বিরোধীমত দমনে ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ব্যবহার করছে ভারত
- আল জাজিরা
- ২১ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৩৮
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পুলিশ নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত ৩ হাজারেরও বেশি লোকের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে ‘রাষ্ট্রদ্রোহে’ অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছে।
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস হওয়ার পর বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ আইনকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিরোধী রাজনীতিবিদরা বিভাজনমূলক, বৈষম্যমূলক এবং দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পরিপন্থী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এ আইনকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার কথা উল্লেখ করে ঝাড়খণ্ডের এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশ অতিরিক্ত দমননীতি ব্যবহার করছে। আল জাজিরাকে ঝাড়খণ্ডের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) অনিল পল্টা জানিয়েছেন, সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ দমনের ক্ষেত্রে পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জ্ঞানের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ নম্বর ধারা, যেটা সাধারণভাবে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন হিসেবে পরিচিতি। এ আইনটি ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে পাশ করা হয়। কিন্তু পরিহাসের ব্যাপার হচ্ছে এই ধরনের সেকেলে আইন এখনো ভারতে রয়ে গেছে, যে আইন দিয়ে ঔপনিবেশিক শাসকেরা ভিন্নমতের ওপর হামলে পড়ত।
১৯৬২ সালের কেদার নাথ সিং বনাম বিহার রাজ্যের এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায়ে এই ১২৪-এ নম্বর ধারার প্রয়োগ সীমিত করে দিয়েছিলেন, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা সহিংসতা উসকে দেয়ার’ মতো কাজের ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগ করা যাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ধারা ইচ্ছেমত ব্যবহার করে মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে। যারাই জাতিসত্তা ও সুনির্দিষ্ট নীতির প্রসঙ্গে সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছেন, তাদেরই এই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এমনকি তাদের কথায় সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হলেও। এর সবচেয়ে সাম্প্রতিক নজির হচ্ছে, ঝাড়খণ্ড রাজ্যে কয়েকহাজার প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারতে ভিন্নমত দমনে বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এই আইনটি ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১৮ মাসে, খনিজ সমৃদ্ধ ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ১০ হাজারেরও বেশি উপজাতি কৃষককে তথাকথিত উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করার জন্য ১৯ টি পুলিশি মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সমালোচনার মুখে ঝাড়খণ্ডের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্তর্গত তার পূর্বসূরীর দ্বারা চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সোরেন আল জাজিরাকে বলেন, তিনি ধনবাদ জেলার (একটি শ্রেণীর কর্মজীবী মুসলিম পাড়া), ওয়াসিপুরে যারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কেন এই রাষ্ট্রদ্রোহ অভিযোগ ব্যবহার করেছিল সে বিষয়ে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ঘটনাই ২০১২ সালের বলিউডের হিট সিনেমা ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুরের’ বিষয়বস্তু ছিল।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ একটি গুরুতর অভিযোগ, যা সতর্কতার সাথে যাচাই করে প্রয়োগ করা দরকার। এক্ষেত্রে আমরা কর্মকর্তাদের অভিযোগ ফিরিয়ে নিতে এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য বলেছি।’
‘আইন মানুষের কণ্ঠকে দমন করার জন্য নয়, বরং জনগণের মধ্যে সুরক্ষা বোধ তৈরি করা।’ সান্থাল উপজাতি সম্প্রদায় থেকে আসা সোরেন বলেছেন, আমার সরকার আইনকে সম্মান করবে এবং লোকদের সুরক্ষা দেবে।
১০ হাজারেরও বেশি আদিবাসীদের পূর্ববর্তী বিজেপি সরকারের দায়ের করা অভিযোগ থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে সোরেন সোরেনের প্রশাসন।
রাষ্ট্রোদ্রোহ আইনটি একটি অজামিনযোগ্য অপরাধ এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অলোকা কজুর, ঝাড়খণ্ডে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় যে ১০ হাজার ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো তাদের মধ্যে তিনিও একজন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য পুলিশ তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছিল।’
সাহিত্য ও শিল্পের উপর ম্যাগাজিনে নিবন্ধ প্রকাশকারী কুজুর বলেন, পুলিশ তার পোস্টের জন্য তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য একটি পরোয়ানা জারি করে, যে পোস্টে তিনি ধর্ষণের শিকার এক মহিলার ওপর হুমকির কথা উল্লেখ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি অনলাইনে হুমকির মুখোমুখি হয়েছিলাম। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশ করতে শুরু করে। সেখানে বলা হচ্ছিলো, মার্কসবাদী এবং মাওবাদী বই যার কাছে পাওয়া যাবে তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে। আমাকে আমার বইগুলো সরিয়ে ফেলতে হয়েছিল, কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে এই রাষ্ট্রদ্রোহিতা ব্যবহার করে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে কী দুরাচরণ করবে?’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা