১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে জানে পাকিস্তান : ভারতীয় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী

ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং - সংগৃহীত

ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, হামলা বা আক্রমণের শিকার হলে পাল্টা হামলায় দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে জানে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতি ভারতের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী মনোভাবের কারণে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলার পর হামলা-পাল্টা হামলাসহ সৃষ্ট উত্তেজনার বিষয়ে সোমবার তিনি এসব কথা বলেন।

ভারতীয় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং আরো বলেন, (ভারতের) যেকোনো ধরনের হামলা বা আক্রমণ ব্যর্থ করে দিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোনো দ্বিধা করবে না পাকিস্তান।

তিনি বলেন,‘ভারত ও পাকিস্তান-উভয় দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তাই ব্যপকভাবে ধ্বংসাত্মক এই অস্ত্র ব্যবহার করার মধ্যে কোনো দেশেরই স্বার্থ থাকতে পারে না। এটা ঠিক যে, পাকিস্তান বরাবরই বলে এসেছে যে, তারা একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র এবং তাদের পরমাণু অস্ত্র নিরাপদ আছে।’

উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করার পর পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর হামলায় দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিধ্বস্ত ভারতীয় যুদ্ধবিমানের দুইজন পাইলট নিহত হয় এবং উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান নামে এক পাইলটকে জীবিত আটক করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পরে ভারতকে শান্তির বার্তা হিসেবে গত শুক্রবার আটককৃত ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান সরকার। বিশ্বনেতারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর তথ্য অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ও শক্তির দিক দিয়ে পাকিস্তান ভারতের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে রয়েছে।

 

আরো পড়ুন : নিজেদের তৈরি জেএফ-১৭ দিয়েই ভারতের মিগ-২১ ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান
নয়া দিগন্ত অনলাইন, (০৪ মার্চ ২০১৯)

গত বুধবার পাকিস্তানে হামলাকারী ভারতের দুটি মিগ ২১ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছিল পাকিস্তান। এ দুটি বিমানের একজন পাইলটকেও তারা আটক করেছিল। সিএনএনের একটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ভারতের মিগ ভূপাতিত করতে পাকিস্তান চীনের নকশায় নিজেদের তৈরি জেএফ-১৭ ব্যবহার করেছিল।

ভারত দাবি করেছিল, তারা একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে, যেটি আজাদ কাশ্মিরে বিধ্বস্ত হয়। ইসলামাবাদ ভারতের এই দাবি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, তারা এ অভিযানে কোনো বিমান হারায়নি। অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতের দুটি মিগ-২১ বিমান বিধ্বস্ত করেছে। তাদের দাবির সমর্থনে ভারতের বিধ্বস্ত মিগ-২১ বিমানের ছবিও প্রকাশ করে।


সিএনএনের রিপোর্টে আরো বলা হয়, সামরিক শিল্পে ভারতের বেশ ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে চীনের সহায়তায় পাকিস্তান নিজেরাই জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান তৈরি করছে।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে জানতে চায়, তারা ভারতে অভিযান চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কোনো বিমান ব্যবহার করেছে কি না? এটি হলে তা হবে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে এফ-১৬ বিমান বিক্রির চুক্তির লঙ্ঘন।

মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান, আমরা এ রিপোর্টের ব্যাপারে খুবই সতর্ক এবং এ ব্যাপারে আরো তথ্যের অপেক্ষায় আছি। তিনি আরো বলেন, আমরা এ ধরনের ক্ষেত্রে চুক্তির ধারাগুলোর লঙ্ঘনের ব্যাপারে সব ধরনের অভিযোগ খুবই গুরুতরভাবে বিবেচনা করি।


এ অবস্থায় এশিয়া-প্যাসিফিক কলেজ অব ডিপ্লোমেসি উইথ এক্সপার্টিস অন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান-এর একজন অতিথি গবেষক নিশাঙ্ক মতওয়ানি সিএনএনকে বলেন, এ উপমহাদেশের সামরিক অবকাঠামো নির্মাণে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মতওয়ানি আরো বলেন, এ পর্যন্ত মিগ-২১-এ যত দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং যত পাইলট মারা গেছে, তার জন্য মিগ-২১ কে ভারতীয় পাইলটরা ‘উড়ন্ত কফিন’ বলে আখ্যা দেন।

অন্যদিকে হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অভিযানে জেএফ-১৭ ব্যবহার করেছিল ইসলামাবাদ।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তা যখন টুইটে বলেন, জেএফ-১৭ ভারতের দুটি মিগ ২১ বিমান ভূপাতিত করেছে, তখনই শেনজেন স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত চেঙফেই ইন্টেগ্রেশন টেকনোলজির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। এ প্রতিষ্ঠানটি জে-এফ ১৭ নির্মাতা সংস্থা চেংডু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

 

দুটি মিগ-২১ হারিয়ে ভারতের ক্ষতি ৪২০ কোটি টাকা

হামলা চালাতে গিয়ে পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে পড়ে দুটি মিগ-২১ বিমান হারিয়েছে ভারত। ওয়েবসাইটে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে জানা যাচ্ছে, ভারতের মোটামুটি ৩৫০ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে শুধু এ দুটি বিমান হারানোর মধ্য দিয়েই। বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিমাণটি দাঁড়ায় ৪২০ কোটি টাকার কিছু বেশি।

কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারি এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছে সিআরপিএফ বাহিনীর ৪৪ সদস্য। ভারত সে ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে শান্তির প্রস্তাব দেয়। তবে এ সতর্কতাও জানায়, ভারতের পক্ষ থেকে হামলা হলে তারাও এ সমুচিত জবাব দেবে।

পুলওয়ামার ঘটনার ১২ দিন পর গত মঙ্গলবার ভারত এলওসি অতিক্রম করে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে গিয়ে হামলা চালায়। ভারত দাবি করে তাদের এ অভিযানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কয়েকটি ঘাঁটি বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছে। এতে ৩০০-৩৫০ লোক নিহত হয়েছে। পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ করলেও তাদের এ ধরনের হামলা বা হতাহতের কথা অস্বীকার করে। কিন্তু তারা এ-ও জানায়, আত্মরক্ষার অধিকার তাদের আছে। সুতরাং সময় হলেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ভারতের এ অভিযানের পরের দিন পাকিস্তান ভারতের ভূখ-ে গিয়ে একটি সেনা ছাউনির কাছে গিয়ে বোমা বর্ষণ করে আসে। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান আবার পাকিস্তানে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তান এবার ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি জানিয়ে বলে, তারা এ ঘটনায় একজন পাইলটকেও আটক করেছে। ভারত প্রথমে পাকিস্তানের এ দাবি অস্বীকার করলেও ওই পাইলটের ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর ইসলামাবাদের এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় নয়াদিল্লি।

১৯৭১ সালের পর এটাই দুই দেশের বিমানবাহিনীর মধ্যে পাল্টা-পাল্টা হামলার প্রথম ঘটনা।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের যে দুটি বিমান ভূপাতিত করেছে বলে জানায়, সেগুলো ছিল মিগ-২১ মডেলের বিমান। পশ্চিমা বিশ্ব এগুলোর নাম দিয়েছে ‘ফিশবেড’। ১৯৫০ সালে প্রথম এর নকশা করে মিকোয়ান। রাশিয়া ও চীনের পর ভারতই সবচেয়ে বেশি এ মডেলের বিমান ব্যবহার করে থাকে।

১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারত সীমিত পর্যায়ে পাকিস্তানে তাদের তাদের মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের পরীক্ষা চালায়।

১৯৬১ সালে ভারতের বিমানবাহিনী (আইএএফ) মিগ-২১ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯৬৪ সালে এটি আইএএফে প্রথম সুপারসনিক যুদ্ধবিমান হিসেবে যুক্ত হয়। আর২৫-৩০০ টার্বোজেটের ইঞ্জিনে এ বিমানগুলোর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় এক হাজার ৩৫০ মাইল। আইএএফে বর্তমানে ১২০টি এ মডেলের বিমান রয়েছে।

কিছুটা আগের আমলের নকশায় নির্মিত হলেও মিগ-২১ হামলার ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। টার্গেটে হামলা করে কারো হাতেই ধরা না পরে ফিরে আসার মতো গতি ও যোগ্যতা রয়েছে এ বিমানটিতে। অনেক সুবিধা থাকার পরও ভারতের এ যুদ্ধবিমানগুলোকে এক সময় ‘উড়ন্ত কফিন’ নামেও আখ্যা দেয়া হতো। এ বিমানে পাঁচ শতাধিক দুর্ঘটনা এবং ২০০ পাইলট নিহত হওয়ার পর এ নাম দেয়া হয়েছিল।

১৯৫০ সালে এটি নির্মাণের সময় এর দাম পড়ত ২৯ লাখ ডলার। বর্তমানে এর দাম পড়ে আড়াই কোটি ডলারের সামান্য বেশি। ফলে পাকিস্তানের ভূপাতিত দুটি মিগ-২১ হারিয়ে পাঁচ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৫৬ কোটি রুপি) ক্ষতির মুখে পড়ে গেছে ভারত।


আরো সংবাদ



premium cement