২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘বাবা যদি বিদেশি হন, তাহলে তার লাশ বিদেশেই পাঠাক সরকার’

-

ভারতের আসাম রাজ্যের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে বন্দীদের মৃত্যুর মিছিল চলছেই। গত এগারো দিনে দু’জন বন্দীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ঘটল। গত ১৩ অক্টোবর তেজপুর ক্যাম্পে দুলাল পাল নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পর ২৪ অক্টোবর গোয়ালপাড়া ক্যাম্পে ফালু দাস নামের ৭০ বছরের আরেক বৃদ্ধ বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন।

এই মৃত্যুগুলি শুধু বিনা চিকিৎসায় ঘটেছে এমনও নয়, মৃতদের পরিবার থেকে অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিজেপি সরকার বন্দীদের নির্মম অত্যাচার করে মেরে ফেলছে। দুলাল পালকে পাগল সাজিয়ে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে তার ছেলেরা অভিযোগ করেছেন।

ফালু দাসকে ভুল ওষুধ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে তার পরিবারের লোকেরা অভিযোগ তুলেছেন। দুলাল পালের পরিবারের মতো ফালু দাসের পরিবারও লাশ নিতে চাচ্ছে না। তারা বলছেন, ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি না পেলে লাশ গ্রহণ ও শেষকৃত্য করবেন না।

ফালু দাসের বাড়ি নলবাড়ি জেলার বরক্ষেত্রী গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছিল। ভারতীয় নাগরিকের নথি দেখানো সত্ত্বেও তাকে বিদেশি হিসেবে আখ্যায়িত করে ট্রাইব্যুনাল। ফলে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ফালু দাসকে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করে পুলিশ। তিনি উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু চিকিৎসা করায়নি সরকার।

গত ১৩ অক্টোবর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রক্তচাপের ভুল ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হয়। এতে শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়লে দায়সারাভাবে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। তখন চিকিৎসকরা জানান, ভুল ওষুধের ফলে এমন হয়েছে। তারপর চিকিৎসা শুরু হলেও তিনি আর সাড়া দেননি। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু ঘটে।

ফালু দাসের মেয়ে সন্ধ্যা দাস শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বাবার ১৯৫৬ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। ’৬১ সালের জমির দলিলও আছে তার নামে। এরপরও বাবাকে বিদেশি সন্দেহে মামলা করে পুলিশ। বাবা গরিব মৎস্যজীবী। চাষের জমি নেই। বাড়ির এক টুকরো জমি বেঁচে ও মহাজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে মামলা লড়েছেন। ভারতীয় নাগরিকের নথিপত্র দাখিল করা সত্ত্বেও বাবাকে বিদেশি তকমা দিয়ে জেলে পুরে দেয় পুলিশ।’

মেয়ের আরো অভিযোগ, ‘ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা বাংলাভাষায় কথা বললেই ধরে নেয় বাংলাদেশি। তখন কোনও নথি যাচাই করতে চায় না তারা। জীবিতকালে বাবা ভারতীয় নাগরিকের নথি দেখানো সত্ত্বেও তাকে বিদেশি ঘোষণা করে, এখন মৃত্যুর পর বলছে লাশ আমাদেরকে বুঝে নিতে। বাবা যদি বিদেশি হন,তাহলে তার লাশ বিদেশেই পাঠাক সরকার।’

ডিটেনশন ক্যাম্পে একের পর এক বাঙালির মৃত্যুতে বিজেপি’র বিরুদ্ধে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। শুধু চলতি বছরেই এখন পর্যন্ত নয়জন বন্দীর মৃত্যু ঘটেছে। রাজ্যের বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এখনও পর্যন্ত ২৭ জন বন্দীর মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে দেড়মাসের একটি শিশুরও মৃত্যু ঘটেছে। বেশিরভাগ মৃত্যুই অস্বাভাবিকভাবে ঘটছে। অভিযোগ উঠেছে বিজেপি সরকার পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলছে বন্দীদের। বর্তমানে রাজ্যের ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্পে ১ হাজার ১২২ জন বন্দী রয়েছেন। তাদের সঙ্গে ৪৩ টি শিশুও বন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

কারণ, বাদ পড়াদের সরকার বলেছে তাদের বিদেশি ট্রাইব্যুনালে গিয়ে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে হবে। যদি তারা প্রমাণ করতে না পারেন, তাদেরকেও ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে। এজন্য মোদী সরকার বিশাল বিশাল ক্যাম্প নির্মাণ করছে। সূত্র: গণশক্তি


আরো সংবাদ



premium cement