২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাশ্মির নিয়ে ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মকর্তার পদত্যাগ

কান্নান গোপিনাথন -

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে জম্মু ও কাশ্মিরে। উপত্যকাটি কার্যত এখন অচল। এর ফলে, এখানার লক্ষাধিক বাসিন্দা হারিয়েছেন তাদের মৌলিক অধিকার।

আর বিজেপি সরকারের এই আচরণের প্রতিবাদে চাকরি ছেড়েছেন এক ভারতীয় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সার্ভিসের(আইএএস) অফিসার ৩৩ বছর বয়সী কান্নান গোপিনাথন এই ঘটনার প্রতিবাদে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। পদত্যাগের সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মিরে জন সাধারণের দুরবস্থা অবর্ণনীয়। একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনি এই ব্যবস্থা মেনে নিতে পারছেন না। তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন।

গত ৫ আগস্ট ভারত সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। এরপর থেকে অঞ্চলটিকে অচল করে রেখেছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। গত ২০ দিন ধরে কাশ্মিরের সাথে বাইরের পৃথিবীর যোগাযোগ বলতে গেলে বন্ধ। রাহুল গান্ধীসহ ভারতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি কাশ্মিরে। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের।
ভারতীয় টিভি চ্যানেল-এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎারে গোপীনাথন বলেন, ‘আমি চাকরি ছাড়লেই যে পরিস্থিতি বদলাবে তা নয়। তবে নিজের বিবেকের কাছেও তো জবাব দিতে হবে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’

প্রসঙ্গত, দাদ্রা ও নগর হাভেলি-র মূল বিভাগগুলির সচিব গোপিনাথন ক্ষতিগ্রস্থ সরকারি বৈদ্যুতিক সংস্থাগুলিকে লাভের মুখ দেখতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন।

গোপিনাথনের আরও বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মিরের লক্ষ লক্ষ মানুষের মৌলিক অধিকার গত ২০ দিন ধরে খর্ব করা হয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা নিয়ে তার কোনও সমস্যা নেই। তিনি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন যে সমস্ত স্বাধীন নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছে তার বিরুদ্ধে।’ গত সাত বছর ধরে এই চাকরি করার পর গত ২১ আগস্ট তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এমনকি যখন প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়সালকে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে শ্রীনগরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছিল, কারোর কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মনে হয়েছিল, দেশের শাসনব্যবস্থা ঠিকই আছে।’

চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে গোপিনাথন রিটার্নিং অফিসার থাকাকালীন প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা দাদ্রা এবং নগর হাভেলির প্রশাসককে একটি বিতর্কিত নোটিস প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা তিনি গোপিনাথনকে জারি করেছিলেন। এবং প্রশাসনেক কাছে তার ব্যাখ্যাও চেয়েছিলেন তিনি।

ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও প্রশাসন ক্যাডারের চাকরিতে ঢোকেন গোপিনাথন। চাকরির আগে তিনি স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বিনা পারিশ্রমিকে বস্তিতে শিশুদের পড়াতেন। তবে এই মুহূর্তে তার পরিকল্পনা কী, তা নিয়ে গোপিনাথন বলেন, ‘আমি এখন কী করব সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই।’

আরেক ভাতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, চাকরি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম সিভিল সার্ভিসে থেকে মানুষের বক্তব্য তুলে ধরতে পারব। দেখলাম আমার কণ্ঠই রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

তার এক সতীর্থের কথায়, ‘ও বলত মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার অর্থ জরুরি অবস্থা জারি হওয়া।’

মোদী সরকারের সঙ্গে আগেও বিরোধ হয়েছে কান্নানের। গত লোকসভা ভোটের সময়ে এক নেতা তাকে নির্দেশ দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কান্নান। তার বক্তব্য, ‘মোদী সরকার ক্ষমতায় ফেরার পরে তুচ্ছ কারণে আমাকে শো-কজ় নোটিস দেওয়া হচ্ছিল।’

এদিকে গোপিনাথনকে ‘দেশ-বিরোধী’ তকমা দিয়ে টুইটারে প্রচার শুরু হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে আমি দেশ-বিরোধী তকমা সহ্য করতে রাজি।’

তবে তার পাশেও দাঁড়িয়েছেন অনেকে। প্রাক্তন আইএএস অনিল স্বরূপের বক্তব্য, ‘তার মতো অফিসারদের নিয়ে আমরা গর্বিত। কেন ইস্তফা তা জানা প্রয়োজন।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরেই প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসেন গোপীনাথন। বানভাসি দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় মু্খ্যমন্ত্রীর ত্রাণ হবিলে ১ কোটি টাকা দিতে গিয়েছিলেন;কিন্তু ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। চেক জমা দিয়ে ফিরে যাওয়ার রিবর্তে তিরুঅনন্তপুরম থেকে বাস ধরে সোজা চেঙ্গান্নু চলে যান। লাগাতার বৃষ্টিতে কেরালার যে জায়গাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল চেঙ্গান্নুর। টানা আটদিন সেখানে বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যান তিনি। কোচি বন্দর থেকে ত্রাণসামগ্রী নামিয়ে মাথায় করে তা বয়ে নিয়ে যান ত্রাণ শিবিরে। আর এই সবটাই করেছিলেন পরিচয় লুকিয়ে। আশপাশের কাউকে ঘুণাক্ষরেও নিজের পরিচয় জানতে দেননি তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement