২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ধর্ষণকারীদের পিটিয়ে হত্যার দাবি জয়া বচ্চনের

জয়া বচ্চন - ছবি : বিবিসি

ভারতে একজন তরুণী পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করার প্রতিবাদে যখন বিক্ষোভ চলছে তখন একজন এমপি এবং বলিউড অভিনেত্রী বলেছেন, ওই ধর্ষণকারীকে ‘পিটিয়ে মেরে ফেলা’ উচিত।

‘আমি জানি এটা খুব কঠিন শোনাচ্ছে, কিন্তু এধরনের লোককে জনসমক্ষে বের করে এনে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা উচিত,’ পার্লামেন্টে এ কথা বলেছেন জয়া বচ্চন।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কয়েকজন এমপিও এই নিষ্ঠুর গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন।

হায়দরাবাদ শহরে ২৭ বছর বয়সী এই পশু চিকিৎসকে গণধর্ষণ করার পর তাকে গলাটিপে হত্যা করা হয় এবং পরে তার দেহটিও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

বুধবার রাতে শহরের একটি টোল প্লাজার কাছে এই ঘটনার পর সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে।

প্রথমে ওই তরুণীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, পরে তার পুড়ে যাওয়া দেহ উদ্ধার করা হয়।

খবরে বলা হচ্ছে, কয়েকজন ট্রাক-চালক ও খালাসি মিলে ওই তরুণী পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ করেছে। পুলিশ বলছে, এই অভিযোগে তারা চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

রাজপথের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় সোমবার উঠে এসেছে ভারতীয় পার্লামেন্টেও, যেখানে অনেক এমপি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার কী করেছে ও সরকারের পরিকল্পনা কী সে ব্যাপারে জানতে চাইছেন।

বিরোধী দলীয় বর্ষীয়ান এমপি জয়া বচ্চন বলেন, ‘এই ঘটনায় যাদের গাফিলতি ছিল বা যে পুলিশকর্মীরা ঠিকঠাক নিজেদের দায়িত্ব পালন করেননি তাদের সারা দেশের সামনে লজ্জিত করা উচিত।’

‘আর যারা এই অপরাধটা ঘটিয়েছে - তাদের সম্পর্কে বলব দুনিয়ায় অনেক দেশ আছে যেখানে জনগণই তাদের বিচার করে ফেলে।’

তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় মানুষ এখন সরকারের কাছে এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট জবাব চায়।’

দক্ষিণাঞ্চলীয় তামিলনাডু রাজ্যের একজন এমপি ভিজিলা সত্যানাথান বলেছেন, ভারতের নারী ও শিশুরা নিরাপদ নয়। তিনি দাবি করেছেন, ‘যে চারজন মিলে এই অপরাধ করেছে তাদেরকে ৩১ ডিসেম্বরের আগেই ফাঁসি দিতে হবে। বিচার হতে দেরি হওয়া মানেই বিচার না হওয়া।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘এই ঘটনা সারাদেশের জন্যেই লজ্জা বয়ে এনেছে। এতেই সবাই আহত।’ তিনি বলেছেন, এই ঘৃণ্য অপরাধের নিন্দা জানানোর ভাষাও তার নেই।

তিনি বলেন, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজধানী দিল্লিতে মেডিকেলের একজন ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার পর কিছু কঠোর আইন চালু করা হয়েছিল এবং আশা করা হয়েছিল নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে।

কিন্তু ওই ঘটনার পর সেরকম কিছু হয়নি। রাজনাথ সিং বলেন, ‘নারীর প্রতি এই সহিংসতার বিষয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা করতে সরকার প্রস্তুত এবং এধরনের ঘটনা যাতে বন্ধ করা যায় সেজন্যে আরো কঠোর আইন প্রণয়ন করতেও আগ্রহী।’

সবশেষ এই গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।

কী হয়েছিল
ওই পশু চিকিৎসক বুধবার তার বাইক নিয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। ডাক্তারের সাথে তার একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল।

পরে তিনি তার বোনকে টেলিফোন করে জানান যে, তার বাইকের টায়ার ফুটো হয়ে গেছে। একজন লরি চালক তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন।

ওই নারী তার বোনকে জানান যে, তিনি একটি টোল-প্লাজার কাছে অপেক্ষা করছেন।

এর পরে তার সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

একদিন পর বৃহস্পতিবার সকালে একজন দুধওয়ালা একটি ফ্লাইওভারের নিচে ওই নারীর লাশ দেখতে পান।

ভারতীয় আইন অনুসারে কেউ ধর্ষণের শিকার হলে, এমনকি তার মৃত্যুর পরেও তার নাম প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরেও শুক্রবার সকাল থেকেই লোকজন টুইটারে তার নাম উল্লেখ করে এই নৃশংস ঘটনার বিচারের দাবি জানাতে থাকে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে তার ছবিও শেয়ার করেছেন।

এই ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশেই বিক্ষোভ চলছে। শনিবার হায়দরাবাদ শহরের উপকণ্ঠে একটি থানার সামনে জড়ো হয়ে ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দাবি জানাতে থাকে।

অন্যান্য শহরেও এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।

যেসব রাজনীতিক ও পুলিশের কর্মকর্তা ওই নারীর বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন, তার পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে ভেতরে যেতে দেয়নি। তারা দাবি করেছেন, বরং এই অপরাধের বিচারে কাজ করতে হবে।

ওই নারী যে শামসাবাদ এলাকায় থাকতেন, সেখানকার বাসিন্দারা প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে সেখানে একটি প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। তাতে লেখা- ‘মিডিয়া নয়, পুলিশ নয়, বহিরাগত নয়, সহানুভূতি নয়- আমরা শুধু চাই ব্যবস্থা নেয়া হোক, বিচার হোক।’

পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওই নারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেটা পুলিশকে জানানোর পরেও তারা দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এই অভিযোগের পর পুলিশের তিনজন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পুলিশ অফিসাররা নাকি তখন তাদেরকে বলেছিলেন যে, সে কোনো ছেলের সাথে ‘ভেগে’ গেছে।

ভারতে গত কয়েক বছর ধরে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এই অপরাধের সংখ্যা কমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

সরকারের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৭ সালে ভারতে ৩৩,৬৫৮ জন নারী, অর্থাৎ দিনে প্রায় ৯২ জন ধর্ষিত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, সৌদি আরব, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও সোমালিয়ার মতো বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশেই কেবল আজও প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান চালু আছে।

ভারতে তা শুরু হওয়ার এখনো কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই বলেই পর্যবেক্ষকদের অভিমত। তবে তারা সেই সাথেই বলছেন, কিন্তু দেশের পার্লামেন্টেও যখন এই দাবি ওঠে তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না এধরনের জঘন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে ভারতের রাগ-ক্ষোভ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’

সকল