২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভোটের মধ্যে সশস্ত্র মিছিলের ঘোষণা বিজেপির

ভোটের মধ্যে সশস্ত্র মিছিলের ঘোষণা বিজেপির - সংগৃহীত

লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তাদের জোট শরিক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ পশ্চিমবঙ্গে অস্ত্র হাতে ‘রামনবমী’ পালন করার ডাক দিয়েছে। কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলায় শনিবার থেকেই সশস্ত্র এই মিছিল হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।

কলকাতার দৈনিক আনন্দাবাজারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চেয়েছে রাজ্য প্রশাসন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন রামনবমীর মিছিলে প্রশাসন বাধা দিতে গেলে পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে।

নির্বাচনকালীন ধর্মীয় অনুষঙ্গ ব্যবহার করাই যখন নিষিদ্ধ তখন এমন কর্মসূচি কীভাবে হতে পারে সেই প্রশ্ন আগেই তুলেছে সিপিএম। তৃণমূল কংগ্রেসসহ অন্য দলগুলোও একই প্রশ্ন তুলছে। তবে বিজেপির অস্ত্র মিছিলের বিরোধিতা করলেও বেশ কিছু স্থানে রামনবমীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুক্রবার বলেছেন, অস্ত্র নিয়েই রামনবমীর মিছিল করার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধ মানবেন না তারা।

তিনি আরো বলেন,‘রামনবমীতে অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা ঐতিহ্য। যার যেটা ঐতিহ্য সে সেভাবে করবে। ভোট এসেছে বলে বা কোনও সরকারের জন্য আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরা ছেড়ে দেব এটা হতে পারে না।’

এদিকে ভোটের সময়ে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর দায়ে বিরোধীরা যে কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে তা নিয়েও পাল্টা কটাক্ষ করেছেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কেন বিজেপিকে আটকাতে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে বিরোধীরা। তারা কমিশনে গেলেও আমার ধার্মিক অধিকার আমি পালন করব।’

বিজেপির এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকেও। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে রামনবমীর জন্য অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী পাঠাতে সম্মত হয়েছে তারা।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলই ধর্মীয় উৎসবকে রাজনৈতিক মেরুকরণের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আমরা রাজ্যের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আহ্বান করছি, সতর্ক থাকুন। ঐক্যবদ্ধ থাকুন। কোনও সুযোগ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দেবেন না।’

আরো পড়ুন : ‘কাশ্মির ভারতের সাথে থাকবে কী না, ঠিক হবে এবারই’

এদিকে ভারতের ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর নয়, ভাগ্য নির্ধারণ হবে জম্মু-কাশ্মিরেরও। গতকাল শনিবার এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। ওই জনসভায় তিনি আরো বলেন, লোকসভা নির্বাচনের পরেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, কাশ্মির আদৌ ভারতের অংশ থাকবে কী না।

তিনি বলেন, নিজেদের সম্মান নিয়ে চিন্তিত কাশ্মিরের মানুষ। তারা চাইছেন সম্মান নিয়ে বাঁচতে। তাই এই লোকসভা নির্বাচনে কাশ্মিরের সম্মান রক্ষা করা হবে কী না, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

শনিবার শ্রীনগরের একাধিক জায়গায় নির্বাচনী সভায় অংশ নেন ফারুক আবদুল্লাহ। বাবাদেম্ব, খান্নারের মতো এলাকায় এসব নির্বাচনী সভা করেন তিনি। প্রায় সব জায়গাতেই তিনি কাশ্মিরের সম্মান রক্ষার আওয়াজ তোলেন। তার মতে, প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কীরকম সম্পর্ক থাকবে, তা নির্ভর করবে কেন্দ্র সরকারের বিদেশ নীতি ও অবস্থানের ওপর। আর তার ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে কাশ্মিরের সম্মান ও শান্তি।

খান্নারের সভায় ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, ভারতে এখন সত্য ও মিথ্যার লড়াই চলছে। এ নির্বাচনেও তার প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। দেশের একতা ধরে রাখার লড়াই চলবে এই নির্বাচনে। ফলে কেন্দ্রে কোন সরকার বসবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি মানুষ ধর্ম বা জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট দেন, তবে তা মারাত্মক ফল নিয়ে আনবে দেশের জন্য। ফলে মানুষকে খুব বিচক্ষণতার সাথে ভোট দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ জনসভাগুলোতে তিনি বালাকোট অভিযানের নামে ভারতের জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মোদি সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আসলে মোদি সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারিতে বালাকোটে যে হামলা চালানোর দাবি করছে তা পুরোপুরি মিথ্যা একটি জিনিস। এর দ্বারা ভারতের জনগণকে বোকা বানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের বিমানবাহিনী বালাকোটে অভিযান চালিয়ে কেবল কয়েকটি গাছের ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে।

ভারতের কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ জওয়ান নিহতের ঘটনায় এ হামলা চালানোর দাবি করে মোদি সরকার। তবে ওই অভিযানে পাকিস্তানের কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে সরকারিভাবে ওই অভিযানের সাফল্যের ব্যাপারে বিশেষ কিছু প্রকাশ করা হয়নি।

এ সময় কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার আইন বাতিলের ঘোষণা দেয়া বিজেপির কড়া সমলোচনা করেন। তিনি বলেন, অমিত শাহ বলেছেন, তিনি ৩৭০ ও ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দিবেন। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, যদি অমিত শাহের সাহস থাকে, তাহলে তিনি কাশ্মিরে এসে এখানকার জনগণের মুখোমুখি হোন।

এক জনসভায় তিনি মোদিকে হিটলার বলে অভিহিত করে বলেন, হিটলারের মতোই মোদি সংবাদমাধ্যমগুলোতে সত্য খবর প্রকাশে বাধা দিচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement