সেই 'ঘাড়' মটকে দিয়ে মুসলিমদের উচিত হবে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, জনসভায় এই আহ্বান জানিয়ে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছেন শার্জিল ইমাম নামে এক তরুণ ছাত্রনেতা।

‘আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারলে তবেই সরকার প্রতিবাদকারীদের কথা শুনতে বাধ্য হবে’, এই মন্তব্য করার পর শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে ভারতের অন্তত পাঁচটি রাজ্যে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের হয়েছে।

শার্জিল ইমাম নামে জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি (জেএনইউ) ও মুম্বাই আইআইটি-র ওই সাবেক ছাত্রের বিহারের বাড়িতেও গত রাতে পুলিশ হানা দিয়েছে-তবে তাকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি।

ভারতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি সমাবেশে শার্জিলের বক্তৃতার ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছিল - যাতে তাকে ওই বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। শাসক দল বিজেপির নেতারা ওই মন্তব্যের জন্য শার্জিল ইমামকে গ্রেফতার করারও দাবি জানাচ্ছেন।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র দুদিন আগে টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘শাহীন বাগের আসল চেহারা চিনে নিন!’

ওই ভিডিওতে একটি সমাবেশে বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছিল ছাত্রনেতা শার্জিল ইমামকে, যেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আসামকে ভারত থেকে আলাদা করে ফেলা আমাদের দায়িত্ব। তাহলেই সরকার আমাদের কথা শুনবে।’

‘আসামে মুসলিমদের কী হাল করেছে তা তো আপনারা জানেনই। এখন যদি আমরা আসামে ফৌজ আর রসদ ঢোকা বন্ধ করতে পারি, সেখানে যাওয়ার রাস্তা কেটে দিতে পারি তাহলেই কেল্লা ফতে।’ 

‘আর এটা খুবই সম্ভব-কারণ যে 'চিকেনস নেক' ভারতের সাথে আসামের সংযোগ ঘটাচ্ছে, সেটা তো আমাদের মুসলিমদেরই এলাকা।’

পরে অবশ্য জানা গেছে, শার্জিল ইমামের এই ভিডিও দিল্লির শাহীন বাগে নয়-আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে।

তবে শাহীন বাগ প্রতিবাদের কোঅর্ডিনেশন কমিটি ইতিমধ্যেই তাদের অন্যতম সংগঠক শার্জিল ইমামের ওই মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তবে তার আগেই একের পর এক রাজ্য ওই মুসলিম ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে দিয়েছে।

আসামে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের চার্জ আনার কথা ঘোষণা করে ওই রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা সন্তুষ্ট যে শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে।’

স্বাধীন ভারতে এই প্রথম হিন্দু-শিখ-খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের লড়ার ডাক দেয়া হল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এরপর উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও দিল্লিতেও দেশদ্রোহের অভিযোগে এফআইআর করা হয় শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে।

রোববার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের রাতে বিহারের জেহানাবাদ জেলায় শার্জিলের গ্রামের বাড়িতে হানা দেয় যৌথ পুলিশ বাহিনী, যদিও সেখানে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, আলিগড়ে গিয়ে শার্জিল কী বলেছে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না।

তিনি অবশ্য পুলিশকে আশ্বাস দেন, ‘শার্জিল কোথায় সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই-তবে আমরা পলাতক শার্জিলকে লুকোনোর কোনো চেষ্টাই করব না, বরং তাকে আত্মসমর্পণ করতেই বলব।’

শার্জিল ইমামের ওই মন্তব্য যে ভারতে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনকেই দুর্বল করে দেবে, প্রকারান্তরে তা স্বীকার করে নিয়ে হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও বলেন, তিনি কঠোর ভাষায় ও নিঃশর্তে এ ধরনের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন।

বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, শুধু নিন্দাই যথেষ্ট নয়-শার্জিল ইমামের বিরুদ্ধে কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। দলীয় মুখপাত্র নলিন কোহলি আরো বলছেন, ‘ভারতে আন্দোলনকারীরা কেন তার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে আমন্ত্রণ করে বক্তৃতা দিতে ডেকে আনছেন সেটাও জানা জরুরি।’

তবে এখনো পালিয়ে বেড়ানো শার্জিল ইমামের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু। কাটজু বলেছেন, শার্জিলের বক্তব্য সমর্থনযোগ্য নয় কিছুতেই-তবে তার পরেও সে কোনো অপরাধ করেছে বলে তিনি মনে করেন না।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement