১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের স্কুলে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতীকী অনুষ্ঠান নিয়ে তোলপাড়

টুইটারে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা বাবরি মসজিদের বিশাল পোস্টারটি নামিয়ে নিচ্ছে। - ছবি : বিবিসি

ভারতে কর্ণাটকের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনা মঞ্চস্থ করার পর তা নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে বিতর্ক হচ্ছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা স্কুলে রাখা বাবরি মসজিদের একটি বিশাল পোস্টার মাটিতে নামিয়ে নিচ্ছে। এসময় তাদেরকে নেচে-গেয়ে উল্লাস করতেও দেখা যায়।

উগ্রপন্থী হিন্দুরা ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় এই মসজিদটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ভারতীয় ইতিহাসে এই ঘটনাটিকে দেখা হয় বিভাজন সৃষ্টিকারী একটি বড় ঘটনা হিসেবে।

এ নিয়ে সমালোচনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে।

ওই স্কুলের কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘জাতি নিয়ে গর্ব’ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

ওই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মন্ত্রী এবং একজন লেফটেনেন্ট গভর্নর উপস্থিত ছিলেন।

স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের কাল্লাদকা প্রভাকর বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, ‘ওই স্থাপনাটি ধ্বংস করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।’

এই ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটলো যখন নাগরিক পঞ্জী এনআরসি ও নতুন একটি নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ চলছে।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের একজন সদস্য লাভন্য বাল্লাল ওই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও টুইট করার পর সেটি খুব দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।

রোববার দক্ষিণাঞ্চলীয় ম্যাঙ্গালোর শহরের একটি বেসরকারি স্কুল শ্রী রামা ভিদ্যাকেন্দ্র হাই স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উৎসবের সময় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনাটি মঞ্চস্থ করা হয়।

এসময় সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন নেতা ও নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া এবং সাবেক নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও রাজনীতিক (বর্তমানে লেফটেনেন্ট গভর্নর) কিরণ বেদী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এই ঘটনায় স্থানীয় একজন বাসিন্দা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে তারা স্কুলের পাঁচজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বাবরি মসজিদের পোস্টারটি মাটিতে ফেলে দেয়ার সময় যখন উল্লাস করছে তখন একজন ভাষ্যকারও তাদের সাথে সুর মেলান।

‘হাতে যা কিছু পাচ্ছে তা দিয়েই তারা স্থাপনাটি ধ্বংস করতে শুরু করেছে,’ ভিডিওতে ভাষ্যকারকে একথা বলতে শোনা যায়। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে উল্লাস নৃত্য করতেও দেখা যায়।

স্কুলের গভর্নিং বডির মি. ভাট বলেছেন, তাদের স্কুলের প্রত্যেক বছর একটি বড় ঘটনাকে বেছে নেয়া হয় সেটি পুনরায় মঞ্চস্থ করার জন্যে।

তিনি বলেন, এক বছর তারা অনুষ্ঠানের জন্যে ভারতের চন্দ্রাভিযানকেও বেছে নিয়েছিল।

‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি। এনিয়ে বলারও কিছু দরকার ছিল না। সেখানে শুধু ধ্বংস করে ফেলার ঘটনাটাই দেখানো হয়েছে,’ বলেন তিনি।

মি. ভাট হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আরএসএসের একজন সদস্য। উপকূলীয় রাজ্য কর্ণাটকেরও একজন প্রভাবশালী নেতা তিনি। এই এলাকাটিকে হিন্দু কট্টরপন্থীদের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার ঘটনা পুনরায় মঞ্চস্থ করার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে শিশুরা জানতে পারবে দেশের জন্যে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়। এটা তাদেরকে আরো দেখাবে জাতিকে অপমান থেকে কীভাবে মুক্ত করতে হয়। এখানে মুসলিম বিরোধী কোনোকিছুকে উৎসাহ দেয়া হয়নি।’

স্কুলের এই অনুষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী শিব বিশ্বনাথান অনুষ্ঠানটিকে উল্লেখ করেছেন ‘অশ্লীল’ ঘটনা হিসেবে।

‘শিশুদের নিষ্কলুষ মনের ওপর এর একটা প্রভাব পড়ে। শিক্ষাকে এখানে প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

তিনি মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ইতিহাস এবং বহু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী সমাজকে খাটো করা হয়েছে।

উগ্রপন্থী হিন্দুরা ১৯৯২ সালে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরি মসজিদটিকে গুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার জের ধরে সারা দেশে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল যাতে প্রায় ২০০০ মানুষ নিহত হয়।

উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় যেখানে এই মসজিদটি ছিল অনেক হিন্দু সেটিকে তাদের দেবতা রামের জন্মভূমি বলে দাবি করে।

গত মাসে এবিষয়ে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তারা বলেছে, অযোধ্যার ওই জায়গাটি হিন্দুদের ফিরিয়ে দিতে হবে, যারা সেখানে একটি মন্দির গড়ে তুলতে চায়।

আর মসজিদ নির্মাণের জন্যে সুপ্রিম কোর্ট মুসলিমদেরকে আলাদা করে একটি জায়গা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement