২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাশ্মির ইস্যুতে মধ্যস্ততা করতে ট্রাম্পকে মোদির অনুরোধ : ভারতের অস্বীকার

- সংগৃহীত

ভারত আর পাকিস্তান; ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে একে অপরের চির বৈরি প্রতিবেশীতে পরিণত হওয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ কাশ্মির। কাশ্মির নিয়ে কেউ কাউকে চুল পরিমাণ ছাড় দিতেও রাজি নয়। এর আগে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারত-পাকিস্তানের মাঝে মধ্যস্ততা করেও পরিস্থিততির খুব বেশি উন্নয়ন করতে পারেনি। কিন্তু এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কাশ্মির ইস্যুতে মধ্যস্ততা করতে প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

যুক্তরাষ্ট্র সফররত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই কথা বলেছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাশ্মির উপত্যকাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আনতে মধ্যস্থতাকারী হতে ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন মোদি। তবে ট্রাম্পের এমন বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এমন কোনও অনুরোধ করেননি মোদি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার টুইটারে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের কোনও অনুরোধ করেননি নরেন্দ্র মোদি’। অন্যদিকে এই ঘটনার জের ধরে বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা ও কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস।

সোমবার হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। সেই বৈঠকের পরই ট্রাম্প বলেন, ‘২ সপ্তাহ আগেই মোদির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমরা এ বিষয় (কাশ্মির) নিয়ে কথা বলেছিলাম। উনি তখন বলেছিলেন, আপনি (ট্রাম্প) কি মধ্যস্থতাকারী হবেন? আমি বললাম, কীসের? তখন উনি বললেন কাশ্মির সমস্যা মেটানোর জন্য। কারণ এই সমস্যা বছরের পর বছর ধরে রয়েছে। আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কতদিন ধরে রয়েছে এই সমস্যা’। ট্রাম্প যখন একথা বলছেন, তখন তার পাশে ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও। ট্রাম্পের এই কথা শুনে ইমরান বললেন, ‘৭০ বছর ধরে এই সমস্যা রয়েছে’।

কাশ্মির ইস্যুতে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের আগে ইমরান খান বলেন, ‘ট্রাম্প বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট। উপমহাদেশে শান্তি স্থাপনে আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে…আমার পক্ষ থেকে বলতে পারি, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা কোনও সমাধান বের করতে পারিনি। আশা করছি মার্কিন প্রেসিডেন্ট দু’দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হবেন।’

এরপর ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, উভয়েই (ভারত-পাকিস্তান) চায়, এ সমস্যার সমাধান হোক। আমার মনে হয়, আমরা সবাই তা চাই। আর আমি যদি সাহায্য করতে পারি, আমি মধ্যস্থতাকারী হতে রাজি’। ট্রাম্পের মন্তব্য শোনার পর ইমরান বলেন, ‘যদি আপনি পারেন, তাহলে মধ্যস্থতা করে এ সমস্যার সমাধান করুন’।

ইমরানের কথা শুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘দেখা যাক, কী করতে পারি। কাশ্মির সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। খুব সুন্দর নাম। বিশ্বের অন্যতম সুন্দর জায়গা এটা। কিন্তু এখন চারদিকে শুধু বোমা। যেখানেই আপনি যান, বোমা রয়েছে। ভয়ঙ্কর অবস্থা। যদি আমি কিছু সাহায্য করতে পারি, তাহলে আমাকে জানান’।

এদিকে মার্কির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য সামনে আসতেই ভারতের রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। কংগ্রেস বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে কটাক্ষ করে। অন্যদিকে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানান। আর কাশ্মিরের নেতা ওমর আবদুল্লাহ প্রশ্ন করেন, এবার কি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী বলবে ভারত?

অবশ্য ট্রাম্পের এমন কথায় স্বভাবতই খুশি পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ট্রাম্পকে বলেন, ট্রাম্প যদি কাশ্মির নিয়ে মধ্যস্থতা করতে পারেন, তাহলে কাশ্মিরের বাসিন্দাদের শুভকামনা ও প্রার্থনা তার সঙ্গে থাকবে।

এদিকে ট্রাম্পের দাবি নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়তেই বিষয়টি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তড়িঘড়ি করে দাবি করা হয়- অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের ‘অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ’। এটি ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। এ ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে কোনো অনুরোধ করা হয়নি বলেও দাবি করে নয়াদিল্লী।

পাশাপাশি মোদি সরকারের দাবি, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান চায় ভারত। কিন্তু তা নিয়ে বরাবরই ভারতের অবস্থান হল, এই ইস্যুতে কোনও তৃতীয় পক্ষের অবস্থান মেনে নেয়া হবে না। সেটা জাতিসঙ্ঘই হোক বা অন্য কোনো রাষ্ট্র।


আরো সংবাদ



premium cement