১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেভাবে বিদায় নিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি

বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের সঙ্গে ভাবী প্রধান বিচারপতি শরদ বোবদে - ছবি : পিটিআই

তেরো মাস আগে প্রধান বিচারপতি হয়ে তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রের রক্ষায় সরব বিচারপতি প্রয়োজন। শুক্রবার শেষ দিনে তার মন্তব্য, ‘‘বিচারপতিরা কথা বলেন শুধুমাত্র কাজের প্রয়োজনে। অপ্রিয় সত্য শুধু স্মৃতিতেই থাকা উচিত।’’

প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি, আরো চার প্রবীণ বিচারপতিকে সঙ্গে নিয়ে। দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মোদি সরকারের পক্ষে স্পর্শকাতর মামলা বিশেষ কয়েকজন বিচারপতির কাছেই পাঠাচ্ছেন। আইনজীবী মহলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, দায়িত্বে এসে তিনি পরিস্থিতি বদলাবেন।

সেই তিনি— প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিদায়লগ্নে শুক্রবার আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের মন্তব্য, ‘‘২০১৮-র জানুয়ারির সেই সংবাদ সম্মেলন বিরাট প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। অথচ সব রাজনৈতিক স্পর্শকাতর মামলার ফয়সালা সরকারের পক্ষেই হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। ইতিবাচক প্রভাব না-রেখে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। গোজ‌ উইথ এ হুইম্পার।’’
আইনজীবীদের মতে, রাফাল মামলা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারকে মুখবন্ধ খামে নোট পেশ করতে দেয়ার রীতিও প্রধান বিচারপতি হিসেবে গগৈ চালু করে গেলেন।

সুপ্রিম কোর্টেরই এক মহিলা কর্মী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। তার তদন্তে প্রধান বিচারপতিই অন্য বিচারপতিদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেন। সেই কমিটি প্রধান বিচারপতিকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে জানায়, অভিযোগে সারবত্তা নেই। কিন্তু কেন সারবত্তা নেই, তদন্তে কী মিলেছে, তার কিছুই জানানো হয়নি। বিধি সেন্টার ফর লিগাল পলিসি-র রিসার্চ ডিরেক্টর অর্ঘ্য সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এই মামলার যে ভাবে বিচার হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এতে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ধাক্কা খেয়েছে। কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে বা নির্দোষ বলতে হলে যে প্রক্রিয়া রয়েছে. সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।’’

শুক্রবার শেষ দিনে মাত্র কিছুক্ষণের জন্য এক নম্বর এজলাসে বসেছিলেন প্রধান বিচারপতি। সঙ্গে ছিলেন ভাবী প্রধান বিচারপতি শরদ বোবদে। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেয়ার আগে রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন গগৈ। শুক্রবার প্রধান বিচারপতির চেয়ারে শেষ বার বসার পরও রাজঘাটে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় সমস্ত হাইকোর্টের ৬৫০ জন বিচারপতি ও ১৫ হাজার বিচারবিভাগের কর্মীকে ভিডিয়ো-কনফারেন্সে বিদায়ী বার্তাও দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তার একটা অংশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে মিশে থাকবে।

প্রধান বিচারপতি পদে শেষ সপ্তাহে রাম মন্দির থেকে শবরীমালা, রাফাল তদন্ত থেকে আরটিআই-এর আওতায় প্রধান বিচারপতির দফতর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন বিচারপতি গগৈ। কিন্তু সবেতেই ‘সব দিক রক্ষা করার’ অভিযোগ উঠেছে। রামমন্দির মামলায় তিনি প্রমাণের থেকে বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। অর্ঘ্য বলেন, ‘‘উনি যখন এসেছিলেন, তখন দু’টি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। এক, আদালত সরকারের পকেটে বলে মানুষের মনে যে ধারণা ঢুকে গিয়েছিল, তা তিনি কাটাতে পারবেন। দুই, উনি নিজেই বলেছিলেন, গণতন্ত্রে সরব বিচারপতিও প্রয়োজন। আশা করা হয়েছিল, এর কাজ নতুন পথ দেখাবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।’’

গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি থাকার সময় রঞ্জন গগৈয়ের সামনে প্রায়ই হাজির হতে হতো মিজোরামের তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবকে। তার বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশ মানায় কোনো গাফিলতি হলে তিনি মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব বা ডিজি- কে ডেকে পাঠাতে দ্বিধা করতেন না।’’
অর্ঘ্যর পর্যবেক্ষণ, ‘‘গত ২০ বছরে বিচারবিভাগ সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করেছে, মানুষের আস্থা কমেছে। কিন্তু বিচারপতি গগৈ বিচার বিভাগকে গণ্ডির মধ্যে রেখেছেন, সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করেননি। তার রায়ে সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল।’’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement
জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের বাসভবনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্কিৃয় করল রাশিয়া তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের।

সকল