২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ১২ সেকেন্ডেই বিধ্বস্ত ভারতীয় হেলিকপ্টারটি

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ১২ সেকেন্ডেই বিধ্বস্ত ভারতীয় হেলিকপ্টারটি - ছবি : সংগ্রহ

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এমআই-১৭ চপারটি আকস্মিক শ্যুট ডাউনে ভেঙে পড়ার ঘটনার তদন্ত আর ২০ দিনের মধ্যেই শেষ হবে বলে জান‌িয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। তাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, যাবতীয় প্রমাণ প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হবে ও চপারে থাকা ৬ জন আইএএফ কর্মী ও একজন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের নিন্দনীয় নরহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে। কিন্তু এয়ার ফোর্স অ্যাক্ট ১৯৫০ ধারায় হত্যার অভিযোগ সম্ভবত আনা হবে না। ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগর বিমান ঘাঁটি থেকে ইসরায়েল-নির্মিত ওই স্পাইডার সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের নিক্ষেপ নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু তদন্ত শেষ করতে সময় লাগার পিছনে অন্যতম কারণ হলো এই বিষয়ে ওঠা সমস্ত অভিযোগকে নস্যাৎ করতে চায়।

আইএএফ সূত্র এনডিটিভিকে জানায়, পুরো শ্যুট ডাউনের ঘটনাটি ঘটেছে মোটামুটি ১২ সেকেন্ডে। এমআই-১৭ হেলিকপ্টারটির পক্ষে আঁচ করাও সম্ভব ছিল না তারা আক্রমণের মুখে পড়তে চলেছে। এনডিটিভি-এও জানতে পেরেছে, ওই ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের সিদ্ধান্তের ফলেই পরবর্তী কয়েকটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১০.৩০টার মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আটটি বিমান জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়া প্রায় ২৪টি পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ছিল এপ-১৬-ও, তাকে আটকাতে আক্রমণ চালায়।

ওই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী কাশ্মীরে সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল। এই সময়ই শ্রীনগর বিমানবন্দরে একটি নীচ দিয়ে আসা উড়ন্ত আকাশযানকে দেখতে পায়। সেই সময় যে সিনিয়র আধিকারিক টিডবলিউডি-র ভূমিকায় ছিলেন, তিনিই মুখ্য অপারেশন অফিসার হিসেবে ফাইনাল অর্ডারটি সম্ভবত দিয়েছিলেন। সেটি শত্রুপক্ষের কিনা, আইএফএফ ব্যবস্থা সাহায্যে সেটা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এই আইএফএফ ব্যবস্থা হল আকাশে উড়ে আসা কোনো বিমান বা হেলিকপ্টারকে সংকেত পাঠালে ওই বিমান বা হেলিকপ্টারটিও তার উত্তরে একটি সংকেত পাঠায়। যার দ্বারা জানা যায়, ওটি শত্রুপক্ষের বিমান নয়। এক্ষেত্রে কেন ওই হেলিকপ্টারটি সংকেত ফেরত পাঠায়নি অথবা তাদের সংকেত পাঠানোর যন্ত্রটি খারাপ হয়ে গিয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে শ্রীনগর বিমানঘাঁটির ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাধারণত সমস্ত যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য আকাশযানের ওঠানামার সমস্ত খবরই থাকে বিমানঘাঁটির কাছে। এটা স্পষ্ট নয়, ওই বিমানঘাঁটিতে অবস্থিত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল কী দায়িত্বপ্রাপ্ত টিডবলিউডিকে জানিয়েছিল যে ওই এলাকায় শত্রুপক্ষের আকাশযান ছাড়াও অন্য কোনো বিমান বা হেলিকপ্টার আছে কি না। পাশাপাশি এটাও অস্পষ্ট যে, প্রথম স্থানে থাকা আধিকারিকের কাছে কেন এমআই-১৭ হেলিকপ্টারটির গতিপথ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য ছিল না কেন।

কয়েক মুহূর্ত পরেই স্পাইডার সারফেস-টু- এয়ার মিসাইলটি নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি কাছের ও মাঝারি দূরত্বের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ও ভারতীয় বিমান বাহিনীর অস্ত্রাগারের নতুনতম ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। যে একক ক্ষেপনাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয় তার গতি ছিল ম্যাক ৪, যা শব্দের গতিবেগের চার গুণ বেগে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। যার আঘাতে ধীরগতির হেলিকপ্টারের ধ্বংসপ্রাপ্তি প্রায় অনিবার্য।

এমআই-১৭-র উপরে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের ভিডিও থাকার বিষয়টি সিনিয়র আইএএফ কর্মকর্তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন। যদিও সূত্র অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্রের হেলিকপ্টারটিকে আঘাত করার ভিডিও রয়েছে। সাক্ষ্যপ্রমাণের ক্ষেত্রে ওই ভিডিওটিও একটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। কিন্তু সিনিয়র আইএএফ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘‘হেলিকপ্টারটা ৬-৭ কিলোমিটার দূরে ছিল। ওখানে কোনো ক্যামেরা ছিল না যা দিয়ে জুম করে আঘাত হানার দৃশ্যটি তোলা যেতে পারে।''


আরো সংবাদ



premium cement