২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘তীর্থস্থান রাজনীতি’তে ভারতকে উভয় সঙ্কটে ফেলে দিলো পাকিস্তান!

কর্তারপুর প্রকল্পের উদ্বোধনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান - ছবি : বিবিসি

পাকিস্তানের ভেতরে অবস্থিত শিখদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান ‘কর্তারপুর সাহিব’ ভারতীয়দের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে একটি করিডরের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দিনদুয়েকের মধ্যেই।

কিন্তু এই ‘কর্তারপুর করিডর’ নিয়ে শুরুতে প্রবল উৎসাহ দেখালেও শেষ মুহূর্তে এসে এই উদ্যোগ ভারতকে প্রবল দ্বিধা আর সংশয়ে ফেলে দিয়েছে।

কারণ, করিডরের উদ্বোধনের ঠিক আগে পাকিস্তান খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের এই উদ্যোগে তুলে ধরছে - সে দেশের সরকারি ভিডিওতে ব্যবহার করা হচ্ছে খালিস্তানি নেতাদের ছবি।

তা ছাড়া পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতীয়রা এই করিডর ব্যবহার করতে পারবেন বলে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা করেছেন, সেটাও ভারতকে কার্যত এক উভয় সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে।

শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হতে যাচ্ছে আর মাত্র দিনপাঁচেকের ভেতর।

তার ঠিক আগেই কর্তারপুর সাহিবের দরজা ভারতীয়দের জন্য খুলে যাচ্ছে - এটাকে কিন্তু শুরুতে এক বিরাট অর্জন হিসেবেই দেখা হয়েছিল।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এমনও বলেছিলেন, ‘মুসলিমরা যদি মদিনার চার কিলোমিটার দূরের বর্ডারে আটকে পড়েন এবং তারপর একদিন বর্ডার খুলে গেলে মদিনায় যেতে পারেন, কেবল সেই আনন্দেরই তুলনা হতে পারে শিখদের আজকের তৃপ্তির সাথে।’

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পাশাপাশি পাকিস্তান সরকার কর্তারপুর নিয়ে তাদের প্রোমোশনাল ভিডিওতে প্রয়াত জার্নেইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেসহ বিভিন্ন খালিস্তানি শিখ নেতার পোস্টারও তুলে ধরেছে।

আর এ ব্যাপারটাই ভারতকে আরো শঙ্কিত করে তুলেছে।

দিল্লিতে স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট পারুল চন্দ্রা বলছিলেন, ‘যেরকম ঝড়ের গতিতে পাকিস্তান এই প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে তাতে ভারতের একটা ধারণা তৈরি হয়েছে শুধু শিখ তীর্থযাত্রীদের সহজে যেতে দেয়াটাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়।’

‘দিল্লি এখন মোটামুটি নিশ্চিত যে, এর পেছনে পাকিস্তানের অন্য স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থও আছে।’

‘এখন দিল্লি ভালোই বুঝতে পারছে, শিখদের পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানিয়ে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী চেতনাকে উসকে দেয়াটাও ইসলামাবাদের লক্ষ্য।’

ভারতীয় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং এ কারণেই বলেছেন, প্রথম দিন থেকেই তার সন্দেহ ছিল এই করিডর বানানোর পেছনে পাকিস্তানের কোনো ‘গোপন এজেন্ডা’ আছে।

এর পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকদের কর্তারপুর যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট লাগবে কি লাগবে না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এদিন জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তান থেকে যে নানা ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আসছে তাতে আমরা বিভ্রান্ত।’

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একবার বলছেন, শিখদের জন্য পাসপোর্ট লাগবে না - যে কোনো সরকারি পরিচয়পত্রই যথেষ্ঠ।

আজ আবার পাকিস্তানি সেনা মুখপাত্র বলেছেন পাসপোর্টের ভিত্তিতেই তারা সে দেশে ঢুকতে দেবেন।

কিন্তু কেন পাসপোর্ট ছাড়া শুধু শিখদের ঢুকতে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়েও ভারতের আপত্তি আছে।

দিল্লিতে সিনিয়র কূটনৈতিক সংবাদদাতা জ্যোতি মালহোত্রা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘পাকিস্তান এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়ার চেষ্টা করতে পারে - এই আশঙ্কায় কর্তারপুর প্রজেক্ট নিয়ে দিল্লিতে বিজেপি সরকারের কিন্তু আগাগোড়াই সংশয় ছিল।’

‘কিন্তু শিখদের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে তারা এতে সায় না-দিয়েও পারেনি।’

‘অথচ ভারতের এটাও জানা আছে যে, কর্তারপুর যে নারোয়াল জেলায় অবস্থিত, সেখানেও এই তীর্থস্থানের খুব কাছেই পাকিস্তানের মদতে উগ্রবাদী প্রশিক্ষণ শিবিরও চালু আছে।’

ফলে সার্বিকভাবে কর্তারপুর নিয়ে ভারত যে বেশ হতাশ, সরকারি মুখপাত্রের কথাতেও তা গোপন থাকেনি।

রবীশ কুমার যেমন এদিন বারবার বলেছেন, ‘পাকিস্তান এভাবে শেষ মুহূর্তে বারবার নিয়ম বদলাতে পারে না।’

‘বস্তুত মাত্র দিনদশেক আগে দুদেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, সেটা থেকে কীভাবে তারা সরে আসতে পারে সেটাই আমাদের মাথায় ঢুকছে না!’

পাকিস্তান সেই সমঝোতায় নিজেদের মর্জিমাফিক অদলবদল করছে - এটা বুঝেও কিন্তু ভারতকে তা ঢোঁক গিলে মেনে নিতে হচ্ছে, কারণ এখন আর এ প্রকল্প থেকে ভারতের পক্ষে পিছিয়ে আসা সম্ভব নয়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement