ভারত কি এনআরসি থেকে বাদ পড়া মুসলিমদের ফেরত পাঠাতে পারবে?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৫
বুধবার ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় বলেছেন সরকার সমস্ত বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের দেশের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে ফেরত পাঠাবে। আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ আগে এ কথা বলেছেন তিনি। অমিত শাহ এবং বিজেপি নেতারা সারা দেশে এনআরসি কার্যকর করার পক্ষে।
কতজনকে ফেরত পাঠানো হবে?
এনআরসি তালিকার বাইরে কতজন থাকবেন তার সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত নয়, এবং এও স্পষ্ট নয় যে কাউকেই ফেরত পাঠানো হবে কিনা। প্রথমে সংখ্যার দিকে তাকানো যাক। এনআরসি-র চূড়ান্ত খশড়ায় বাদ পড়েছেন ৪০ লাখ আবেদনকারী। আরো এক লাখের নাম বাদ পড়েছে ভেরিফিকেশনের পরে। সংখ্যাটা ৪১ লাখে সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয়। তালিকার ২ লাখ নামের বিরুদ্ধে আপত্তি দায়ের করা হয়েছে, ফলে সেখানে আরো কিছু নাম বাদ যাবে। কিছু নাম হয়ত অন্তর্ভুক্তও হবে। যে ৪০ লাখের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে ৩৬ লাখ নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি সহকারে দরখাস্ত করেছেন।
এবার আসবে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল। গত বছরের শুরুতে এই বিল তামাদি হয়ে যাওয়ার পর ফের সরকার এই বিল আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদি রাজ্য সভায় সে বিল পাশ হয়ে যায় তাহলে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্তরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদিও কোনো ধর্মীয় ভাগাভাগির ভিত্তিতে কোনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে প্রায়ই বিভিন্ন রেকর্ডেড বক্তব্য থেকেই জানতে গেছে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যারা পড়েছেন, তাদের মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা মুসলিমদের থেকে বেশি। বিল যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদের সংখ্যা কমাবে।
চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হওয়ার কথা ৩১ জুলাই। যারা বাদ পড়বেন তাদের আবেদনের বেশ কিছু সুযোগ থাকবে, যা সময়সাপেক্ষ। এর পরই ফেরত পাঠানোর প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি আদৌ তা ওঠে।
ফেরত পাঠানো নিয়ে এত অনিশ্চয়তা কেন?
ব্যাপক সংখ্যায় কোনো মানুষকে কোনো দেশে ফেরত পাঠাতে হলে, যে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাকে স্বীকার করে নিতে হবে যে তাদের নাগরিকরা বেআইনিভাবে ওই দেশে এসেছিল। ২০১৯ সালের সরকারি তথ্যানুসারে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সাল থেকে আসাম ১৬৬ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪৭ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। এনআরসির পরিপ্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা- এ কেবল কয়েক লক্ষ মানুষের প্রশ্ন নয়, এদের মধ্যে অনেকেই দশকের পর দশক ধরে আসামে বাস করছেন এবং ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে আসছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা সংবাদমাধ্যমের কাছে বলে চলেছেন সে দেশের কোনো নাগরিক ভারতে নেই। একইসঙ্গে ভারতের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করারও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাস্তবত ভারত বাংলাদেশের কাছে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে ফেরত পাঠানোর কোনো কথা বলা হবে না বলে জানিয়েছে বলেই খবর। গত বছর জুলাইয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ঢাকা সফরে গিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খানকে কেন্দ্রের এনআরসি এবং তার পদ্ধতির সীমারেখা সম্পর্কে জানিয়েও এসেছিলেন। সে খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়েছিল।
ফেরত যদি পাঠানো না হয়, তাহলে কী হবে?
আসামে নাগরিকত্ব বা বেআইনি অনুপ্রবেশ নির্ধারণের বিষয়টি স্থির হতে যদি কয়েক দশক না-ও লাগে, কয়েক বছর তো লাগবেই। প্রথমত আধা-বিচারবিভাগীয় বিদেশি ট্রাইবুনাল রয়েছে, এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে যারা বাদ পড়বেন তারা সেখানে যেতে পারবেন। ট্রাইবুনালে প্রত্যাখাত হলে তাদের হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে তাদের যে ১০০টি ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে, বা যে আরো ২০০টি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হতে চলেছে, তার কোনো একটিতে পাঠানো হতে পারে। যারা তিন বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটিয়ে ফেলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি তাদের বন্ডের বিনিময়ে শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দিতে বলেছে। গত বছর এক কথোপকথনের সময়ে আসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমি (ডিটেনশন সেন্টার) সমর্থন করি না… আমি মনে করি একবার তাদের পরিচয় ডিজিট্যালি রেকর্ড হওয়া উচিত এবং দেশের অন্য কোনো রাজ্যে গিয়ে তারা আর ভারতের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারবেন না। একবার সেটা হয়ে গেলে ওদের প্রাথমিক মানবাধিকার দেয়া উচিত।”
লক্ষ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ সারা জীবনের জন্য অনিশ্চিত। একমাত্র দীর্ঘ আইনি লড়াই-ই সুনিশ্চিত, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন পরিচয়ের কেউ খর্বিত অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারেন। ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা সুদূর পরাহত।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা