২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শান্তিপ্রক্রিয়া ফের শুরু করতে মার্কিন-তালেবান যোগাযোগ

এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেয় তালেবান প্রতিনিধিদল - সংগৃহীত

একটি শান্তিচুক্তির খুব কাছাকাছি আসার পরে গত মাসে লাইনচ্যুত হওয়া শান্তিপ্রক্রিয়া পুনরায় চালু করতে যোগাযোগ শুরু করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান কর্মকর্তারা, সোমবার এই খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এই আলোচনার উদ্যোগ আশার আলো জাগিয়েছে। সম্ভাব্য আলোচ্যসূচির মধ্যে বন্দীদের মুক্তিদান এবং সহিংসতা হ্রাস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এমন বিশ্বাসও তৈরি হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান উভয়পক্ষের কর্মকর্তারাই পাকিস্তানের রাজধানী সফর করার সময় গত সপ্তাহে ইসলামাবাদে শান্তি-আলোচনা বন্ধের পরে প্রথম বৈঠক করেছিলেন। ওয়াশিংটনের কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, পাকিস্তানই ১৮ বছরের পুরনো আফগান যুদ্ধকে শেষ করতে শান্তিচুক্তির আলোচনা পুনরায় চালু করতে মূল ভূমিকা পালন করছে। এই মাসের শুরুর দিকে পাকিস্তানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ইসলামাবাদ সফর করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ ও তালেবান নেতা মোল্লা বারাদার। যদিও উভয়পক্ষই পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাথে পৃথক আলোচনার জন্য ইসলামাবাদে রয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল যে, মোল্লা বারাদারের সাথে পৃথক আলোচনা করেছেন খলিলজাদ এবং তাদের সিনিয়র সহযোগীরাও এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য গত মাসে তালেবানের সাথে আলোচনা শেষ হয়েছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সাথে দ্বিমত পোষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি রিক ওলসন। ইসলামাবাদে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, শান্তি আলোচনা বন্ধ করে দেয়া নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে আলাপ-আলোচনার যবনিকাপাত ঘটে। কাঠামোগত অবস্থার ও অবনতিশীল অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাই উভয়পক্ষেরই দরকার কথা বলা বা আলোচনা করা।

২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের জন্য ভারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন লরেল মিলার। তিনি বিশ্বাস করেন যে, শান্তিপ্রক্রিয়া আবার শুরু করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই এগিয়ে আসা দরকার। আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম রেডিও নেটওয়ার্ক ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আফগান সরকার ও তালেবান উভয়পক্ষের জন্যই চাপ প্রদর্শন করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোও এই দুই পক্ষের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে এখনো গুরুত্বপূর্ণ।
এই জটিল ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য সাম্প্রতিক বেশ কয়েকবারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আফগানিস্তানে শান্তি অধরাই রয়ে গেছে। গত মাসের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনের নিকটবর্তী একটি প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তালেবান নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি আশ্চর্যজনক ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

তবে কাবুলের কাছে তালেবানের হামলায় একজন আমেরিকান সেনা এবং কয়েক ডজন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পরে তিনি এই পরিকল্পনা বাতিল করেছিলেন। তবে গত সপ্তাহে মিনেসোটায় একটি সমাবেশে ট্রাম্প ইঙ্গিত করেছিলেন যে, তিনি তালেবানের সাথে পুনরায় শান্তিচুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রস্তুত। ট্রাম্প বলেছেন, আমাদের দেশের একটি বড় ভুল ইতিহাসকে একটি বৃহত্তম চোরাবালিতে আটকে ফেলতে পারে। তাই আমরা লোকজনকে টেনে আনছি। আমরা ভালো চুক্তি করার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি।

মার্কিন কর্মকর্তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, আফগানদেরকে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে সক্ষম করার জন্য ২০১৮ সালের জুনে সংঘটিত যুদ্ধবিরতিতে সহিংসতা হ্রাস পেয়েছিল। তিন দিনের এই যুদ্ধবিরতিতে আফগান প্রতিদ্বন্দ্বীদের একে অপরের সাথে দেখা করার ও শান্তির জন্য তাদের আকাক্সক্ষাকে পুনরায় জানানোর সুযোগ পেয়েছিল। সেই পরিবেশটি পুনরায় তৈরি করতে উভয়পক্ষই বন্দীদের বিনিময়ের পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তালেবানের সমর্থক হাক্কানি নেটওয়ার্কের উচ্চপদস্থ সদস্য আনাস হাক্কানিকে মুক্তি দেয়ার শর্তও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিনিময়ে তালেবান একজন আমেরিকান অধ্যাপক ও একজন অস্ট্রেলিয়ান অধ্যাপককে মুক্তি দেবে। ২০১৬ সালে আফগানিস্তানে আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাদেরকে অপহরণ করা হয়েছিল।

প্রস্তাবিত চুক্তিটিতে স্বাক্ষর হওয়ার পর ১৩৫ দিনের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। চুক্তি সই হওয়ার এক বছরের মধ্যে বাকি ১০ হাজার মার্কিন সেনাকে সরিয়ে নেয়া হবে। আর এর বিনিময়ে তালেবান আলকায়েদার সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করবে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে, যা যাচাই করার অধিকার থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সূত্র : দ্য ডন।


আরো সংবাদ



premium cement