২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাশ্মিরে ৬ মাস পর টু-জি ইন্টারনেট সেবা চালু

- সংগৃহীত

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। গতকাল শনিবার থেকে সেখানে টু-জি সেবা চালু হচ্ছে। তবে কেন্দ্রশাসিত ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট চালু হলেও কিছু নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল থাকবে। সেখানে কেবল ‘তালিকাভুক্ত’ ওয়েবসাইটগুলোরই ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থাকবে। আর গুজব বা উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানো প্রতিরোধ করতে আপাতত সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কাশ্মিরের বাসিন্দাদের জন্য বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণার মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে পাস হয় একটি বিলও। ৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হয় তা। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। আটক করা হয় সেখানকার শীর্ষ রাজনীতিকদের।

গত শুক্রবার সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কাশ্মিরের বিভিন্ন অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ চালু হলেও আপাতত টু-জি পরিষেবাই পাওয়া যাবে সেখানে। পোস্টপেইড মোবাইলের পাশাপাশি প্রিপেইড সিম কার্ডেও ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যাবে। এই নির্দেশনা ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে। বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার এই সিদ্ধান্ত আগামী ৩১ জানুয়ারি আবারো পর্যালোচনা করবে কর্তৃপক্ষ।
কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর থেকেই ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন পড়ে রাজ্যটি। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সম্প্রতি তা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ‘কাশ্মির টাইমস’ এর নির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন এবং কংগ্রেস সদস্য গুলাম নবি আজাদ। কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করেন তারা। ১০ জানুয়ারি বিষয়টি নিয়ে শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে শীর্ষ আদালত জানায়, ‘এভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখা যায় না। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার।’ তার পর থেকেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সেখানকার জনজীবন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে বিজেপির দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতি পূরণ করে নরেন্দ্র মোদি সরকার ওই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণা করে। সেই সময় সরকার যুক্তি দিয়েছিল, ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও ৩৫-এ ধারা দুইটা ‘সাংবিধানিকভাবে দুর্বল’ ‘বৈষম্যমূলক’ ছিল। এগুলো জম্মু ও কাশ্মিরের বিকাশকে বাধা দিয়েছে। ওই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের সময় থেকেই প্রায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় গোটা উপত্যকাকে। বিবিসি ও এনডিটিভি জানায়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সময় আটক হওয়া নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শ্রীনগরে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক সফরকে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে শুক্রবার ওয়াশিংটনে দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস কাশ্মিরি রাজনীতিবীদদের মুক্তির দাবি জানান।

গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণার মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়ার পর উপত্যকার শীর্ষ নেতাদের আটক ও গৃহবন্দী করা হয়। প্রায় পাঁচ মাস পর জানুয়ারির গোড়ার দিকে ১৫ বিদেশী রাষ্ট্রদূতের একটি দলকে ‘সরকারি পাহারায়’ সেখানে নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সময় সাবেক কাশ্মির রাজ্যের আটক তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাহ, ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতি এবং অন্য বন্দীদের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা।
তবে অনুমতি মেলেনি।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই আটক থাকা কাশ্মিরি নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে মার্কিন কূটনীতিক অ্যালিস ওয়েলস বলেন, ‘আমি কাশ্মিরে আংশিক ইন্টারনেট পরিষেবা চালুসহ তাদের কিছু পদক্ষেপ দেখে সন্তুষ্ট। সম্প্রতি আমাদের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশী কূটনীতিকদের জম্মু-কাশ্মির সফরকে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কূটনীতিকদের সেখানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে সফর করার অনুমতি দিতে এবং অভিযোগবিহীন আটক নেতাদের মুক্তি দিতে ভারতের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’ সূত্র : এনডিটিভি।


আরো সংবাদ



premium cement