২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সিপিইসি নিয়ে পাকিস্তান-চীন সমীকরণ

পাকিস্তান-চীন সমীকরণ - ছবি : সংগ্রহ

পাকিস্তানের জ্বালানি সঙ্কট বাড়ছেই। সরকারের প্রয়াস সত্ত্বেও এর সমাধান হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। অবশ্য চীনের হস্তক্ষেপ ও সিপিইসির প্রতিষ্ঠার কারণে আগামী বছরগুলাতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।

সিপিইসির ব্যাপ্তি
চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) এশিয়া অঞ্চলের সাথে চীনকে সংযুক্ত করার যোগাযোগ শৃঙ্খলের একটি অংশ মাত্র। এর লক্ষ্য হলো আধুনিক সড়ক, মহাসড়ক, সেতুর মাধ্যমে পাকিস্তানের অবকাঠামোকে উন্নত করার যৌথ প্রয়াস। এতে জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগের কথাও রয়েছে। এটা জ্বালানি খাতে পাকিস্তানের সমস্যার সমাধান করতে পারে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙ যখন ঘোষণা করেছিলেন যে এই প্রকল্পে চীন ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, তখন স্থানীয় মিডিয়া ও রাজনীতিবিদেরা প্রশংসা করেছিল।

চীন বনাম পাকিস্তান : ঝুঁকি কোথায়?
বিনিয়োগের মুনাফা পাওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে চীন কোনো দেশে বিনিয়োগ করে না। প্রস্তাব প্রণয়নের আগেই মুনাফা ও ঝুঁকি সতর্কভাবেহিসাব করে বিশেষজ্ঞরা। চীনা সরকারের ব্যাপকভাবে অনুকূলে না হলে খুব কমই বিনিয়োগ করা হয়।চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে, তার একটি কারণ এটি। তাছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু বেইজিংয়ের কাছে তোলাতার দাবিগুলোতে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না।সিপিইসিকে গ্রহণ করার মানে কী, তা পাকিস্তানকে খুবই সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে।
অর্গ্যানাইজেশন ফর ওয়ার্ল্ড পিসের তথ্যানুযায়ী, চীন থেকে পাওয়া বিনিয়োগ সবসময় সংশ্লিষ্ট দেশের অনুকূলে কাজ করে না। শ্রীলঙ্কা তার দেশে করা চীনা বিনিয়োগ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে হাম্বানতোতা বন্দরটি চীনকে লিজ দিতে হয়েছে ৯৯ বছরের জন্য।পাকিস্তানকেও এই আশঙ্কার বিষয়টি মনে রাখতে হেব। কারণ সিপিইসির বিষয়টি তাদের মাথায় রয়েছে।

পাকিস্তানের বাধা
অনেক লোক পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করে। ভারতের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ছাড়াও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সঙ্ঘাত ও বিভক্তি রয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে জ্বালানি সঙ্কট। এই সঙ্কট সমাধানের জন্য বিপুল প্রয়াস প্রয়োজন। আর এর সমাধান হতে পারে সিপিইসি ও চীন। তবে উভয় দেশের জন্য সিপিইসিকে লাভজনক করার কাজটি হবে কঠিন।

সামনে এগিয়ে যাওয়া
চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় পাকিস্তান। তবে চীনকে সমান অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নইলে বিনিয়োগ আসার ফলে যে চাপ কেটেছে, তা আরো বহুগুণে ফিরে আসবে। সিপিইসির ফলে বিদেশী সরকারের কাছে পাকিস্তানি ভূখণ্ড তুলে দেয়ার নামান্তর হবে কিনা তা নিয়ে ভাবা উচিত।ইতোমধ্যেই সিপিইসির প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ ওঠতে শুরু করেছ। ডন পত্রিকায় অভিযোগ করা হয়েছে, পাকিস্তানি ঠিকাদার ও কোম্পানিগুলোকে কাজের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সব সরঞ্জাম ও জনবল আনা হচ্ছে চীন থেকে, পাকিস্তানকে মূল কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, শ্রমিকও আসছে চীন থেকে।

সিপিইসিই কি সমাধান?
পাকিস্তান যেভাবে চাচ্ছে, সেভাবে হলে পাকিস্তানের জনগণ যে আশায় বুক বেঁধেছে, তা পূরণ হবে। ইতোমধ্যেই ১৭টি জ্বালানি প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছে, আরো চারটি বিবেচনাধীন রয়েছে। পাকিস্তানের জ্বালানি পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কয়লা, সৌর, পানি ও প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক হবে এসব প্রকল্প। আয় বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরকে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সাথে যুক্ত করতে চাচ্ছে বেইজিং। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে।
পাকিস্তানে জ্বালানি সঙ্কট প্রকট। দিনে সারা দেশে ৬-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়ে থাকে। এর ফলে কেবল ২০১৫ সালেই ক্ষতি হয়েছে ১৮ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান ছাড়া এগিয়ে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। সিপিইসি এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে।পাকিস্তানের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

চীনের আছে শক্তি
চীন প্রমাণ করেছে যে জ্বালানি সঙ্কট থেকে পাকিস্তানকে উদ্ধার করার মতো প্রযুক্তি তাদের কাছে আছে। চীন তার দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পেরেছে। তাদের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ আসে কয়লা থেকে। পাকিস্তান এই অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারে। তবে ক্লিন এনার্জি চাইলে চীন হয়তো পাকিস্তানের জন্য আদর্শ হতে পারে না।
সিপিইসি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে পুরো অঞ্চল চিরদিনের জন্য বদলে যেতে পারে। প্রমাণিত সত্য যে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে একসাথে কাজ করাটা লাভজনক এবং তা একই কাজ করতে অন্যান্য দেশকেও উৎসাহিত করতে পারে। এখন আমাদেরকে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ভেলুওয়াক.কম/সাউথ এশিয়ান মনিটর

 


আরো সংবাদ



premium cement